স্মৃতি  বিজড়িত বুদ্ধ পূর্ণিমা 
    মিতা পোদ্দার

বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধদের একটি পুণ্যময় তিথি; তাৎপর্যমণ্ডিত দিন। এই দিনে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব গৌতম বুদ্ধ বিশাখা নক্ষত্রে বৈশাখের পুণ্যালোকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সিদ্ধার্থ গৌতমের পিতা ছিলেন শাক্যবংশের রাজা শুদ্ধোধন। মাতা ছিলেন রাণী মহামায়া। হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের শাক্যদের রাজধানী ছিল কপিলাবস্তু।  সিদ্ধার্থ গৌতমের মাতৃদেবী রাণী মহামায়া পিত্রালয়ে যাওয়ার পথে কপিলাবস্তু হতে কয়েক মাইল দূরে লুম্বিনী কাননে বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে রাজকুমার সিদ্ধার্থ জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
সিদ্ধার্থ গৌতম রাজকীয় ঐশ্বর্যের মধ্যে লালিত পালিত হলেও বাল্যকাল থেকে তিনি জগত-সংসার সম্পর্কে চিন্তা করতেন। রাজা শুদ্ধোধন তাঁর বৈরাগ্যভাব দেখে সংসারের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য যশোধরা নাম্নী এক অনুপম সুন্দরীর সঙ্গে উনিশ বছর বয়সে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করান। সংসারের দুঃখ-কষ্ট যাতে সিদ্ধার্থের দৃষ্টিগোচর না হয় তার সব ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু জীবনে যে দুঃখ সত্য তা সংসারে আবদ্ধ হয়ে সিদ্ধার্থ উপলব্ধি করলেন। মানুষের জীবনে জরা, ব্যাধি, মরণ কেন হয় তা সিদ্ধার্থ গৌতমকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলল। পুত্র রাহুলের জন্মের পরই সিদ্ধার্থ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে রাজসিংহাসন, ভোগঐশ্বর্য সমস্ত কিছু ত্যাগ করে সংসার বন্ধন ছিন্ন করে সত্যের অন্বেষণে বেরিয়ে পড়লেন। রাজকীয় ঐশ্বর্য, সুন্দরী স্ত্রী, পুত্র রাহুল কোন বন্ধনই তাকে আবদ্ধ করে রাখতে পারেনি।কথিত আছে,  রাজা শুদ্ধোধন তাকে সন্ন্যাস গ্রহণে বিমুখ করার চেষ্টা করলে তিনি বলেছিলেন-‘যদি আপনি এই আশ্বাস দিতে পারেন যে, কখনও আমার মৃত্যু হবে না, ব্যাধি আমায় পীড়িত করবে না, জরা আমার যৌবনকে আকর্ষণ করবে না বা কোন বিপদই আমার সম্পত্তি হরণ করবে না, তা হলেই আমি সন্ন্যাস গ্রহণের সঙ্কল্প ত্যাগ করতে পারি।’বুদ্ধত্ব লাভ করে তিনি আনন্দোচ্ছাসে যে উদানগাথা ভাষণ করলেন তাতে বুদ্ধের নির্বাণ দর্শনের সারতত্ত্ব উপলব্ধি করা যায়- হে গৃহকারক, তোমার সন্ধানে কত জন্ম-জন্মান্তরই না এই দুঃখময় সংসার আবর্তে ঘুরে বেড়িয়েছি-তোমায় খুঁজে পাইনি এতদিন। আজ তোমায় চিনেছি, আর তুমি গৃহ- নির্মাণ করতে পারবে না। এই গৃহের সকল কাষ্ঠদ- (ফাসুকা, পার্শ্বকা) ভগ্ন হয়েছে। গৃহচূড়া ধ্বংস হয়েছে। সংসারসমূহের বিনাসে আমি নির্বাণপ্রাপ্ত হয়েছি। আমার সকল তৃষ্ণার ক্ষয় হয়েছে’ ।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024