|
Date: 2023-07-06 08:03:46 |
সোয়া দু’শ বছরের পুরনো মোঘল শাসনামলে নির্মিত শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া লস্কর ‘খান বাড়ী’ জামে মসজিদটি আজো ঠাঁই দাড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। মসজিদটি আজো অক্ষত অবস্থায় থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য দর্শনার্থী মসজিদটি দেখতে আসেন। মসজিদটি বাইরে থেকে বিশাল আকৃতির দেখা যায়। এর শৈল্পিক কাজ অত্যন্ত নিখুঁত ও মনোমুগ্ধকর। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের উত্তর এবং দক্ষিণ পাশে রয়েছে দুটি জানালা। মসজিদের ভিতর ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১০ জন করে মোট ৩০ জন মুসল্লি এক সাথে নামায আদায় করতে পারেন। মসজিদের আকার বা পরিধি যাই হোক না কেন মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করার সময় নিজেকে মনে হয় দু’শ বছর পেছনে চলে গেছি। কেমন জানি এক অদ্ভূত অনুভূতি। স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খান বাড়ী’র মসজিদটি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ঘাগড়া লস্কর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এই মসজিদের নাম ঘাগড়া লস্কর খান বাড়ী জামে মসজিদ হিসেবেই পরিচিতি লাভ করে। শেরপুর জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারনা করা হয়, মোঘল সম্রাট আমলে বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁ’র বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটির দরজার উপর খোদাইকৃত মূল্যবান কষ্টি পাথরের উপর খোদাই করে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল উল্লেখ করা হয়েছে হিজরি ১২২৮ বা ইংরেজী ১৮০৮ সন। মসজিদটির গঠন পদ্ধতি ও স্থাপন কৌশল শিল্পসমৃদ্ধ ও সুদৃশ্য। এর ভিতরে রয়েছে দুটো সুদৃঢ় খিলান। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ উভয় দিকেই সমান। এর অভ্যন্তরে ভাগ ৩০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট। মসজিদের মধ্যখানে বড় গম্বুজের চারপাশ ঘিরে ছোট-বড় দশটি মিনার। এর মধ্যে চার কোণায় রয়েছে চারটি। মসজিদে দরজা রয়েছে মাত্র একটি। ভিতরে মেহরাব ও দেয়াল অঙ্কিত রয়েছে বিভিন্ন কারুকাজের ফুলদানী ও ফুল। তৎকালীন খান বাড়ীর দেলোয়ার খান নামের এক ব্যক্তি ৫৮ শতক জায়গার উপর মসজিদটি ওয়াকফ করে দেয়। এর মধ্যে মসজিদটির মূল ভবন ও বারান্দা রয়েছে ১৭ শতকের উপর এবং ৪১ শতকের উপর জমিতে রয়েছে কবরস্থান। মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ মোঃ রুহুল আমীন জুম্মাসহ ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ান। গত প্রায় ১৫ বছর আগে জাতীয় যাদুঘর এ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব গ্রহণ করে। কিন্তু একজন কেয়াটেকার নিয়োগ, একটি সতর্কবাণী লাগানো ও দায়সারা ভাবে বছরে একবার রং করা ছাড়া আর কোন ভূমিকা পালন করেনি। মসজিদটির মেঝে দেবে যাচ্ছে, দেয়ালে ফাটল ধরছে। দ্রুত সংস্কারের ব্যবস্থা না নিলে কালের এ নীরব সাক্ষী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে স্থানীয়রা আশংকা করছেন। ইতিমধ্যেই শেরপুরের জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার এ মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি এ মসজিদটি সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে পত্র প্রেরণ করেছেন এবং দাপ্তরিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে এই মসজিদটি সংস্কার করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
© Deshchitro 2024