◾ নিউজ ডেস্ক


আড়াই বছর অকেজো পড়ে থাকার পর দেশি প্রকৌশলীদের হাতে প্রাণ পেয়েছে ডেমু ট্রেন। চীন থেকে কেনা এই ট্রেন মেয়াদের অর্ধেক সময় আগেই অকেজো হয় যায়। আবার মেরামতের জন্য চীনের সেই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় বিক্রয়মূল্যের কাছাকাছি খরচ দাবি করে। ফলে ট্রেনগুলো সচল করতে এগিয়ে আসেন দেশি প্রকৌশলীরা।


পূর্বাঞ্চল রেলের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) বোরহান উদ্দিন শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে চীন থেকে আনা এই ট্রেন ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিকল হতে শুরু করে। শিগগিরই ট্রেনগুলো আবার চালু হচ্ছে। আবার চট্টগ্রাম-কুমিল্লা রুটের যাত্রীরা বিশেষ উপকৃত হবেন।


২০১৩ সালে দেশের রাজধানী ঢাকা আর বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম শহর এলাকায় যাতায়াত সহজ করার জন্য হালকা এই লোকাল ট্রেন চালু করে রেল বিভাগ। কিন্তু মাত্র সাত বছরের মধ্যেই এসব ট্রেন বোঝা হয়ে দাঁড়ায় মেরামতের অভাবে।


প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘ট্রেনগুলো সচল করতে উৎপাদনকারী চীনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হয় রেলওয়ে। কিন্তু চীনের থাংশান রেলওয়ে ভেহিকেল কোম্পানি নামে এই প্রতিষ্ঠান ক্রয়মূল্যের কাছাকাছি অর্থ দাবি করে। ২০ সেট ট্রেন প্রায় ৬৪৫ কোটি টাকায় কেনা হয়। খরচের কথা বিবেচনা করে তাদের কাছে আর এগুলো মেরামত করা হয়নি। পরে রেলওয়ের দেশি প্রকৌশলীরাই ট্রেনগুলো সচল করতে সক্ষম হন।’


মেয়াদ শেষের আগেই ট্রেনগুলো অচল হওয়ায় রেল কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে কি না সে বিষয়ে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারেননি।


ট্রেনগুলো কিভাবে মেরামত করা হয়েছে সে বিষয়ে জানিয়েছেন রেলওয়ের পাহাড়তলি কারখানার প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, মডিউল পাল্টে ডেমু ট্রেনে বসানো হয়েছে ইনভার্টার। বাদ দেওয়া হয়েছে কোটি টাকার চীনা ব্যাটারি। লাগানো হয়েছে সুলভ মূল্যের স্থানীয় ব্যাটারি। বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন মালামাল দিয়ে অত্যন্ত সাশ্রয়ী মূল্যে ট্রেনগুলো মডিফাই করা হয়েছে। তাতে এগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণও করা যাবে।


এই ট্রন চালু হলে বিশেষ উপকৃত হবেন বলে অনেক যাত্রী প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন।


শরফুদ্দিন আজাদ (৪৬) নামে পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি বলেন, তিনি চিনকি আস্তানা স্টেশন থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রামে অফিসে যান।


‘আমি একটি সরকারি অফিসে চাকরি করি। বাড়িতে মা-বাবা পরিবার সবাই আছে। এই ট্রেনে নিরাপদে যাতায়াত করায় চাকরি ও পরিবারকে অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে রাখতে পেরেছি। ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিকে বাড়তি খরচ, অপরদিকে সময়ের অভাবে অনেকখানি বিপর্যস্ত এখন।’


রেল কর্মকর্তারা জানান, প্রতিদিন ভোরে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম শহরে যেত ডেমু ট্রেন। চিনকি আস্তানায় পৌঁছাত সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে, বড়তাকিয়া স্টেশনে পৌঁছাত ৭.২০ মিনিটে। সাড়ে ৮টা নাগাদ পৌঁছাত চট্টগ্রাম শহরে। আবার বিকাল সাড়ে ৪টায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে বড়তাকিয়া পৌঁছাত সন্ধ্যা ৬টায়। চিনকি আস্তানা পৌঁছাত ৭.১৫ মিনিটে। এতে মীরসরাই অঞ্চল থেকে চট্টগ্রামের অফিস পাড়ার লোকজন যাতায়াতে অনেক উপকৃত হতেন।


চিনকি আস্তানা স্টেশন মাস্টার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই স্টেশন থেকে একসময় অনেক মানুষ ডেমু ট্রেনে যাতায়াত করতেন। কিন্তু ট্রেনগুলো অচল হয়ে পড়ায় মীরসরাই-সীতাকুণ্ডের ব্যবসায়ী-চাকরিজীবীসহ নানা পেশার মানুষ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। রেলওয়ের নিজস্ব কারখানায় দেশের প্রকৌশলীদের সাফল্যে ট্রেনগুলো শিগগিরই ফিরছে বলে আশা করছি। এতে মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।’

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024