কক্সবাজারে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর নির্যাতন-নিপীড়নে কথা শুনলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান।


আজ বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপজেলার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের ১ নম্বর ক্যাম্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর সেখান থেকে ৯ ও ১২ নম্বর ক্যাম্পে যান তাঁরা।


কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে এসেছেন নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।



লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে দেখা করা রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা জানান, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা কীভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, জাতিগত নিধন, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া ও গণহত্যা চালানোসহ সর্বশেষ বাংলাদেশে কীভাবে পালিয়ে এসেছিল তার বর্ণনা শোনেন তাঁরা। এ সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কয়েকজন নারী সদস্য উপস্থিত ছিলেন এবং তাঁরাও মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা নারীদের অত্যাচার-নির্যাতন ও ধর্ষণের বিস্তারিত বিবরণ দেন।


এ ছাড়া প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতিও জানতে চেয়েছেন বলে জানান রোহিঙ্গা প্রতিনিধিরা। বিকেলে আইসিসি প্রতিনিধিদল কক্সবাজার ফিরে আসে।


রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবাইর জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর তাঁরা কীভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তা তুলে ধরেছেন। তাঁরা সেখানে ১৩ জন উপস্থিত ছিলেন। আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপর দুপুরে ৯ ও ১২ নম্বর ক্যাম্পেও কয়েকজনের কাছে নির্যাতন-নিপীড়নের বর্ণনা শোনেন।



কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ খালিদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় সেখানে অন্যদের যাতায়াত সীমিত রাখা হয়। পরে তিনি ১২ নম্বর ক্যাম্পে আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা কী বলেছেন তা তাঁর জানা নেই বলে জানান।


এর আগে গতকাল (বুধবার) বিকেল পৌনে ৫টায় ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছান আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি। এরপর শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন।


বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ-পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সেবা ও খাদ্যসহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি।


উল্লেখ্য, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরে আট লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024