রুটি-রুজি করতে চায়ের দোকানই মোস্তাকিনের একমাত্র ভরসা।পরিবরের সামান্য আয়ের ঠিকানা। প্রতিদিন এই চা দোকান থেকে যে কয় টাকা আয় হয় তা দিয়েই চলে মোস্তাকিনের ৫ জনের অভাবের  সংসার।


মো.মোস্তাকিন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের বীর কামটখালী গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে।তিন ভাইয়ের মধ্যে সে মেঝো।বড় ভাই রাসেল ঢাকায় ডিসের ব্যবসা করে।ছোট ভাই নবী হোসেন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।স্থানীয় বীর কামটখালী দক্ষিণ বাজার চৌরাস্তায় তার চায়ের দোকান।


মোস্তাকিনের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে ভালো চাকুরী করবে।মিটাবে সংসারের অভাব।হাঁসি ফুটবে পরিবারের সবার মুখে।সেই লক্ষ নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণীতে উঠার পর থেমে যায় তার লেখাপড়া। অভাবের তাড়নায় আর পড়া হয়নি।অভাবের সংসারে হাল ধরতে বাবার কাজে সহযোগী হিসাবে চায়ের দোকানে তিন বছর আগে কাজ শুরু করে সে।


এখন প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত বাজারে দোকানে চা বিক্রি করেন মো. মোস্তাকিন(১৩)।৩ বছর ধরে চা বিক্রি করছে সে।এই ছোট্র ব্যবসা থেকে উপার্জিত আয়েই অতি কষ্টে চলে বাবা,মা ও তিন ভাই নিয়ে ৫ জনের অভাবের  সংসার। আর এই চায়ের কাপেই  মোস্তাকিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে।চায়ের কাপে বেঁচে থাকার লড়াই করছে।


সরেজমিন (১ মে সোমবার) দুপরে বীর কামটখালী দক্ষিণ বাজরে গিয়ে দেখা যায় মোস্তাকিনের চায়ের দোকানে প্রচুর ভীড়। কেটলি থেকে কাপে চা ঢালছেন।  চা তৈরিতে ব্যস্ত মোস্তাকিন।চায়ের কাপে চামিচের ঝনঝন শব্দে মুখরিত চায়ের দোকান।হাঁসিমুখে সবাইকে চা দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক। কেউ চা পান করছেন, কেউ আবার চায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।বেঁচে থাকার তাগিদে প্রতিদিন এভাবেই সংগ্রাম করে যাচ্ছে মোস্তাকিন।


চা বিক্রেতা মোস্তাকিন জানায়,আমাদের অভাবের সংসার। খেয়ে না খেয়ে দিন যায়।তাই সংসারের হাল ধরতে বাবাকে সাহায্য করতেই আমি খুব অল্প বয়স থেকে চা বিক্রির কাজ করছি। চায়ের দোকান থেকে যা আয় হয় তাই দিয়েই আমাদের সংসার চলে।


মোস্তাকিন আরো জানায়,প্রতিদিন আমি এবং আমার বাবা দুজনে মিলে চায়ের দোকান চালাই।চা বিক্রি করে দিন শেষে তার ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ থাকে। তা দিয়েই তারা নিজের অভাবের সাথে যুদ্ধ করেন। বর্তমানে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি তার চায়ের দাম। তাই দিন শেষে ৪০০-৫০০ টাকায় তার কিছুই হয় না। যেন নুন আনতে পানতা ফুরায়।খরচ বাদে অল্প যা আয় থাকে তা দিয়েই অতিকষ্টে সংসার চলে।


এ বিষয়ে মোস্তাকিনের পিতা আব্দুস সাত্তার বলেন,আমি গরীব মানুষ। ৫ জনের অভাবের সংসার।সংসারের হাল ধরতে তিনবছর হয় চা বিক্রির ব্যবসা শুরু করেছি। আমার ছেলে মোস্তাকিন চা বিক্রিতে আমারে সাহায্য করে এখান থেকে যা সামান্য আয় হয় তা দিয়েই কোনমতে চলে আমার সংসার।


স্থানীয় ইউপি সদস্য ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, মোস্তাকিনের পরিবার খুব গরীব। ৫ জনের অভাবের সংসার চলে এই চা বিক্রির আয় দিয়েই।বাবা-ছেলে দুইজনে মিলে চা বিক্রি করেন। আর সকাল -বিকাল বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন চা ও পান খেতে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024