বিসিএস ক্যাডারের মন ভাল নেই!!!

কাজের অনেক চাপ, নড়াচড়ার সময় পর্যন্ত নেই। 

এদিকে নন-ক্যাডারের আফসোসের শেষ নেই! অল্পের জন্য ক্যাডারটা মিস হয়ে গেল। ক্যাডারই হতে পারলাম না জীবনে!!

এডমিন ক্যাডার ভাবতেছে পুলিশ ক্যাডার ভাল আছে! আর পুলিশ ক্যাডার ভাবছে ধ্যাত্তারি! নিজের জীবন বলতে কিছু নেই! যখন তখন ডিউটি!

ডাক্তার ভাবছে ইঞ্জিনিয়ার হতে পারলাম না। জীবনটা হয়তো আরও সুন্দর হতো! এই কাঁটাছেড়া করতে করতে জীবনটা শেষ! ইঞ্জিনিয়ারের মনটাও বেজায় খারাপ! একটা প্রেসক্রিপশন লিখেই ডাক্তার বন্ধু মাসে লাখ টাকা বসে থেকে কামিয়ে নিচ্ছে!

এদিকে আবার বেসরকারি কর্মকর্তার হতাশার শেষ নেই! মাসে ৬ ডিজিট ব্যাংক একাউন্টে ঢুকলেও ব্যাংকারদের মতো চাকরীর নিশ্চয়তা নেই!

গাড়ি বাড়ির নাম মাত্র ইন্টারেস্টে লোন নেই!

ব্যাংক কর্মকতার আহাজারি আবার আকাশ সমান!

সকালে বের হবার সময় বউ ঘুমিয়ে থাকে, বাসায় যাবার পরও দেখে বউ আবার ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে! সময়ই মিলছে না জীবনে নতুন বউকে দেবার মতো!

জুনিয়র কর্মকতা ভাবছে এসব আনস্মার্ট লোকজন কিভাবে একটা অফিসের বস হয়! বসের বেজায় মেজাজ খারাপ কি সব লোকজন অফিসে কাজ করে কাজের কোন আউটপুট নাই!

ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া বন্ধুটারও ভীষণ মন খারাপ! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্সটা পেলামই না!

এদিকে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুটিও ভাল নেই! বন্ধুরা মন মতো ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে! কিন্তু আমি পছন্দের ডিপার্টমেন্টটা পেলাম না!

যাক গে! অন্যদিকেও একই কান্ড!

জ্যামে বসে বাসের হেল্পার ভাবছে ড্রাইভার হতে না পরলে এই জীবনে আর কোন সুখ আসবেনা! হুদায় সিটে বসে ড্রাইভার ফালপাড়ে! বাসের ড্রাইভারও হতাশ! এতো বছর ড্রাইভারি করে আর কি হলো! পরের গাড়ি চালিয়ে দিন যাচ্ছে! নিজের যদি একটা বাস থাকতো!!

এদিকে বাসের মালিকও ভাল নেই!

তার মাত্র ৩ টা বাস চলে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে!

অথচ রহিম ভাইয়ের ১৫ টা চলছে দিব্বি! কত সুখে আছে তিনি!

সাংবাদিক ভাইয়ের মনটাও খারাপ! এই পেশায় কি আর জীবন চলে! নিজের যদি একটা পত্রিকা থাকতো তাও না হয় একটা দাপুটে জীবন হতো! পত্রিকওয়ালা ভাইয়ের দিন ভাল যাচ্ছেনা, এই পত্রিকা নাকি মানুষ এখন আর পড়েনা! লাভ নাই!

যাকগে টিভিওয়ালা হয়তো ভাল আছে! সেকি!  তারও  মনটাও ভীষণ খারাপ! শুধু টিভি চ্যানেল দিয়ে কি আর হয়রে ভাই! একটা শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে না পারলে হচ্ছে কই? অন্তত একটা শপিং মলও তো করা লাগে!

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও ভাল নেই। অভাব অনটনে অবস্থা নাকি খুবই খারাপ! এই  কয়টাকা বেতনে কি আর দিন চলে! তার থেকে পিএইচডি করতে গিয়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়াই ভাল ছিল!

ওদিকে পিএইচডি করতে যাওয়া ভাই-ব্রাদার স্বপ্নে বিভোর! পিএইচডি শেষ করেই নেক্সট সার্কুলারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে না পারলে এই জীবন বৃথা!

নাহ ভাই!

বহু বড় মানুষের মন খারাপ নিয়ে মেলা কথা হয়ে গেছে! থাকগে, যাকগে!

কিন্তু এদিকে আবার করিমেরও মন খারাপ! সুন্দরী একটা বউ পেয়েছে ঠিকই কিন্তু মাথায় কোন বুদ্ধিশুদ্ধি নাই! মফিজ বেচারাও মহাচিন্তায়! কোটিপতি বাপের একমাত্র মেয়ে বিয়ে করলাম কিন্তু করিমের মতো সুন্দরী বউ পেলাম না! 

সাদিয়া খুব চাপে আছে! পাশের বাসার ভাবি গতকালই একসেট নতুন গহনা কিনেছে! অথচ তার হাসবেন্ড সেই কবে একটা হোয়াইট গোল্ডের গলার হার কিনে দিয়েই শেষ! এই জীবন রেখে আর কি হবে!

তানিয়ার মেজাজ বড্ড গরম! একসেট গহনা কিনে দিলেই হয়ে গেল? বাসায় ৪ জন সদস্য অথচ গাড়ি মাত্র একটা। এত কষ্ট করে জীবন চলে!?

নাহ! কোন ভাবেই চলেনা। এতো কষ্ট করে কারোরই আসলে বেঁচে থাকারই দরকার নেই!

সমাজে যাদের কিছুই নেই,

বড় কোন আশা নেই,

তাই আশাহত হবার সুযোগ নেই,

জীবন যাবার ভয় নেই,

জীবনে হতাশার বালাই নেই,

বন্ধুর উন্নতিতে মন খারাপ নেই,

রেষারেষি নেই,

হেঁটে বা রিক্সায় অফিস যেতে আফসোস নেই, এসির জন্য কষ্ট নেই,

রোদে পুড়তে ভয় নেই,

ত্বক হারাবার টেনশন নেই,

জীবনযুদ্ধে পরাজয়ের ভয়-ডর নেই

বরং মায়ের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটানোর সাহস আছে,

বাবার হাতে মাসের শুরুতে হাত খরচ গুজে দেবার কলিজা আছে,

বন্ধুর ভরসা হয়ে থাকার সুযোগ আছে,

সুস্থ সবল শরীর মন আছে, 

এবং দিনশেষে জীবনের সকল সিচুয়েশানে আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সাহস আছে!!!

জীবনটা ছোট্ট জটিল এবং সুন্দর বলে মুহূর্তগুলোকে উপভোগ করার কৌশল জানা আছে তারাই বরং ভাল আছে!!!

জীবনটা আসলেই এমন- "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস"

লেখক :প্রণব মন্ডল, কবি এবং শিক্ষার্থী ;খুলনা ইউনিভার্সিটি।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024