আমি যে কিছুই বুঝতে পারিনি,তা কিন্তু নয়। সব বুঝেও যখন তোমার সবটা মেনে নিতে চেয়েছি,তখনই তুমি অন্য পথ বেছে নিয়েছো। 

সব জেনেও সহ্য করে যেতাম বলে এই নয়,আমি বোকা ছিলাম তখন। আমি আসলে তোমাকে হারাতে চাইনি।বিশ্বাস করো;আমি তোমার অবহেলা,উদাসীনতা,হুট করে বদলে যাওয়া মেনে নিয়েই থাকতে চেয়েছি।কিন্তু তুমিই তো রাখলে না!সবকিছুর সীমা অতিক্রম করে গিয়ে যখন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করলে,তার ঠিক ঘন্টা খানেক আগেও আমি ছটফট করেছি,কিন্তু তুমি সাড়া দাওনি!

তুমি যে বিরক্ত হয়েও বিরক্তি প্রকাশ করতে না।

রাতভর কথা বলা মানুষটাই কিনা আমি গভীর হওয়ার পর গভীর ঘুমে যায়!হাহাহাহাহা....

কি আজব,তাই না?

যে তুমি আমায় রাত জাগা শেখালে,সেই তুমিই কিনা একা ঘুমাও,একা একা স্বপ্ন দেখো।অথচ আমি?তোমার সেই পুরোনো অভ্যেসের কাছে প্রতি রাতেই হেরে যাই।দুচোখে ঘুম নেই!

কি ভেবেছিলে?

তোমার মতো করে আমিও সম্পর্কটাকে অবমূল্যায়ন করবো?অবসরের বিনোদন নিতে তোমায় ব্যবহার করবো?শুধুমাত্র নিজের প্রয়োজনে তোমাকে চাইবো?

নাহ...

এতটা অকৃতজ্ঞ হয়ে জন্মাইনি আমি,জানো তো?

সম্পর্কের সম্মান আর গুরুত্ব দিতে জানি বলেই আমি নিজেকে সরিয়ে এনেছি।তার মানে এই নয়,আমি কিছুই বুঝিনি তখন।সব বুঝেও নীরব ছিলাম।কেন জানো?

ঐ যে বললাম,তোমাকে হারাতে চাইনি।

সত্যি বলতে তোমার বিকল্প কেউ ছিল না আমার,আজও নেই।তাই সবকিছু মেনে নিয়েছিলাম।সম্পর্কের শুরুতে তোমার পাগলামি,দিনরাত এক করে সময় দেয়া-কথা বলা,দেখতে চাওয়া।অথচ দেখো,সেই তোমার এসব পাগলামি দেখে যখন আমি নিজেই এমন পাগলামি শুরু করলাম,ঠিক তখনই তুমি লাপাত্তা!

তোমার আর সময় হয়ে ওঠে না আমার জন্য,তোমার সময় তখন সংকুলান!

আচ্ছা?এই যুগে কখনো শুনেছো,একটা ছেলে অপর একটা মেয়ের কাছে সময় ভিক্ষা চেয়ে চেয়ে অভিমান আর অভিযোগে নিঃশেষ হয়ে যায়?শুনোনি তো?শুনবেই বা কেন?তোমার উদ্দেশ্যই তো ছিল কেবল অবসরের খানিকটা সময় একা না থাকা,একা অনুভব না হওয়া।

তাহলে প্রতিনিয়ত তোমার কাছে কেন আমার সময় চাইতে হতো,বলতে পারো?কেন বড় বড় টেক্সট থেকে শুধু হ্যাঁ,হুম,না অবধিই শেষ হতো কনভারসেশন?এ ছাড়া আমাদের কি আর কোনো কথা ছিল না?নাকি দূরত্বে সবকিছু সময়ের সাথে সাথে শেষ?

তোমার ব্যস্ততা মেনে নেয়ার পর যখন তোমার অসংখ্য অজুহাত দাঁড় করালে,তখন আর নিজেকে তোমার সংস্পর্শে রাখা টাকে আমি যৌক্তিক মনে করিনি। আত্মসম্মানবোধ কার না আছে?

চলে এলাম আমি।

তোমার অজস্র সময়ের মাঝেও যখন আমার সাথে মন দিয়ে কথা বলার মতো একটা মিনিট সময় হয় না,তখন শুধু শুধু নিজেকে অপমান করার তো কোনো মানে নেই।

আমাদের সম্পর্কে ইতি টানাতে আক্ষেপ কিংবা আফসোস তোমার জন্য নয়।তুমি তো এটাই চেয়েছিলে,যত সহজে আমার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কোনো দোষ না রেখে।

আরে....

যাকে ভালোবাসতে পেরেছি,তাকে মুক্তি দিতে পারবো না?

শেষমেশ একটা কথা কি জানো?

প্রেমিকা কিংবা প্রেমিক;কখনো নিজের হয় না,যতক্ষণ না সে সম্পর্কের পূর্ণতা পায়।একমাত্র তোমার কারণেই  আমাদের পূর্ণতা ছাড়াই এ গল্পের সমাপ্তি ঘটলো।শুরুটা তো তুমিই করেছিলে,আর শেষটা যে আমাকেই করতে হলো!শুধুমাত্র তোমার ভালোর জন্য–তোমার ভালো থাকার জন্য।

আর অভিশাপ? 

সে না হয় মনের গহীন কোণে জমা রইলো।যদি ভুল করে মনের অজান্তেই মন থেকে বেরিয়ে যায়,তবে ক্ষমা করে দিও....

লেখক :প্রণব মন্ডল, কবি এবং শিক্ষার্থী।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024