|
Date: 2023-06-19 09:17:11 |
ইন্টারসিটির ভাড়া ছিল রমেনের৷ প্যাসেঞ্জার নামিয়ে যখন ফিরছে তখন প্রায় রাত ১১ টা বাজে, রাস্তা শুনশান, শুধু রাস্তার দুপাশের গাছগুলো সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ হঠাৎ আন্দাজ ১০০ মিটার মধ্যেই গাড়ির লাইটের আলোতে দেখতে পেল একটা মহিলা দুহাত তুলে গাড়িটা থামাতে চাইছে৷ আরো একটু এগোতেই গাড়ির ব্রেক কষতে হল তার৷
-- বাবু আমার খুব বিপদ, আমাকে নিয়ে চলুন৷ ভগবান আপনার মঙ্গল করবেন৷
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহিলাটা একেবারে গাড়ির সামনে এসে পড়ল৷ গাড়ি থামাতে বাধ্য হল সে৷ রমেন কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই...
-- আমার স্বামী আর শ্বাশুড়ি আমাকে পুড়িয়ে মারতে চাইছে৷ আপনি আমাকে বাঁচান৷
-- কোথায় যাবেন?
কথাটা বলতে বলতে রমেন যেন নিজের অজান্তেই গাড়ির গেটটা খুলে দেয়৷ মহিলাটা গাড়িতে উঠে পড়ে৷
-- কিন্তু....
-- আপনি আমাকে বাঁচান, আপনি তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিন৷
মহিলাটা কথা বলছিল বেশ হাঁফাতে হাঁফাতে৷ রমেন আর দেরি না করে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল৷ গাড়ি ডায়মণ্ডহারবার রোড হয়ে কলকাতা অভিমুখে ছুটে চলল৷ রমেন এবার বেশ শান্তভাবে জিজ্ঞেস করলেন...
-- আপনি কোথায় যাবেন? আপনার কারণে আমি কোনো প্রবলেমে পড়ব না তো?
ডুগরে কেঁদে ওঠে মহিলাটি৷ রমেন এই এতক্ষণে প্রথম মহিলাটার দিকে ভালোভাবে তাকালো৷ চুল গুলো ভিজে, পড়নে আটপৌরে কাপড়, সিঁথিতে সিঁদুর, হাতে শাঁখা, দেখতেও বেশ সুন্দরী৷ রমেন কি বলবে কিছু বুঝে উঠতেই পারছে না৷
-- আপনি আমায় বাঁচান৷
-- কিন্তু...
একটু থেমে যায় রমেন৷ তার নাকে একটা গন্ধ ভেসে আসছে, কেরোসিন তেলের তীব্র গন্ধ৷ রমেন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মাথাটা নাড়তে থাকে৷
-- হুঁ, আপনার পরিচিত কেউ আছেন কলকাতায়,...?
মহিলাটা ভাঙা গলায় বলল
-- না৷
রমেন এবার একটু উঁচু এবং কর্কশ গলায় বলে উঠল
-- তাহলে আপনি যাবেন কোথায়?
-- আমি জানি না..
একটু থেমে মহিলা বলে চলে
-- ওরা আমায় বাঁচতে দেবে না৷ ওরা আমাকে মেরে ফেলবে৷ আপনি আমাকে বাঁচান আজ রাতটা আপনি একটা ব্যবস্থা করে দিন৷ কাল সকালে.....
