|
Date: 2022-09-07 02:17:03 |
◾ নিউজ ডেস্ক
ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন নয়াদিল্লি সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় তারা দুই দেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু বলেন, আমাদের ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত।
ভারতীয় রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেভাবে দুই দেশ একসঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে, তা সত্যিই বিশেষ।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি এটা দেখে খুশি যে বাংলাদেশ তার জনগণের আর্থসামাজিক সমৃদ্ধিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি আশ্বস্ত করেন, ভারত বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হয়ে থাকবে।’
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, আমাদের সম্পর্ক সবসময় পারস্পরিক সহযোগিতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে।
এর আগে দুপুরে দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলন ও যৌথ বিবৃতি দেন দুই শীর্ষ নেতা। দুই দেশের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারত।’
যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুই দেশ অনেক অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করেছে। আমরা আশা করছি, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ সব অমীমাংসিত সমস্যা দ্রুত শেষ হবে।’ এর আগে শেখ হাসিনাকে পাশে নিয়ে মোদি বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে। আমরা তথ্যপ্রযুক্তি, মহাকাশ ও পারমাণবিক খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এদিন কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার, রেলের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে ভারতের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা এসব সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন।
এ সময় বাগেরহাটের রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট (৬৬০ মেগাওয়াটের ২টি) মৈত্রী সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ ৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন তারা। হায়দরাবাদ হাউস থেকে ভার্চুয়ালি এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু, খুলনা-দর্শনা ও পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলপথ।
এর আগে নয়াদিল্লির রাজঘাটে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগণ্য নেতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান দেশটির প্রধানমন্ত্রী। তারা একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করেন। এ সময় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
গতকাল সোমবার চার দিনের সফরে দিল্লি যান শেখ হাসিনা। তিন বছর বিরতির পর প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে, এমন আশাবাদ ভারতের।
এর আগে সোমবার বিকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। বৈঠকে মিয়ানমারের রাখাইনের বর্তমান পরিস্থিতি ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ভারতের পর্যবেক্ষণের বিষয়টি উঠে আসে।
সফরের প্রথম দিন দিল্লিতে প্রখ্যাত ওই সুফি সাধক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করেন প্রধানমন্ত্রী। জিয়ারত শেষে পরিদর্শনকালে দরগাহে অনুষ্ঠিত কাওয়ালি কিছুক্ষণ শোনেন প্রধানমন্ত্রী। পরে দরগাহের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে একটি ছবি উপহার দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীও দরগাহে একটি গেলাফ উপহার দেন।
সফরের তৃতীয় দিন আগামীকাল বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ বা গুরুতর আহত ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বংশধরদের ‘মুজিব বৃত্তি’ প্রদানের একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সফরের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় ফেরার আগে রাজস্থানের খাজা গরিব নওয়াজ দরগাহ শরিফ ও আজমির শরিফ দরগাহ পরিদর্শন করবেন শেখ হাসিনা।
© Deshchitro 2024