|
Date: 2023-07-18 06:05:16 |
সংসদ সদস্য এম. এ লতিফ বলেছেন, আমাদের কিছু আমলা বঙ্গবন্ধুকন্যা যেটা চায় তার উল্টোটা করছেন। আমার মনে হয় জ্ঞানের স্বল্পতার জন্য তারা এরকম করেন। তারা ব্যবসায়ীদের যে চোখে দেখেন, তাদের এই চোখের দৃষ্টি সোজা করতে হবে। এ দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ব্যবসায়ীরা এবং আমদানি কমানোর চেষ্টা করে ব্যবসায়ীরা। যাতে বৈদেশিক মুদ্রা চলে না যায়। ব্যবসায়ীরা এখানে নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন করছেন। আবার এসব পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন।
তিনি বলেন, ট্যাক্স, ভ্যাট এবং শুল্ক দেয় ব্যবসায়ীরা। আর কথা বলেন সরকারি ওই কর্মচারীরা। যাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কোনো অবদান নেই। এখন সবগুলো কমিটি কর্মচারী দ্বারা গঠিত হয়। আমি জিজ্ঞাস করেছি, আপনারা সাতজনের কমিটি করলেন যারা ট্যাক্স দেন তারা কোথায়? তারা বলে সরকারের পক্ষে আমরা। আমি বলেছি, তোমরা সরকার নও, তোমরা সরকারের অংশ। তাদের এমন আচরণ হয়েছে আমাদের নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে, সেটি পলিটিক্যাল হোক কিংবা ট্রেড বডির কারণে হোক।
সোমবার (১৭ জুলাই) রাতে হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে এফবিসিসিআইয়ের (২০২৩-২৫) নির্বাচনকে সামনে রেখে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির যাত্রায় বন্দর নগরীর তাৎপর্য শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেল।
এ সময় এম. এ লতিফ ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদ প্যানেলের সদস্যদের পরিচিত করিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা আশা করব আগামী দিনে ব্যবসায়ীদের অপমানিত করা, খাটো করে দেখা এ চোর হিসেবে গণ্য করার দুঃসাহস যে কর্মকর্তা দেখাবেন, এই এফবিসিসিআই, চট্টগ্রাম চেম্বারসহ সমগ্র দেশের ব্যবসায়ীরা ওই অফিসারকে ঘেরাও করবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসায়ীদের ডানায় ভর করে। সরকারি কোনো কারখানায় লস দেওয়ার জন্য এবং সরকারি কোষাগারের লাখ লাখ হাজার হাজার কোটি লস করার জন্য কোনো কর্মকর্তাকে আজ পর্যন্ত কারাগারে যেতে হয়নি। তাদের বাড়িঘর নিলাম হয়নি। ব্যাংক তাদেরকে খেলাপি হিসেবে ঘোষণা করেনি। এফবিসিসিআইয়ের ভবিষ্যৎ নেতারা ব্যবসায়ীদের এসব বিষয় দেখবেন। আপনার ব্যবসায় ক্ষতি হবে এবং ইনকাম ট্যাক্স অফিসার আসবে এ ভয় যদি থাকে এবং আপনার সীমাবদ্ধতা নিয়ে সারা দেশের ব্যবসায়ীদেরকে ক্ষতি করবেন না। আপনার পিঠ বাঁচানোর জন্য সারাদেশের ব্যবসায়ীদের বেত্রাঘাত করাবেন না। এরকম যাদের ইচ্ছা আছে তাদের নেতৃত্বে আসার দরকার নেই।
তিনি বলেন, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে, যেটি অনেক দেশে নেই। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ম্যাজিকের মতো ঘুরাতে থাকবে। আমাদের এখন আর ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরের প্রয়োজন হবে না। আমাদের জাহাজগুলো কনটেইনার নিয়ে সরাসরি আমেরিকা-ইউরোপসহ যেকোনো গন্তব্যে যাবে। মাতারবাড়িতে পাওয়ার হাব হয়েছে। এখানে একটি নয় তিনটি পাওয়ার প্ল্যান্ট হতে যাচ্ছে। দুটি মোটামুটি উৎপাদন পর্যায়ে চলে এসেছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের ভেলকিবাজের জন্য অতীতে, অপারেশনের টেবিলে ডাক্তাররা মোমবাতি জ্বালিয়ে কাজ করেছে। এটি আমরা দেখেছি। তখন বিদ্যুৎ একবার আসত একবার যেত। কিছুদিন আগে একটু বিদ্যুতের সংকট হয়েছিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারাবিশ্বের অর্থনীতিকে এক ধরনের চাপে ফেলে দেয়। এরপরও বাংলাদেশের অবস্থা ভালো আছে। অনেকে বলেছে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে। কিন্তু হয়নি।
সরকার উন্নয়নের প্রসঙ্গে এমপি লতিফ বলেন, অতীতে আমরা অনেক উন্নয়নের কথা শুনেছি কিন্তু চোখে কেউ জোয়ার দেখেনি এখন উন্নয়নের কথা কাউকে বলার দরকার হচ্ছে না। ফ্লাইওভার দিয়ে গাড়ি উড়ে যাচ্ছে, কর্ণফুলীর তলদেশ দিয়ে ঢুকে ইঁদুরের মতো আরেক পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি প্রার্থী মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যবসার জন্য সবচেয়ে জরুরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি না থাকলে আমরা ব্যবসা করতে পারি না। আমাদের অর্থনীতি এগিয়ে যায় না। কলকারখানা ঠিকভাবে চলে না। এসবের কারণে আমরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি। প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামের জন্য এক লাখ কোটি টাকার মতো বরাদ্দ দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু টানেল, মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্র বন্দর, ইকোনমিক জোন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন সড়ক হচ্ছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামে ভবিষ্যতে কত কিছু হবে সেটা আমরা আন্দাজ করতে পারছি না।
তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে ব্যবসায়ীরা যে দাবি দিয়েছেন সেটি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য আমি চেষ্টা করব। ব্যবসায়ীদের একটি দাবি ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ৮ লেন করা এবং এক্সপ্রেস লেন করা। এটি হলে দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যাওয়া যাবে এবং দিনে দিনে কাজ সেরে আবার ফিরে আসা যাবে। নির্বাচিত হলে এ কাজটি করার জন্য সুচারুভাবে চেষ্টা করব। ওজন স্কেলের বিষয়টা নিয়ে আমরা কাজ করব। কারণ এটি অপসারণ না হলে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হতে থাকবে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ার টেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিনের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন- কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান এ৬এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
© Deshchitro 2024