মহিলাটার কথা শেষ না হতেই রমেন বলল
-- না না আমার দ্বারা কোনো কিছু করা সম্ভব নয়৷ আপনি বরং অন্য ব্যবস্থা করুন৷ নাহলে চলুন আপনাকে থানায় নিয়ে যাচ্ছি৷ তারপর থানায় যা বলার বলবেন৷
মহিলাটা চুপ করে থাকে..৷ রমেন নিরুপায়, মুখে যতই বলুক একটা মহিলাকে এই ভাবে একা ছাড়তে তার মন সায় দিল না৷
-- ঠিক আছে আজ রাতটা শুধু৷ কাল সকাল হলেই কিন্তু নিজের ব্যবস্থা দেখে নেবেন৷
রাত তখন ১২:৪০ গাড়ি গ্যারেজ করে গ্যারেজের দারোয়ানকে ইশারা করে গ্যারেজ তালা দিতে বলেই বাড়ির দিকে হাঁটা দিল রমেন৷
-- চলুন, আমি আর আমার মা থাকি আজ রাতটা শুধু এখানে থাকবেন... সকাল হলেই আপনার ব্যবস্থা আপনি করে নেবেন৷
কিছু কথা না বলে শুধু ঘাড় নাড়ে মহিলাটি৷
বিরজুর ট্যাক্সি গ্যারেজ থেকে রমেনের বাড়ি তিন মিনিটের হাঁটা পথ৷ বড়ো রাস্তা টা পেরিয়ে শীতলা মন্দিরের পাশ দিয়ে ঢুকে শিবুর চায়ের দোকানের ঠিক উল্টো দিকে ছোট্ট হলুদ রঙের দোতলা বাড়িটাই রমেনের৷ মেন গেট দিয়ে ঢুকেই বাঁ দিকে দরজার পাশে দেওয়ালের উপর কলিংবেলটা বাজাল রমেন৷ বারন্দার লাইটা জ্বলে উঠল৷ মধ্য ষাটের এক ভদ্রমহিলা দরজা খুলে দিল৷ ইনি রমেনের মা৷ মহিলাটি রমেনের পিছনে দাঁড়িয়ে৷ হঠাৎ মহিলাটার দিকে দৃষ্টি পড়ায় একটু হতচকিত হয়ে বলল
-- তোর পিছনে ও কে!!!
-- মা... মা... উনি খুব বিপদে পড়েছেন, আজ রাতটা এখানে থাকবেন৷ সকাল হলেই.....
-- মানেটা কী? তুই এই রাতদুপুরে একটা মেয়েকে ঘরে নিয়ে চলে এলি...??
এতক্ষণ চুপ ছিল মহিলাটি.. সটান রমেনের মায়ের উপর পড়ে কাঁদতে থাকে....
-- মাসিমা আজ রাতটুকু আমাকে আশ্রয় দিন৷ কাল সকাল হলেই চলে যাব৷
একটু ইতঃস্তত করে রমেনের মা বলল--
-- আচ্ছা আচ্ছা পা ছাড়ো.... আমরা কোনো ফ্যাসাদে পড়বো না তো!!!
-- না না আমি আপনাদের কোনো বিপদে ফেলব না৷
উপায় না দেখে অগত্যা রাজিই হল রমেনের মা৷ রমেনের মা কথা বলে জানল যে মহিলার নাম পূর্বাশা৷ বাপের বাড়ি হালিশহর, বাবা মা অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছেন৷ শ্বশুর বাড়ি রায়নগর৷ বছর তিনেক আগে তার বিয়ে হয়৷ কিন্তু সন্তান ধারণে অক্ষম হওয়ায় স্বামী আর শ্বাশুড়ি তার উপর সবসময় অত্যাচার করে৷ আজ তাকে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছিল৷ রাতে আর বিশেষ কথা হল না৷ পূর্বাশা রাতে রমেনের মায়ের ঘরে মেঝেতে শুয়ে পড়ে৷
পরের দিন সকালে রমেন যথারীতি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়৷ গাড়ি চালাতে চালাতে বার বার একটাই ব্যাপার তার মাথায় ঘুরছে কাল রাতের ব্যাপারটা৷ সে কি ঠিক করেছে? নাকি মেয়েটি কোনো ছলনাময়ী, তাকে বিপদে ফেলার জন্য এইসব নাটক করেছে৷ রাতে ভালো ঘুম হয়নি, দুপুরের খাবার খেয়ে বাইপাসের ধারে গাড়িটা রেখে রমেন একটু চোখ বুঁজে ভাবতে থাকে৷
-- হা...হা...হা...হা... আমি রক্ত চাই..... আমাকে রক্ত দে...৷
-- ও....দাদা.. ও....দাদা হাওড়া যাবেন?
