|
Date: 2023-07-03 20:15:35 |
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের জের ধরে জামালপুরের বকশীগঞ্জে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার এজাহার নামনীয় ২২ আসামির মধ্যে ৪ আসামিকে র্যাব গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করলেও গত ১৭ দিনে মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে পুলিশ। তবে মামলা দায়েরের আগেই ৮ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ওই ৮ জনকে কারাগারে আটক রাখা হলেও তাদেরকে মামলায় আসামি করা হয়নি। ফলে এজাহার নামনীয় ১৭ আসামিকে মামলা দায়েরের ১৭ দিন পরেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। নিহত সাংবাদিক নাদিমের গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নিতে গিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলেও আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে নাদিমের স্বজনরা।
জানা যায়, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি এবং একাত্তর টেলিভিশন ও মানবজমিন পত্রিকার বকশীগঞ্জ সংবাদদাতা সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম গত ১৪ জুন হামলার শিকার হয়ে ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন ১৫ জুন মারা যায়। ঘটনার ৪ দিন পর ১৮ জুন সাংবাদিক নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ২২ জনের নামোল্লেখে অজ্ঞাত আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে বকশীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে মামলা দায়েরের আগে ওইদিন ভোরে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান এজাহার নামনীয় আসামি মাহমুদুল আলম বাবু, জাকিরুল ও মনিরুলকে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রামের একটি বাড়ি থেকে এবং রেজাউলকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে যায় র্যাব। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৭ নম্বর আসামি একমাত্র গোলাম কিবরিয়া সুমন। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে পুলিশ কফিল, ফজলু মিয়া, শহী, মকবুল, ওহিদুজ্জামান, তোফাজ্জল ও আইনাল নামে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে ৪ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করলে জামিন নামঞ্জুর করে বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। সেই থেকে তারা কারাগারে। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুকে পুলিশ আদালতে সোর্পদ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠায়।
গত ২০ জুন উপজেলার নীলাখিয়া ইউনিয়নের গোমেরচর গ্রামে নিহত সাংবাদিক নাদিমের বাড়িতে তাঁর পরিবারের সার্বিক খোঁজখবর নিতে যান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ। এসময় তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের আইনের আওতায় আনাসহ হত্যাকাণ্ডের ন্যায় বিচারের আশ্বাস দেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান বাবুর ছেলে এহাজার নামনীয় আসামি ফাহিম ফয়সাল রিফাত (২২), এমডি রাকিবিল্লাহ রাকিব (২৮), আমর আলী মেম্বার (৫৫), শরীফ (২২), স্বপন মণ্ডল (৩৫), মিলন (২১), লিপন (৩০), শেখ ফরিদ (৩০), ওমর ফারুক (৩২), রুবেল (৩৫), সুরুজ (৪০) বাদশা মিয়া (৩৬), আবু সাঈদ (২৮), ইমান আলী (৩৩), সোলাইমান হক (৪০), সাবেক মেম্বার রফিকুল (৫০) এবং আমানুল্লাহ (৩০) এখনও অধরা।
আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় ও জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা ইউএনও'র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এবং থানার ওসির মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মরক লিপি দিয়েছেন। বকশীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম শাহীন আল আমীন বলেন, আসামিরা দ্রুত গ্রেপ্তার না হলে মামলার বিচার কার্যক্রমে অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। তাই দ্রুত বিচারের স্বার্থে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার জরুরি। নিহত সাংবাদিক নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন, 'এজাহার নামনীয় মাত্র একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে ১৭ আসামি। দীর্ঘ সময়েও আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে শঙ্কা হচ্ছে।' বকশীগঞ্জ থানার ওসি মো. সোহেল রানা বলেন, 'মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।' জামালপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (ওসি) আরমান আলী বলেন, 'পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারবো।' জামালপুর পুলিশ সুপার (এসপি) নাছির উদ্দিন আহমেদ মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক অগ্রগতি হয়েছে।'
© Deshchitro 2024