ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের বারুইগ্রাম গ্রামের কৃষক নুরু মিয়ার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মেয়ে স্বর্ণা আক্তার (১৪) স্পেশাল অলিম্পিকসে অংশ নিতে জার্মানির বার্লিনের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে। 


স্বর্ণা নান্দাইল সদরে অবস্থিত সেবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়া ও খেলাধুলা ছাড়াও আঁকাজোকায় ছিল স্বর্ণার প্রবল আগ্রহ।তার এই আগ্রহ দেখে হতদরিদ্র বাবা তাকে সেবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেয়।


এরমধ্যে স্বর্ণা বিভিন্ন খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করে প্রথম স্থান অর্জন করে। স্থানীয় ও জেলায় ১০০ মিটার দৌড়ে বেশ কয়েকবার প্রথম হলে দৃষ্টি পড়ে স্পেশাল অলিম্পিকস কর্তৃপক্ষের। তারা স্বর্ণাকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখানেই উন্নত প্রশিক্ষণ শেষে ফুটবল খেলায় মনোনীত করে।এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ইভেন্টে যাওয়া ১০৭ জনের দলে সুযোগ পায় স্বর্ণা।জানা যায়,অলিম্পিকসে ৯টি ইভেন্টের মধ্যে রয়েছে নারী ফুটবলের একটি দল। ওই দলে রয়েছে স্বর্ণা।


সুযোগ পেয়ে স্পেশাল অলিম্পিকসে অংশ নিতে গত সোমবার (১২ জুন)ভোরে বাংলাদেশ বিমানে স্বর্ণা জার্মানির বার্লিনের উদ্দেশে রওনা হয়। 


সেবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান আকন্দ জানান, সম্প্রতি ময়মনসিংহ জেলায় অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকস প্রতিযোগিতায় ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে স্বর্ণা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।পরে বিভাগীয় পর্যায়ে গিয়ে সেখানে তার ফলাফল অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় ঢাকায় গিয়ে প্রথম ক্যাম্পিংয়ে উত্তীর্ণের পর দ্বিতীয় ক্যাম্পিংয়েও স্থান পায়।


বাংলাদেশ স্পেশাল অলিম্পিকসের চিফ কো-অর্ডিনেটর অরিন্দম পান্ডে জানান, দ্বিতীয় ক্যাম্পিংয়ে অ্যাথলেটিকসে মোট ৭৫ জন ছাড়াও মোট ১০৭জন সুযোগ পায়। তাদেরকে গত জানুয়ারি মাসে বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করানো হয় জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য। ওই সময়েই প্রত্যেকেরই পাসপোর্টসহ সকল কিছু সম্পন্ন করা হয়। 


স্বর্ণার বাবা হতদরিদ্র কৃষক নুরু মিয়া খুব খুশী। তিনি বলেন,আমার ছেড়িডারে লইয়া অহন আমার খুব আনন্দ লাগতাছে।আমার হাবাগোবা এই ছেড়িডার জন্য মনডা বইর‌্যা গেছে।'


স্বর্ণার মা নাজমা বেগম কান্নামিশ্রিত কণ্ঠে বলেন,আমার কলিজার টুকরা,আদরের ধন বিদেশ গেছে। হেইনো গিয়া কিবায় কিতা করবো! হে তো কানেও হুনে না, কিছু কইতাৃও পারে না। কেলা তারে আদর যত্ম করবো! আমার তো কিছু ভালা লাগে না।'

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024