এক ঝটকায় ঘুমটা ভেঙে যায়, একটু মাথা ঝাঁকিয়ে প্যাসেঞ্জারের দিকে ফ্যাল ফ্যাল তাকিয়ে থাকে৷ তারপর নিজেকে সংযত করে...
-- কোথায় যাবেন?
-- হাওড়া
গাড়ি চালাতে চালাতে সে মনে করতে থাকে যে দুপুরের খাবার পর সে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল..৷ তারপর সে স্বপ্নে দেখে যে ওই পূর্বাশা মেয়েটি, পরনে গেরুয়া শাড়ি, কপালে লাল রক্তের মত টিকা, চুল গুলো এলোমেলো, বিস্ফারিত দুটো চোখ ফেটে যেন আগুন বেরিয়ে আসছে৷ আর সেই বিকট ভয়ংকর আকাশ বিদীর্ণ করা উন্মাদ হাসি৷ তারপর আর ভাবতেই পারে না রমেন৷ তার গলা শুকিয়ে ওঠে...৷
হাওড়ায় প্যাসেঞ্জার নামিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসে রমেন৷ ঘরে ঢুকেই চমকে ওঠে...
-- আপনি এখনো...
-- হ্যাঁ তোকে বলা হয়নি, আমি ভাবলাম একটা মেয়ে বিপদে পড়েছে৷ এখানেই থাক, বৌমার দাদুভাইকে নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে ফিরতে আরো এক মাস লাগবে৷ ততদিনে ও একটা কাজ জুটিয়ে নিয়ে চলে যাবে৷ আর আমার একা একা একদম ভালো লাগে না৷
-- কিন্তু মা...
-- যা গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে৷
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে রমেন ভিতরে চলে যায়৷ রমেন বরাবরই মায়ের বাধ্য৷ বিশেষ করে রমেনের যখন চোদ্দ বছর বয়স তখন রমেনের বাবা নিখোঁজ হয়ে যায়, সেই থেকে রমেনের মা মানসিক ভাবে ভীষণ খিটখিটে হয়ে গেছে, আর একটা কথা একবারের বশি বলতে বা শুনতে পছন্দই করেন না৷ রমেন মাকে আর কোনো কথা বলে না৷ রমেনের মনে পড়ে বাবার নিখোঁজ হওয়ার পর মায়ের সেই উন্মাদ হয়ে ওঠা৷ তার মা আঠারো বছর পরে আজও বিশ্বাস করে তার স্বামী বেঁচে আছে আর একদিন ঠিক ফিরে আসবে৷ সেই বিশ্বাসে রমেন কখনো আঘাত করে নি৷
রমেন ভাবতে থাকে গতকাল পূর্বাশার সাথে হঠাৎ দেখা হওয়া আর আজকের দুপুরের এই ভয়ংকর স্বপ্ন৷ কোনো কিছুই তার মাথায় আসছে না৷ নিতান্তই কাকতালীয় ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না৷ তাই সে আর এইসব নিয়ে ভাবে না৷
রাতে খাওয়া দাওয়া করে নিজের ঘরে চলে যায় রমেন৷ গতরাতে ভালো ঘুম হয়নি তাই শুয়ে পড়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ে রমেন৷---
-- আজ কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী, আর মাত্র কয়েকদিন অপেক্ষা কর মা, দীর্ঘ আঠারো বছরের সাধনা সফল হবে৷ আসছে অমাবস্যায় পূরণ করব তোর ইচ্ছা মা৷ মা তুই রক্ত চাস, আমিও রক্ত চাই... হা...হা...হা...হা...হা....... রক্ত দেবো মা, তাজা রক্ত দেবো৷ আঠারো বছরের উপবাস ভঙ্গ হবে মা.... হা...হা...হা...হা... রক্ত দেবো মা.......৷
