পূর্ব ঘটনার জের ধরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় হলের প্রায় ৫০ জনের অধিকার শিক্ষার্থী হতাহত হয়েছে।


দুই হলের নেতা-কর্মীরা হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় বাঁশ, হলের সামনে থাকা গাছের ডাল, রড নিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। এছাড়া একে অপরকে উদ্দেশ্য করে ইট ছুঁড়ে মারে।


◾ঘটনা যেভাবে শুরু:


গতকাল ৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের যাওয়ার পথে 'সাইড' চাওয়াকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।


প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের রায়হান আহমেদ  নামাজে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেইটের সামনে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের  একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদকে সাইড দেওয়ার কথা বলে। এসময় সেলিম আহমেদের কাধে ধাক্কা লাগে।


নামাজ শেষে এ নিয়ে সেলিম ও রায়হানের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। কথা বলার এক পর্যায়ে সেলিম, সেলিমের বন্ধু মাহবুব ও রায়হান একে অপরের প্রতি উত্তেজিত হয়ে উঠে। এসময় দুই হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধে যায়। এসময় মসজিদের সকল মুসল্লিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ দুই হলের ছাত্রলীগ নেতারা উপস্থিত থেকে পরিস্থিতি শান্ত করেন।


এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদ বলেন, আমি আমার সিনিয়র ভাইয়ের সাথে নামাজে যাচ্ছিলাম। তারপর উনি (রায়হান) এসে আমাকে ধাক্কা মারে এবং তুই বলে সম্মোধন করে। আমি উনাকে (রায়হান) আগে থেকে চিনতাম না। তারপর নজরুল হলের বড় ভাইদের বলি উনি (রায়হান) কেন আমাকে ধাক্কা মেরেছে? তারপর নামাজ শেষে এসে আমাকে বলে তুই কে? আমাকে চিনোস? তবে ধাক্কা দেয়ার বিষয় অস্বীকার করে কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রায়হান আহমেদ বলেন, আমি নামাজ পড়তে যাচ্ছিলাম। তারা তিন চার জন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলো। আমি শুধু বলেছি যে একটু সাইড দেন নামাজে যাবো। এখানে ধাক্কা দেয়ার মত কোন ঘটনে ঘটে নাই।


◾শুক্রবার মধ্যরাতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ:


একই ঘটনার রেশ ধরে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম আবরারের উপর অতর্কিত হামলা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদ সহ আরো কয়েকজন। এরপর রাত ১২ টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন একটি দোকানে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রায় ৭-৮ জন ছাত্রলীগ কর্মী গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে। এক পর্যায়ে দুই হলের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

দুই হলের নেতা-কর্মীরা হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় বাঁশ, হলের সামনে থাকা গাছের ডাল, রড নিয়ে একে অপরের দিকে তেড়ে যায়। এছাড়া একে অপরকে উদ্দেশ্য করে ইট ছুঁড়ে মারে। রাতে ঘটনায় প্রায় ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ইমার্জেন্সি মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।


আজ শনিবার আবারো দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ:


পূর্বের ঘটনার জের ধরে পুরো ক্যাম্পাস সহ আশেপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। শনিবার (১০ সেপ্টবের) দুপুর আড়াইটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে নজরুল হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পেয়ে বঙ্গবন্ধু হলের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দিলে এ ঘটনা ঘটে। দুপুরের সংঘর্ষে প্রায় ৫০'র অধিক নেতাকর্মী আহত হয় এবং ১০ জনের মত ছাত্রলীগ নেতাকর্মী গুরুতরভাবে আহত হয়। এখনো পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষিপ্ত হয়ে আছে দুই হলের শিক্ষার্থীরা। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সদর দক্ষিণ থানার ওসি দেবাশীষ চৌধুরী বলেন, 'আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। স্থায়ী সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত সবকিছু শান্ত আছে।'


◾সর্বশেষ পরিস্থিতি:


বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রোক্টরিয়াল বডি এবং কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জরুরি বৈঠকে বসে রবিবার এবং সোমবারের পরীক্ষা স্থগিত করেছেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024