|
Date: 2023-07-18 04:42:42 |
‘বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় বায়ুকে দূষণমুক্ত রাখার বিকল্প নেই। বায়ুদূষণ রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও জ্বালানি নিরাপত্তায় নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।’
সোমবার (১৭ জুলাই) সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত ‘বায়ুমান এবং জ্বালানি উন্নয়নে নবায়নযোগ্য শক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বিআইপি’র প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমনের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের (আইএবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল এবং বিআইপির উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, দেশে নানারকম উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। এ কারণে বায়ুদূষণ হচ্ছে। এটা উন্নত দেশগুলোর ক্ষেত্রেও হয়। উন্নয়নকাজ শেষ হলে দূষণ কমে যাবে।
তিনি বলেন, বায়ুদূষণের জন্য শুধু সরকার কিংবা মন্ত্রণালয় দায়ী নয়। সাধারণ মানুষ যতক্ষণ না সচেতন হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার একা বায়ুদূষণ কমাতে পারবে না। ব্যক্তি পর্যায়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আগ্রহ দেখাতে হবে, দেশের নাগরিক হিসেবে সবাইকে সবার অবস্থান থেকে বায়ুদূষণ কমাতে সচেষ্ট হতে হবে এবং সরকারকে বায়ুমান ও জ্বালানির উন্নয়নে নির্ধারিত আইন প্রয়োগে সহযোগিতা করতে হবে। নিজেরা সচেতন হলে সরকারকেও বায়ুদূষণ রোধে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে এককভাবে পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করে শেষ করতে পারবে না। এর জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয়কেও সাহায্য করতে হবে। বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের স্ট্যান্ডার্ড একই হওয়া উচিত। তবে দেশের পরিবেশের সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিজস্ব একটি রোডম্যাপ ও কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০২২কে অকার্যকর ভাবার কোনো সুযোগ নেই। এতে কিছু ত্রুটি আছে, তবে আমাদের বিধিমালার ভালো দিকগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকারি অন্যান্য সংস্থার তুলনায় আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর কিছুটা হলেও কাজ করে। কিন্তু তাদের বড় সংকট রাজনৈতিক সমর্থনের অভাব। রাজনৈতিক সমর্থন পেলে ভালো কাজ করার নজির এ সংস্থাটি আগেও দেখিয়েছে।
বৈঠকে মূল বক্তব্য দেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, বায়ুমান ও জ্বালানি উন্নয়নে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ শক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউজ গ্যাস ও বায়ুর দূষক নিঃসরণ ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা।
আইএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, আমাদের অনেক বিধিমালা আছে, কিন্তু সমন্বয় নেই। আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বিধিমালাগুলোতে নিশ্চিত করতে হবে। দেশপ্রেম সবার মধ্যে রয়েছে এখন প্রয়োজন এ দেশপ্রেমের সমন্বয়।
বিআইপি’র উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আকতার মাহমুদ বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের মাধ্যমে বায়ুমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণা সংগঠন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে একযোগে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য শক্তিকে ব্যবসায়ীদের পন্য হিসেবে পৌঁছাতে পারলে এটির প্রসার করা সম্ভব। সরকারকে বায়ু দূষণরোধে আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে সতেষ্ট হতে হবে তা নাহলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছুই দেখে যেতে পারবো না।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল বলেন, বায়ুদূষণ বর্তমানে বাংলাদেশে একটি মারাত্নক মানবিক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। এ বিপর্যয় থেকে পরিত্রাণ পেতে জৈব জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করে নবায়নযোগ্য শক্তিকে প্রমোট করতে হবে। বাংলাদেশে সৌর শক্তির অনেক সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য আমাদের আচরণগত ও মানসিককতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ফুরিয়ে আসছে। দামও দিন দিন বেড়েই চলেছে। কিন্তু নবায়নযোগ্য জ্বালানি শেষ হবে না। বরং নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কারের ফলে এর দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয় কমে আসছে। আইন ও বিধিমালাগুলোতে অনেক গ্যাপ আছে, এই ঘাটতিগুলোকে সমাধান করে বিধিমালা গুলোকে যুগ উপযোগী করতে হবে।
© Deshchitro 2024