◾কবিতা ১- বর্ষার বৃহস্পতিবার


এমন বৃহস্পতিবার কখনো আসেনি আগে

বিস্তীর্ণ মাঠ পেরিয়ে সমান্তরাল রেলের লাইন,

শান্ত দীঘির জল;তার ওপারে শুনশান ঠিকানা 

সেই ঘরে ফেরার কোন কারণ নেই আজ।


আজ আর কোথাও ফেরার তাড়া নেই-

কেবলই পায়ের কাছে লেপটে থাকা বন্ধন ভেঙে হারিয়ে যাওয়ার ডাক।

এমন বৃহস্পতিবার কখনো আসেনি আগে

বাজারের লম্বা ফর্দ নেই 

দাপ্তরিক ব্যস্ততার মুখোশ খুলে রাখা হয়েছে আগেই

আজ কেবল রঙিন গোধূলির টান,

কেবলই মুক্ত বাতাসের গান,

কেবলই আকাশ ভাঙ্গা বৃষ্টির সাথে মিতালীর আহ্বান,

কেবলই ঘর ছাড়ার আয়োজন। 


এমন বৃহস্পতিবার কখনো আসেনি আগে।

পাপের পাহাড় ধুয়ে মুছে পুণ্য হবার দারুন আষাঢ়-

আজ তার প্রথম দিনের শুরু 

গল্প-কথার সব আয়োজন সাঙ্গ করে

রংবেরঙের স্বপ্ন ঢেলে দারুনসব অকাজ করার

 লগ্ন এলো আজ।


এই বৃহস্পতিবারটিকে বরণ করে নিতে

ওত পেতে থাকা মোড়লগণের কলমগুলো গুটিয়ে রাখা হয়েছে সপ্তাহান্তের দারুণ আয়েশে,

যুদ্ধংদেহি পৃথিবীর সমস্ত কামান মার্চ করে

ফিরে এসেছে নিজ নিজ সামরিক ঢেরায়,

কদমবনে সারি বেধে দাঁড়িয়ে আছে শিশু-স্কুল-পালানো ফুলেরা। 


বহুদিন পর ভিজবে বলে গোসল করেনি আকাশ 

জলের বুদবুদে অঙ্গ সাজাবে বলে পরচুলা-মেকআপ মাখেনি দখিনা বাতাস 

বছরের প্রথম যৌবনা বর্ষার ফোটায় তৃষ্ণা মেটাবে বলে

বহুকাল পানপাত্র খোলেনি বুভুক্ষু জমিন।



অত:পর সেই বর্ষা এলো ঠিক এক বৃহস্পতিবারে।

এমন বৃহস্পতিবার কখনো আসেনি আগে





◾ কবিতা ২- উত্তরসূরী 


চলন্ত ট্রেনের কামরায় তুমি-আমি খুব নিরিবিলি,

বলবোনা আরও কাছে টেনে নাও;

তোমার মাতাল গন্ধের কাছাকাছি। 


তার চেয়ে যে বালক ঝুলে আছে পাদানিতে প্রাণান্তকর চেষ্টায়, 

তাকে তুলে নাও বগিতে।পারলে বসতে দিও।


আমার ও'তেই হয়ে যাবে।

ইফতারের ঠিক আগে যখন তৃষ্ণায় ফেটে যেতে উদ্যত বুকের ছাতি,

বলবোনা একফোঁটা জল দাও আয়েশে বা ক্লেশে।


স্থির একিন ;খানিক বাদে মিলবে সব অঢেল, বেহিসেবী। 

পারো যদি জলের খরচ করো কিঞ্চিৎ মিতব্যয়ে;

প্রাণের পিপাসা মিটাবে কালাহরির মরূশিশু তোমার ক্ষুদ্র ত্যাগে।


তোমার নিদারুণ খেলায় হাসফাস করছে যে প্রাণ-

কেবল বেরিয়ে বাঁচবে বলে;

চাইবোনা একটুও ফস্কে দাও, নিষ্কৃতি দাও এক দন্ড।


বরং তোমার পথের পরে আগাছা-দড়ির গিঁটে-

উলটে আছে যে ছাগমাতা,ছানারা যার পথ চেয়ে;

অবলা সে চতুষ্পদীকে মুক্ত করে দাও প্রিয়!


আমি ঠিক বেচে উঠবো।

সময়ে অসময়ে চারুকাগজে মোড়ে বাহারি রঙের ডায়েরি 

কিংবা নাম নাজানা এটা-সেটা উপঢৌকনের নামে-

কোন প্রয়োজন হবেনা।


কাল যে অনাথের বন্ধ হয়েছে বিদ্যাযাত্রা,তার সহায় হও-

মাইনেটা,খাতাটা দিয়ে।

মহত্ত্বম যে কাব্য আমার;ওখানেই রচিত হবে,

তুমি হবে তার পটভূমি।


কবিতার দুঃসময়ে করুনায় ভেসে এসোনা দয়ার হাত বাড়াতে।

যে পুরুষের ঘামেও জন্ম হয় সচল স্তন্যপায়ীর-

প্রাচীন রুপকথায় কখনোবা বাস্তবে

আমি তার উত্তরসূরী।


নিমগ্নচিত্তে বহমান ব্যোহেমিয়ান চালচুলোহীন কবি।



◾◾কবি পরিচিতি◾◾



কবি মাহবুব রুমন ১৯৯০ সালের ২২ নভেম্বর নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার অবহেলিত গ্রাম ধলামূল গাঁও-এ জন্মগ্রহন করেন। গুণগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা ও সমাজ সেবামূলক সংগঠন 'কংস মৈত্রী'। মাধ্যমিক নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ময়মনসিংহ থেকে । এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বাউন্ডুলে ছাত্র সংঘ'। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত ছিলেন। লেখালেখি করছেন বাল্যকাল থেকে । অমর একুশে বইমেলা ২০২১-এ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'কাব্য টোকাইয়ের অভিষেক' ব্যাপক সাড়া ফেলে। তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ " পদ্যবাড়ির অন্দরমহল"। এটিও বইমেলায় পাঠক সমাদৃত হয়েছিল। কর্মজীবনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন সদস্য তিনি।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024