|
Date: 2022-09-13 09:34:30 |
রাস্তার পাশে বাঁশের মাচায় জীর্ণশীর্ণ একটি ছোট দোকান চালিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করছেন জীবন সায়াহ্নে থাকা ৭০ বয়সী বিধবা আসমা বেগম। তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই দোকান।দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির বাজারে দোকান আর আগের মতো চলে না। তাঁর সংগ্রামী জীবন নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর পাশে দাঁড়িয়েছেন এক মানবিক ব্যবসায়ী সাদ্দাম।
সোমবার সকালে তিনি ওই বৃদ্ধাকে সাতটি ছাগল কিনে দিয়েছেন স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য।
আসমা বেগম গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার দক্ষিণ পাকুল্লা গ্রামের আসর উদ্দিনের স্ত্রী।প্রায় ৪০ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন।নেই কোনো সন্তান। একাকিত্ব ঘুচাতে একটি মেয়েকে দত্তক নেন। বিয়েও দিয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু সেই সংসার টেকেনি। অভাবের সংসারে খেয়ে-পরে বাঁচতে রাস্তার মোড়ে বাঁশের মাচায় চিপস, চানাচুর আর বিস্কুট বিক্রি করেন আসমা বেগম। তা দিয়েই চলে মা ও মেয়ের বেঁচে থাকার সংগ্রামী জীবন।
ছাগলগুলো পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন আসমা বেগম বলেন, ‘পরশু দিন আঁধবেলা দোকান খুইলা ২০০ টেহার (টাকা) মাল (পণ্য) বেচছিলাম। আইজকা সকাল থাইক্যা দুপুর পর্যন্ত দোকান খুইলা এক টেহাও বেচা হারিনাই (বিক্রি করতে পারিনি)। ছাগলডি পাইয়া মেলা উপকার হইছে। এহন ছাগলডি পাইল্যা বড় করমু। ছাগালডি বাচ্চা দিলে অনেক ছাগল হইব। তা-ই দিয়া অনেকদিন চলতে পারমু। এর আগে দুইডা ছাগল আছিল, টেহার লাইগা বেইচা দিছিলাম। আর টেহা জোগাড়ও করতে পারি নাই, ছাগলও কিনা পারি নাই।’
আসমা বেগমকে নিয়ে গত ৬ জুন প্রথম আলোর অনলাইনে ‘বাঁশের মাচায় বৃদ্ধার বেঁচে থাকার লড়াই’ শিরোনামের একটি সংবাদ প্রাকশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার ট্যুরিজম ও রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেনের নজরে আসে। সংবাদ প্রকাশের পরদিনই তিনি ওই বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেন এবং কিছু ছাগল কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যেই প্রতিশ্রুতি সেই কাজ, সোমবার সকালে সাদ্দাম নিজেই উপজেলার ফুলবাড়িয়া বাজার থেকে সাতটি ছাগল ক্রয় করেন। কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই বৃষ্টি ও কাদা মাড়িয়ে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে গিয়ে ছাগলগুলো দিয়ে আসেন।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘মানুষকে অনেক বেশি হয়তো উপকার করতে পারি না, কিন্তু আমার সাধ্যমতো উপকার করার চেষ্টা করি। প্রথম আলোর অনলাইনে প্রকাশিত সংবাদটি চোখে পড়লে আমি তাঁর খোঁজখবর নিই। যাতে স্থায়ীভাবে কিছু করতে পারেন, সেই চিন্তা থেকে ওই বৃদ্ধাকে সাতটি ছাগল কিনে দেওয়া হয়েছে।’
আসমা বেগম জানান, এক-দেড় মাস আগে কালিয়াকৈর বাজার থেকে অনেক লোক তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। কালিয়াকৈর গ্রুপ নামের সংগঠনটি তাঁকে ১০ হাজার টাকাও দিয়ে গেছে।
আসমা বেগমের প্রতিবেশী আকলিমা আক্তার বলেন, তাঁর স্বামী নেই, আয়ের কোনো পথ নাই। দোকান করে মাসে এক-দেড় হাজার টাকা আসে, তা-ই দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে। ছাগলগুলো পাওয়াতে তাঁর ভালো হয়েছে।
© Deshchitro 2024