আমার স্ত্রীকে আমি ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম।

কিন্তু যখন পরিপাটি প্রেমিকাটা অগোছালো স্ত্রী হয়ে গেলো।

তখন কেন জানি আমার আর ওকে ভালো লাগত না।

মেয়েটা অল্পতেই খুশি হয়ে যেত।

আমার মনে আছে যখন ওর সাথে আমার বিয়ে হয়।

তখন আমার মাস শেষে বেতন ছিলো পনেরো হাজার।

এই টাকায় ও কতটা হ্যাপি ছিলো তা আমি কাউকেই বলে বোঝাতে পারবো না।

আমি থেকে শুরু করে আমার পরিবারের প্রতিটা মানুষের খেয়াল ও রাখতো।

আর দিন শেষে চাইতো একটু ভালোবাসা। 

যেটা আমি সময়ের সাথে সাথে দেওয়া কমিয়ে দিলাম।

আসতে আসতে আমার পজিশন ভালো হতে লাগলো। প্রমোশন পেলাম

আমার চিন্তাধারাও হলো উন্নত। 

কিন্তু সংসারের চাপে পরেও ও ঠিক আগের মতোই রয়ে গেলো।আমার পনেরো হাজার বেতন পইতিরিশ হাজারে গিয়ে ঠেকলো।

ঘর পরিবর্তন হলো তার সাথে আমিও পরিবর্তন হলাম।

শুধু পরিবর্তন হলো না কবিতা।

ও হ্যাঁ, আমার স্ত্রী কবিতা নিজেকে পরিবর্তন করলো না।

টাকার নেশা আমাকে গ্রাস করে নিলো ধীরে ধীরে। 

ভুলে গেলাম আমি আমার সাজানো প্রিয় অতীতকে।সুখ পেয়ে ভুলে গেলাম দুঃখের দিনে পাশে থাকা মানুষ গুলোকে।

সারাদিন খাটাখাটনি করে খাবার টেবিলে যখন কবিতা কাতর নয়নে অপেক্ষা করতো।

আমি বলতাম যতো সব আদিখ্যেতা।

বৃষ্টি হলেই আমার হাত দু'টো ধরে যখন বলতো।

চলোনা একটু দু'জনে বৃষ্টি বিলাস করি।আমি তখন বলতাম বয়স তো কম হলো না এখন এসব পাগলামি ছাড়ো।

মাঝ রাতে ও যখন পিরিয়ডের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠতো।

আমি নাক সিটকে পাশের রুমে ঘুমাতে চলে যেতাম। 

দিনের পর দিন ওর ভালোবাসা বেড়ে ছিলো আমার প্রতি।

আর আমার অবহেলা ওর প্রতি।

একটা সময়ের পর আমার পরিবারও ওকে অবহেলা করতে শুরু করলো।

যার হাতের রান্না সবাই তৃপ্তি নিয়ে খেত।

এখন নাকি তার রান্না ভালো হয় না, কাজে কোনো মনোযোগ আর নেই।

যে ঔষধ না দিলে আমার বাবা-র ঔষধ খাওয়ার কথা মনে থাকত না।

আজকাল নাকি সে ভুল ঔষধ দিয়ে আমার বাবাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে। দিনের পর দিন এইটা অব্যাহত হয়ে গ্যালো

একটা সময় আমাদের বাড়িতে থাকার মতো কোন সম্বল খুঁজে পেলো না কবিতা।সমস্ত সহ্যের বাঁধ ভেঙে গ্যালো...

তাই সরাসরি একদিন বলেই ফেললাম আমি তোমায় ডির্ভোস দিতে চাই। 

সে সেদিন খুব অবাক হয়ে কাতর নয়নে চেয়েছিলো আমার দিকে।

কিন্তু কোন প্রতিবাদ করল না।

হয়তো সে বুঝতে পেরেছিলো তার এই বাড়ির প্রয়োজন ফুরিয়েছে।

তারপর সেই অনাকাঙ্ক্ষিত দিন এলো যখন কবিতা আর আমার ডির্ভোস হয়ে যাবে।

সেদিনও সবটা ও কি সুন্দর ভাবে মেনে নিয়েছিলো।

কোন প্রতিবাদ করেনি।

এমন কি খোরপোষের টাকা টাও দাবি করলো না।

উকিল যখন জিজ্ঞেস করলো সে কেন টাকাটা নিতে অস্বীকার করছে।

তখন ও বললো।

যে মানুষটাই এতো বছর পরও আমার হলোনা তাঁর টাকা দিয়ে আমি কি করবো।

কবিতার বাবা সেদিন আমায় একটা কথা বলেছিলেন। 

ভগবান দিয়ে ধন দেখে মন,কাইরা নিতে কতক্ষণ। 

কথাটার মানে সেদিন না বুঝলেও আজ ঠিক বুঝতে পারছি।

তিন মাসের মাথায় মিথ্যা অপবাদে আমার চাকরি চলে গ্যালো।

বড় বোন টাকে মাঝে মাঝেই তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা মেরে ধরে আমাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

বাবা ভুল ঔষধের রিয়াকশনে আজ বিছানার সাথে মিশে আছে।

মা প্রায় আজকাল তরকারিতে নুন,হলুদ দিতে ভুলে যায়।

আর আমি উন্নতমানের চাকরি থেকে ফুটপাতে ছোট্ট একটা ফুলের দোকান নিয়ে বসে আছি।

আজ ওই কথাটার মানে বুঝলাম।

দিয়ে ধন দেখে মন, কাইরা নিতে কতক্ষণ। 

লুকিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম কবিতার।

শুনেছি অন্য জায়গায় তার বাবা আবার বিয়ে দিয়েছে।

স্বামী একজন ডাক্তার। 

খুব সুখে আছে।

খুব ভালো ভাগ্য সেই মানুষটার, যার সাথে কবিতার বিয়ে হয়েছে। 

গেলো মাসে নাকি তাদের একটা মেয়েও হয়েছে। 

সে সুখের আশা করেনি তাই তার এতো সুখ।

আর আমি সুখের আশা করে মানুষকে অমানুষ ভেবেছি,কতো অবহ্যালা করেছি। 

তাই আজ আমার এই পরিস্থিতি।

তাইতো বলে,শেষ হাসিটা তারাই হাঁসে।

যারা নিজেকে নয় অন্যকে ভালোবাসে।

লেখক:শিক্ষার্থী, প্রণব মন্ডল, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024