◾ নিউজ ডেস্ক


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে দুই দেশের সরকারপ্রধান নিজেদের মধ্যে প্রথমে একান্তে কথা বলবেন। পরবর্তী সময়ে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ, সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (সেপা), বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা, জনযোগাযোগ, কুশিয়ারাসহ অভিন্ন কয়েকটি নদীর পানিবণ্টন, গঙ্গা-পদ্মাসহ নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার রোধ গুরুত্ব পাবে।


শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দিল্লি পৌঁছান। তাঁকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভিভিআইপি চার্টার্ড ফ্লাইট দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের রেল ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম। প্রধানমন্ত্রীকে এ সময় লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একটি সাংস্কৃতিক দল এ সময় স্বাগত নৃত্য ও বাদ্য পরিবেশন করে।


বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, সফরের প্রথম দিন শেখ হাসিনা দিল্লিতে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার দরগাহ পরিদর্শন করেছেন। এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে এক টুইটে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের নেতৃত্বের সম্পর্কে পারস্পরিক উষ্ণতা এবং নিয়মিত সাক্ষাৎ ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীসুলভ অংশীদারত্বের স্মারক।


প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম সফরসঙ্গী পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে কুশিয়ারা নদীর পানি ভাগাভাগিসহ সাতটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। কুশিয়ারা নদীর পানি বাংলাদেশে সেচের জন্য ব্যবহারের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া এরই মধ্যে দুই দেশের পানিসম্পদমন্ত্রী পর্যায়ে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে চূড়ান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, আইন, তথ্য ও সম্প্রচার প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে বলে গত রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে।


বাংলাদেশের আগ্রহের কেন্দ্রে থাকা তিস্তা নদীর পানি ভাগাভাগি ও গঙ্গা-পদ্মার পানির সদ্ব্যবহার, ভারতে পাটসহ অনেক পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা অপসারণ এবং ভারত হয়ে ভুটান ও নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়গুলো আটকে থাকায় এই সফর নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বেশ অস্বস্তি রয়েছে বলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


আজ মঙ্গলবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এরপর শেখ হাসিনা রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। শেখ হাসিনা পরে তাঁর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।


ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি, নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী, আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এবং ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির পরিবারের সদস্যদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। আগামীকাল বুধবার ভারতের শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের জন্য আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।


প্রধানমন্ত্রী আগামী বৃহস্পতিবার রাজস্থানের আজমির শরিফ যাবেন। ওই দিনই সন্ধ্যায় তিনি দেশে ফিরবেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023