দিন বদলের সাথে সাথে মেহেরপুর থেকে বিলুপ্তির পথে কাউন চাষ। আশি'র দশকে জেলা জুড়ে কাউনের চাষ ব্যাপক ভাবে হলেও বর্তমানে দু’একটি জমিতে ছাড়া এ ফসলের চাষ চোখে পড়েই না। গত কয়েকদিনে মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে একটি গ্রাম ছাড়া কোথাও কোন জমিতে কাউন চাষ চোখে মেলেনি। কাউনের চাষ কোথাও আছে কিনা এমন তথ্যও কেউ দিতে পারেনি। এমনকি কৃষি বিভাগের কাছেও কাউন চাষের কোন তথ্য নেই। জেলা থেকে হারিয়ে গেছে কাউন চাষ। আর  নতুন প্রজন্মও মনে হয় জানেনা কাউন কি!

মেহেরপুরের লোকজন কাউনের নাম বিভিন্ন ভাবে বলে থাকে। কেউ বলে কাউন, কেউ কামুন, কেউ কদু, কেউ বা বলে ভুইরু।

সহজ চাষ পদ্ধতি ও স্বল্প খরচে এ ফসলটি ঘরে তোলা গেলেও উন্নত জাতের বিভিন্ন ফসলের ভীড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে কাউন ফসল। ১৯৮৫ সালের দিকে মাথাভাঙ্গা নদীর পাড় ছাড়াও প্রায় প্রতিটা গ্রামের পতিত জমি গুলোতে ব্যাপক হারে এ চাষ নজরে পড়ে, যা অত্র এলাকার মানুষের ক্ষুধা নিবারনের একমাত্র ভরসা ছিল। বর্তমানে সেই গরীবের কাউনের চাল মানুষ বিলাসী খাবার তৈরিতে ব্যবহার করে থাকে। যদিও হাট-বাজারে কাউনের চাল পাওয়া খুবই কঠিন। তবে কাউনের চাল খুবই সুস্বাদু। কাউনের চাল দিয়ে নানা রকম পিঠা, ক্ষীর, জাও, ভাত, পায়েস, পোলাওসহ বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরি হয়ে থাকে।

সাধারনতঃ চৈত্র মাসের দিকে জমি চাষ করে কাউনের বীজ বপন করতে হয়। কোনরকম সেচ কাজ ছাড়াই জৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসের দিকে এ ফসল ঘরে ওঠে। প্রতি বিঘা জমিতে ৮/১০ মণ হারে ফলন হয়ে থাকে। ধান ও গমের মতো ফসল ঘরে তোলার পর কাউনের খড়ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

জেলার গাংনী উপজেলার চৌগাছা এলাকার আব্দুল জলিল জানান, গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার গোয়ালগ্রামে এক সময় প্রচুর পরিমাণে কাউন চাষ হয়েছে। সে সময় গ্রামের চাষীরা কাউনের চালের খাবার খেয়েই জীবন-যাপন করতো। আর এখন ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এমনকি তরুনরাও কাউন চেনে না। কাউন চালের ভাতের সাথে নদীর পানির দেশী মাছ ও সবজি খুবই মজাদার। এ চালে অনেক পুষ্টি ও গুনাগুন বিদ্যমান।

হিজলবাড়ীয়া গ্রামের নকিম উদ্দীন জানান, একসময় অন্যান্য ফসলের ন্যায় ব্যাপক হারে কাউনের চাষ হতো। কাউন বিক্রি করেই অনেকের সংসার চলতো কিন্তু বর্তমান সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কৃষিতে বিপ্লব ঘটায় কাউনের চাষ বিলুপ্ত প্রায়। দেশীয় জাতের এ ফসলটি আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করা উচিৎ। অন্যথায় পরবর্তী প্রজন্ম জানবেই না কাউন কি! ঐতিহ্যের ফসলটি যেন একেবারেই হারিয়ে না যায় এজন্য আমাদের সকলকেই কমবেশি কাউনের চাষ করা উচিৎ। তাছাড়া বর্তমানে কাউনের চাল সোনার হরিণের মতো। পাওয়া যেমন কঠিন, দামও কিন্তু কম নয়।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, কাউনের চাষ মেহেরপুর থেকে বিলুপ্ত প্রায়। আমাদের অফিসে কাউন চাষের কোন হিসাবই নেই। তবে এ ফসলটির চাষাবাদ কেউ করতে চাইলে কৃষি বিভাগ থেকে সর্বদা সু-পরামর্শ দেওয়া হবে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023