ঘুম ভেঙে বিছানায় ধরমর করে উঠে বসে রমেন, তার ঘন ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে সারাটা ঘরে যেন কারোর উপস্থিতি অনুভব করে সে৷ মাথার বালিশের পাশে থেকে টর্চ লাইটটা নিয়ে অন্ধকার ঘরটায় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়৷ না, কোথাও কিছু দেখা পেল না আর দরজাও বন্ধ৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ১:৪০৷ তারপর আবার শুয়ে পড়ে৷ তার দুপুরের স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেল, সেই একই স্বপ্ন, তবে এখন স্বপ্নে সে যা দেখলো তা চোখে দেখা যায় না৷ কি বীভৎস সেই দৃশ্য৷ পূর্বাশার পাশে একজন মাথা গুঁজে বসে আছে, তার মুখ দেখা যাচ্ছে না, মুখোশের আড়ালে ঢাকা তার মুখ৷ আর মুখোশের ভিতর দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে একধরনের তরল পদার্থ৷ রমেনের শিরা উপশিরায় বিদ্যুৎ প্রবাহ খেলে গেল৷ অস্ফুটে বলে ওঠে--- রক্ত৷
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধুমাত্র সে, কাল সকালেই মেয়েটাকে সব কথা জানতে চাইবে৷ অবশিষ্ট রাত অজানা আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা আর একটা ধোঁয়াশার মধ্যে না ঘুমিয়েই কাটে রমেনের৷ পরের দিন খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে রমেন৷ সে ভেবেই নিয়েছে মাকে আগে সব জানিয়ে তারপর ওই মেয়েটাকে তাড়াতে হবে৷ রোজদিনের মতো ঘুম থেকে উঠে সূর্য প্রণাম সেরে মায়ের ঘরে গিয়ে রমেন দেখে যে মা ঘরের মেঝেতে পড়ে গোঁঙাচ্ছে, অনেক ডাকাডাকিতে কোনো সারা মেলেনি, আর দেরি না করে তড়িঘড়ি রমেন তার মা কে নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়৷ প্রাথমিক ট্রিটমেন্টের পরে ডাক্তার জানিয়ে দিল স্ট্রোক, ঘুমের মধ্যেই হয়েছে৷ রমেন কিছু ভাবতেই পারছে না, ওই ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন আর মায়ের অসুস্থতা সব মিলিয়ে সে এখন পাগল হয়ে যাবে মনে হয়৷ হঠাৎ সে কিছু একটা ভেবে পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখে ফোনটা আবার পকেটে পুরে রাখে৷ সে এখন হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসে, একজন নার্স তার হাতে একটা প্রেসক্রিপশান দিয়ে বলে গেল এখনই ওষুধ গুলো লাগবে৷ আধঘন্টার মধ্যে ওষুধ নিয়ে ফিরে আসে সে৷ ডাক্তারের সাথে কথা বলে সে জানতে পারে এখন কিছুটা বিপদ মুক্ত, তিনি ঘুমাচ্ছেন৷ রমেন যেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে৷ সে মনে মনে সবকিছুর জন্য ওই মেয়েটিকে দোষারোপ করে৷ আজ মেয়েটিকে সে তাড়াবেই৷ রমেন শুধু অপেক্ষা করছিল তার মামার আসার, মামা আসলেই সে বাড়ি ফিরে আসবে৷ প্রায় আধ ঘন্টা পর মামা এল৷ তারপর রমেন গাড়ি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়৷ বাড়ি ফিরে দেখে মেন গেটটা খোলা৷ সে তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢোকে, কিন্তু মেয়েটাকে কোথাও দেখতে পায়না৷ তাহলে কী সে চলে গেছে!! রমেন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল৷ ঠিক তার পরক্ষণেই মনে হল মেয়েটা কোনো জিনিসপত্র, টাকা পয়সা বা গয়নাগাটি নিয়ে সরে পড়েনি তো!! দ্রুত একবার আলমারি খুলে দেখে টাকা পয়সা গয়নাগাটি সব ঠিকই রয়েছে৷ ঘরের তেমন কোনো দামি জিনিস খোয়া যায়নি৷ যাইহোক রমেনকে এখন একটু বেশ ফুরফুরে মেজাজে মনে হচ্ছে৷ সে সিঁড়ির পাশে চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে৷ তার মনে হল সে একটা কাগজের উপর বসে পড়েছে৷ হ্যাঁ ঠিক তাই একটা কাগজ বটে৷ সাদা কাগজ, উল্টো পিঠে কিছু লেখা আছে৷ কাগজ উল্টে রমেনের মুখ পুরো পানসে হয়ে গেল৷ মুহূর্তের মধ্যে উদাও হয়ে গেল তার সমস্ত স্বস্তি৷
কাগজটা ছিল পূর্বাশার লেখা একটা চিঠি৷ চিঠির বিষয়বস্তু হল--
"আগামী অমাবস্যায় রাত ঠিক ১২ টায় মহান্তি পুর ভৈরবী মন্দিরে আমার সাথে তোমার পুনরায় সাক্ষাৎ হবে৷ আমার কথা অমান্য করলে তুমিই বিপদে পড়বে, তোমার মায়ের জীবন সংকট হতে পারে৷ কোনো রকম চালাকি করার চেষ্টা করবে না৷"
মাঝখানে দুদিন কেটে গেছে, তার মা এখন আগের থেকে একটু সুস্থ, কিন্তু এই অবস্থায় মাকে এইসব কথা বলাটা উচিত হবে না৷ তাই সে তার মাকে কোনো কথা বলল না৷ আনমনে গাড়ি নিয়ে বাড়ি আসছিল... কেমন একটা অদ্ভুত লাগছে এই চারপাশের পরিবেশ, সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে৷ হঠাৎ গাড়ির সামনে ধুমকেতুর মতো একটা গেরুয়া বসনধারী সাধু এসে পড়ল৷ গাড়ির ব্রেক কষতে বাধ্য হল রমেন৷ ঠিক তখনই সাধুর মুখ থেকে শোনা গেল জয় ভবানী৷ সাধু রমেনের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে বলে ওঠে---
-- আরে রমেন! কেমন আছিস?
-- ঠিক চিনতে পারলাম না৷
-- আমি প্রশান্ত৷ ঘোষ পাড়ার প্রশান্ত... এবার চিনতে পারলি?
-- তুই!! তোর এই বেশ কেন? আয় আয় গাড়িতে ওঠ৷
প্রশান্ত গাড়িতে উঠে পড়ে৷ উঠেই এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে রমেনের দিকে তাকিয়ে থাকে৷ তারপর বলতে থাকে--
-- তোর কি কোনো সমস্যা চলছে? তার সামনে যে বড়ো বিপদ দেখতে পাচ্ছি৷
-- তুই মজা করছিস নাকি! আমার মা সত্যিই অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি৷
-- আরে ভাই আমি মজা করছি না... মাসিমা কেমন আছেন?
-- আগের থেকে বেটার৷
-- তুই কোনো একটা বিষয়ে গভীর চিন্তা করছিস৷ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোর মৃত্যুর যোগ অতি নিকটে ৷
-- তোর এই বুজরুকি থামা৷ মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি, তুই তার উপর.... এইসব ফালতু কথা ছাড়৷ তুই কেমন আছিস বল৷
-- ভালো আছি... কিন্তু
-- বলছি তো আমি এইসব ভণ্ডামি বিশ্বাস করি না৷
-- তুই আমাকে একবারের জন্য বিশ্বাস কর...
-- তুই কোথায় নামবি?
-- বটতলায়...
ক্রমশঃ
লেখক : প্রণব মন্ডল, কবি & শিক্ষার্থী ; খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
© Deshchitro 2024