◾ সুখবর ও ইতিবাচক ডেস্ক : আমি নাঈমুর রহমান। নওগাঁ জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। অভাব অনটনের মাঝে বেড়ে গ্রামবাংলায় কেঁটেছে ছোটবেলা। পরিবারে কোনো শিক্ষিত মানুষ নেই, তাই মা-বাবা খুব করে চাইতো আমি যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হই।  


বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তি হই। 'পাছে লোকে কিছু বলে' এ কথার মর্মার্থ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী ছিল। নানান কটূক্তি শুনতে হয়েছিল বরাবরই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিলো। ছোটবেলায় যেখানে বেড়ে ওঠা, সে অঞ্চল পেরিয়ে নতুন জায়গা, নতুন মানুষের মাঝে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প ভীড় করতে লাগলো। সব বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে বন্ধু-বান্ধব, ছোট ভাই, বড় ভাই এর ভালোবাসায় বেশ ভালোই সময় কাঁটছে।  


নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে ছোট থেকেই দেখতাম পরিবারে অভাব অনটন, টানাপোড়া লেগেই থাকতো। তাই সব সময় কিছু করার তাগিদ অনুভব করতাম। করোনার সময়ের কথা। হঠাৎ এক বন্ধু ঢাকা থেকে ফোন করে জানতে চাইলো, 'আমাদের এলাকায় ভালো আম পাওয়া যায় কি না? 'আমি বললাম 'হ্যাঁ' পাওয়া যায়। কুরিয়ার করে পাঠিয়েও দিলাম। তখনই মাথায় এলো আমার বন্ধুর মতো অনেকেই হয়তো এমন ফরমালিন মুক্ত আম খুঁজছে, আমার এলাকায় তো আমের প্রচুর ফলন আমি চাইলেই এটাকে ব্যাবসায়ে রুপান্তর করতে পারি এভাবেই শুরু হয় আমার 'আমওয়ালা' ভাই হয়ে ওঠার গল্প।


পরিবারে কোনো শিক্ষিত মানুষ নেই, তাই মা-বাবা খুব করে চাইতো আমি যেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত হই। © ফাইল ছবি  


ছাত্র অবস্থায় পরিবারের হাল ধরতে পারছি। এতে করে বাবা- মায়ের কষ্ট লাঘব করতে পেরেছি এটার চাইতে সুখের আর কি হতে পারে। কিন্তু, অসুবিধা হল মানুষ জনের বিভিন্ন রকম ঠাট্টা-বিদ্রুপ কথাবার্তা। সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কেন আম ব্যবসা করবে?'


তবে আমি মনে করি, 'ছাত্র অবস্থায় যেকোনো কাজ শুরু করা উচিত।' এ সময়টাতে মানুষের রিস্ক নেওয়ার সক্ষমতা এবং দূরদর্শিতা চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। লেখাপড়া করে অর্জিত জ্ঞান এখানে প্রয়োগ করার সুযোগ রয়েছে, নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। উদ্যোক্তা হলেই যে মানুষ সফল হবে এমন কিছু না কিন্তু এটার মাধ্যমে অর্জিত শিক্ষা পরবর্তী জীবনে খুব কাজে দিবে বলে আমার মনে হয় এবং আমার বিশ্বাস এটা সাহস যোগাবে ভবিষ্যতে বড় কোন কিছু করার।


• দেশ/খায়রুজ্জামান খান সানি

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024