মু. নুরুল আমিন: মানুষের মাঝে সাম্য বা মৈত্রী থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোন অবস্থায় ধর্মীয় অনুভূতির মাধ্যমে মানবতাকে পরাজিত করা যাবে না। কবি ধর্ম-জাতি ও সম্প্রদায় ভেদাভেদ উপেক্ষা করেন। তিনি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। কবির ভাষায়- তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব সকল কালের জ্ঞান/ সকল শাস্ত্রে খুঁজে পাবে সখা, খুলে দেখ নিজ প্রাণ/ তোমাতে রয়েছে সকল ধর্ম, সকল যুগাবতার/ তোমার হৃদয় বিশ্ব দেউল সকলের দেবতার।


ধর্ম বিষয়ে অপব্যাখ্যা ভণ্ড ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধর্মের নামে মনগড়া নিয়ম নীতির বিরুদ্ধে কবির ক্ষোভ প্রকাশ পায় ‘মানুষ’ নামক কবিতায়। কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড়? ভেঙে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা দেওয়া দ্বার! খোদার ঘরে কে কপাট লাগায়, কে দেয় সেখানে তালা…/ হায়রে ভজনালয়/ তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ডগাহে স্বার্থের জয়। ‘মোহররম’ নামক কবিতায় ১০ মোহররমে প্রচলিত কুসংস্কার পরিহার করে এ দিনে কারবালা প্রান্তের হৃদয়বিদারক ঘটনার থেকে শিক্ষা নিয়ে ধর্মীয়ত্যাগে উদ্বুদ্ধ হতে যুবসমাজকে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ফিরে এলো আজ সেই মোহররম মাহিনা/ ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না। তিনি জীবনকে, সমাজকে আপন আয়নার দেখেছেন আর ছবির মতো করে তুলে এনেছেন তার একের পর এক কবিতায়। সমাজের সকল অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খলার বিরুদ্ধে নজরুলের সুদৃঢ় অবস্থানের প্রতিফলন নজরুল তাঁর কবিতায় প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশের সংকটময় মুহূর্তে নিজেকে মানুষের পথ নির্দেশক হিসেবে মাথা উচুঁ করে নেতৃত্ব দানে আহ্বান জানিয়ে সমাজের মানুষের মধ্যে স্বাধীন চেতনা জাগ্রত করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। তিনি ছিলেন সাম্যের কবি। সাম্যবাদী কবি। বাঙালির প্রাণের কবি।

লেখক- অধ্যক্ষ, প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023