আজ ০৫ আগস্ট (শনিবার) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জ্যেষ্ঠ পুত্র, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে সকাল ১১টায় শহিদ তাজউদ্দিন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। 

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন শেখ কামাল। তিনি ঢাকা কলেজে পড়াকালীন ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ’৬৬ এর ছয়দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হলে শেখ কামাল মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ মাতৃকাকে বাঁচাতে এবং স্বাধীনতার জন্য জেনারেল এমএজি ওসমানির এডিসি হিসেবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন তিনি মা, ভাই-বোন কারও চিন্তা করেননি।

উপাচার্য বলেন, শেখ কামাল অত্যন্ত সাংস্কৃতিক মনা একজন মানুষ ছিলেন। তিনি ছায়ানটের সদস্য ছিলেন। সব অনুষ্ঠান তিনি রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ দিয়ে শুরু করতেন। পাকিস্তান সরকার যখন রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধ করেছিলো তখন তিনি এর অহিংস প্রতিবাদ করেছিলেন। এটিকে জাতীয় সঙ্গীত করার পেছনেও তাঁর অবদান রয়েছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অবদানের জন্য শেখ কামালকে আমাদের স্মরণ করতে হবে। তিনি নিজে একজন অলরাউন্ডার ক্রিকেটার ছিলেন, ফুটবল ও বাস্কেটবল খেলতে তিনি পছন্দ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করেন। আবাহনী ক্লাবের মাধ্যমে তিনি দেশের যুবকদের খেলাধুলা আগ্রহী করে সংগঠিত করেন। সাধারণ মানুষের জন্যও তার চিন্তা-ভাবনা ছিলো অনন্য। তিনি রাষ্ট্রপতির ছেলে হয়েও আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। 

তিনি আরও বলেন, অপপ্রচার দ্বারা আমরা খুব সহজেই প্রভাবিত হই। তার জ্বলন্ত উদাহরণ শেখ কামাল। তাঁকে ইতিহাসে অপপ্রচার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ইতিহাসকে নিজেদের ইচ্ছামতো লেখা হয়েছে। মানুষের মাঝে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে এই অপপ্রচারের জবাব দেওয়ার, প্রতিবাদ করার।

উপাচার্য বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে অভিলক্ষ্যে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তা বাস্তবায়নে শেখ কামালের মতো আদর্শিক গুণাবলী সম্পন্ন যুবকদের প্রয়োজন। যা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে তৈরি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

উপাচার্য বক্তব্যের শুরুতে ’৭৫ এর ১৫ আগস্টে শহিদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদ, জাতীয় চার নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী জাতীয়ভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে দিবসটি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত করায় উপাচার্য সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুসের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মো. ওয়ালিউল হাসানাত, কলা ও মানবিক স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. রুবেল আনছার, খানজাহান আলী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর মো. শরীফ হাসান লিমন, সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুল হাসান সিদ্দিকী, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উপ-রেজিস্ট্রার দীপক চন্দ্র মন্ডল, সেকশন অফিসার মোস্তফা আল মামুন প্রবাল, কর্মচারী মো. তরিকুল ইসলাম। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধানসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

এর আগে সকাল ১০.৩০ মিনিটে শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শহিদ তাজউদ্দিন আহমদ প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে বৃক্ষরোপণ করে কর্মসূচির উদ্বোধন উপাচার্য। এসময় ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত)সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে বাদ জোহর দিবসটি উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও প্রশাসন ভবন সংলগ্ন জামে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024