মাত্র ১১২ টাকার ব্যাংক ড্রাফটে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনে চাকরি পেলেন ৩৬ জন। চাকরি পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।


রোববার (২৫ জুন ) দুপুরে নিজ সম্মেলন কক্ষে ৩৬ তরুণ-তরুণীর হাতে ফুল ও নিয়োগপত্র তুলে দেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। 


জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আওতায় ৩৬টি চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাড়ে ৫ হাজার জন আবেদনকারী। এর মধ্যে অফিস সহায়ক ১৮ জন, নিরাপত্তা প্রহরী ৭ জন, পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৯ জন, বেয়ারা ১ জন ও সহকারী বাবুর্চি পদে ১ জন নিয়োগ পেয়েছেন। 


অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পাওয়া ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘মাত্র ১১২ টাকা খরচে চাকরি পাব স্বপ্নেও ভাবিনি। যেহেতু ঘুষ ছাড়া চাকরি পেয়েছি তাই আজীবন ঘুষ ছাড়া মানুষকে সেবা দেব, ইনশাল্লাহ।’ 


নিয়োগপত্র পেয়ে হেদায়েত উল্যাহ নামের আরেকজন বলেন, ‘আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ। এই সময়ে চাকরিটা আমার জন্য সোনার হরিণ ছিল। এছাড়া সরকারি চাকরি মানে ঘুষের ছড়াছড়ি। কিন্তু আমার পদে চাকরির জন্য কাউকে এক টাকাও ঘুষ দেওয়া লাগেনি।’


নিয়োগ পাওয়া সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সামর্থ্য নেই টাকা পয়সা দিয়ে চাকরি নেওয়ার। ১১২ টাকা দিয়ে আবেদন করেছি। অনেকেই হতাশ করেছে ঘুষ ছাড়া চাকরি হবে না বলে কিন্তু ঘুষ ছাড়াই সরকারি চাকরি আমি পেয়েছি। এজন্য জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।’


এ সময় জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘তোমরা যারা টাকা ছাড়া, তদবির ছাড়া চাকরি পেয়েছো, আমার স্বনির্বন্ধ অনুরোধ থাকবে মানুষের সেবা করার। তোমাদের কাছে দাবি থাকবে মানুষকে ঘুরাবে না, ভোগাবে না। পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। আমি আশা করি নিয়োগপ্রাপ্ত সকলে নিজের এলাকার মানুষের জন্য সেবার সুযোগ আছে এবং সেই সেবা যেন জনগণ পায়।’


তিনি বলেন, রাতের ২টায় যখন ফলাফল দেওয়া হয় তখন অধিকাংশই ভালো বলেন, আবার অনেকে বলেন এত অল্প সময়ে এত খাতা কীভাবে দেখলো? ফেসবুকেও লেখেন। ৩৬টি পদের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে শতাধিক প্রার্থী ছিল। চাকরি নিয়ে বিভিন্ন রকম বিভ্রান্তি থাকে। দুপুর ১২টায় পরীক্ষা শেষ হয়। পরীক্ষার পর ৭০ জন শিক্ষক আমরা নিয়োগ দেই। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শিক্ষকগণ এখানে বসে ফলাফল নির্ণয় করেছেন। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যেই ফলাফল দিয়েছি যাতে করে কোনো ধরণের প্রশ্ন না ওঠে।   


জেলা প্রশাসক পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রী, নোয়াখালীর ছয় জন সাংসদ, জেলার সকল রাজনৈতিক নেতারা নিরপেক্ষ ভূমিকা ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।


অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: নাজিমুল হায়দারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন রায়, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিজাম উদ্দিন আহমেদ,  সোনাইমুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইসমাইল হোসেন, কবিরহাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতিমা সুলতানা, হাতিয়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: কায়সার খসরু, বেগমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইয়াসির আরাফাত, চাটখিল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমরানুল হক ভূঁইয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মেজবা উল আলম ভুইঁয়া, সুবর্ণচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা চৈতী সর্ববিদ্যা, বিভিন্ন উপজেলার সহকারী কমিশনারগণসহ (ভূমি) জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত ছিলেন। 


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024