|
Date: 2022-09-07 06:17:43 |
◾ নিউজ ডেস্ক
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার নয়াদিল্লির রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে শীর্ষ বৈঠকের পর দুই নেতা যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে এ ঘোষণা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করলে তা শুধু দুই দেশের জনগণের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না, একই সঙ্গে এ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আগামী ২৫ বছরে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।
এর আগে দুই দেশের প্রতিনিধি দলসহ এক ঘণ্টার বেশি সময় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী প্রায় ২০ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন। শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা-সংক্রান্ত সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে--কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে সমঝোতা স্মারক।
শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজঘাটে গান্ধী সমাধিস্থলে গিয়ে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে গেলে তাকে সেখানে স্বাগত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর ভারতের তিন বাহিনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে।
২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়েছিলেন। প্রায় তিন বছর পর তিনি দিল্লি সফরে গেলেন। এর মধ্যে ২০২১ সালের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর যেমন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ধরনের প্রভাব ফেলবে, অন্যদিকে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে হাসিনা-মোদি বৈঠক।
◾হাসিনা-মোদি শীর্ষ বৈঠক :
দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে শুভেচ্ছাবিনিময়ের আনুষ্ঠানিকতার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন হায়দরাবাদ হাউসে দুই দেশের মধ্যে শীর্ষ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনসহ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা ছিলেন। হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতায় শেষ মুহূর্তে ভারত সফরে যেতে পারেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাসহ প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পূর্বনির্ধারিত আলোচ্যসূচি অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জ্বালানি সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি আলোচনায় আসে। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে এ বৈঠক চলে। এরপর প্রায় ২০ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।
সংবাদ সম্মেলনে হাস্যোজ্জ্বল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। দুই দেশের বন্ধুত্ব ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব অনেক সমস্যার সমাধান করেছে। এবার কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আশা করি, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও ভারত অংশীদার হিসেবে একসঙ্গে কাজ করলে তা শুধু দুই দেশের জনগণের জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না, একই সঙ্গে এ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ-ভারত পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতি হয়েছে। এখন ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার। তিনি আরও বলেন, আগামী ২৫ বছরে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাবে।
◾যে সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে :
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এবারের শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা সংক্রান্ত সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা জানানো হয়। এ সাতটি সমেঝোতা স্মারকের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে--সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের অধীনে রহিমপুর হয়ে বাংলাদেশের সিলেটে কুশিয়ারা নদীর ১৫৩ কিউসেক পানিবণ্টন। বাংলাদেশের পক্ষে এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। ভারতের পক্ষে সই করেন জলশক্তি মন্ত্রণালয়ের পানিসম্পদ, নদী উন্নয়ন ও গঙ্গা পুনরুজ্জীবন বিভাগের সচিব পঙ্কজ কুমার।
দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারক হচ্ছে-ভারতের বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (সিএসআইআর) সঙ্গে বাংলাদেশের বিসিএসআইআরের বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আফতাব আলী শেখ। ভারতের পক্ষে সই করেন সিএসআইআরের মহাপরিচালক ড. এন কালাইসেলভি।
তৃতীয়টি হচ্ছে, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে ভারতের ভুপালে অবস্থিত ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির সমঝোতা স্মারক। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রাব্বানি এবং ভারতের পক্ষে বিচারপতি এ পি সাহি সই করেন।
চতুর্থ সমঝোতা স্মারক হচ্ছে-ভারতের রেলওয়ের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলোতে বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার রেলওয়ে বোর্ডের মুখ্য নির্বাহী পরিচালক ভি জি ভুমা সই করেন।
পঞ্চমটি হচ্ছে--বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্যপ্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক। এতে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান এবং ভারতের পক্ষে দেশটির রেলওয়ে বোর্ডের ইডিটি (ট্রাফিক) দীপক কুমার ঝা সই করেন।
ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারক সই হয় ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম ‘প্রসার ভারতী’র সঙ্গে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি)। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন বিটিভির মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন এবং ভারতের প্রসার ভারতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মায়াঙ্ক কুমার আগারওয়াল।
সপ্তম সমঝোতা স্মারকটি সই হয় বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) এবং ভারতের নিউ স্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেডের (এনএসআইএল) মধ্যে। এই সমঝোতা স্মারকটিতে সই করেন বিএসসিএলের চেয়ারম্যান ও সিইও ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং এনএসআইএলের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রাধাকৃষ্ণাণ।
বিশেষজ্ঞ মত : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি এবং আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির বিচারে এবারের বৈঠকটি অন্য সময়ের তুলনায় আরও বেশি গুরুত্ব বহন করছে। এ বৈঠকে কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারকসহ সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এসব সমঝোতা দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার করবে।
© Deshchitro 2024