টেকনাফে র‌্যাব-১৫ এর সদস্যরা অভিযান চালিয়ে পৌর এলাকা, সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে কৌশলে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা রেখে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় এবং মানব পাচার চক্রের মূলহোতা মুহিত কামাল এবং সাইফুলসহ ৬জনকে গ্রেফতার করেছে। 


সুত্র জানায়,গত ৭ আগস্ট সকাল ১১টারদিকে কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর চৌকস একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় অপহরণ চক্রের চকরিয়া-রামু-ঈদগাঁও এলাকার এজেন্ট রামু দাড়িয়ার দীঘির মৃত নুরুল হকের পুত্র মোঃ আব্বাস মিয়া ওরফে জাহাঙ্গীর (৪০) এবং আব্দুল আলমের পুত্র সৈয়দুল আমিন (২৮) কে গ্রেফতার করে। পরে ধৃত আব্বাসের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই চক্রের মূলহোতা টেকনাফ নতুন পল্লান পাড়ার মৃত সিরাজুল ইসলামের পুত্র মুহিত কামাল (৩৪), দক্ষিণ লম্বরীর হাফেজুর রহমানের পুত্র সাইফুল ইসলাম (৩৮) সহ আরো দুই সহযোগী টেকনাফ নতুন পল্লান পাড়ায় বসবাসরত কুতুপালং ৩নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি/২৭নং বøকের আব্দুস সালামের পুত্র তাহের হোসেন (২৫) এবং কাদির হোসনের পুত্র হাবিবুল্লাহ প্রকাশ লালু (৩০) কে গ্রেফতার করে। পরে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের হেফাজত হতে ৩টি স্মার্ট ফোন, ৩টি বাটন মোবাইল ফোন, ১৩টি সীম কার্ড এবং নগদ ২৬ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। 



উল্লেখ্য,কক্সবাজারের বিভিন্ন অঞ্চল এবং টেকনাফের প্রত্যন্ত এলাকার ভিকটিমদের এনজিও এবং কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ দেওয়ার কথা বলে টেকনাফে এনে তারা প্রথমে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত গুদাম ঘরে বন্দি করে রাখে। ভিকটিমের সংখ্যা ২০-২৫জন হলে তাদেরকে মাছধরা বোটে করে সেন্টমার্টিনে নিয়ে সেখান থেকে মায়ানমারের অপহরণ চক্রের সদস্যরা মাছ ধরার বোটে করে তাদের মায়ানমারে নিয়ে যায়। সেখান থেকে মায়ানমারের নাম্বারে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার দিয়ে কল করে ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করে। স্থানীয় বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপণের টাকা প্রেরণ করা হলে তারা ভিকটিমকে মাছ ধরার বোটে করে পুনরায় টেকনাফ ফেরত এনে ছেড়ে দেয়।


গত ২৩ জুলাই কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ একটি অভিযোগের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, ২০ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ তৌহিদ নামে এক স্থানীয় যুবক ঈদগাঁও পোকখালির হামিদ হোসেন এবং নিজামুদ্দিনকে রাজমিস্ত্রির কাজ দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরে মায়ানমারের সিমে রেজিস্ট্রেশনকৃত ইমু নাম্বার থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে মোট ৩লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এই ঘটনায় ২৩ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ একটি অপহরণ মামলা হয় এবং পুলিশ তৌহিদকে গ্রেফতার করে। পরে তৌহিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাবের আভিযানিক দল মূল চক্রকে আটকের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে। 



ধৃতরা আরো জানায়, টেকনাফের নতুন পল্লানপাড়া, লম্বরি এবং লেংগুর বিল গ্রামের প্রত্যেক পরিবার এই অপহরণ চক্রের সাথে নানাভাবে জড়িত। এই অপহরণ চক্রের মূল হোতারা গ্রামের লোকদেরকে প্রত্যেক মাসে ৪-৫ হাজার টাকা করে প্রদান করে। মূলহোতারা গ্রামের প্রবেশ মুখে ২৪ ঘন্টা চেকার নিয়োগ করে রাখে। প্রশাসনের কোন গাড়ি বা কোন সদস্যকে দেখলে সাথে সাথে ওয়াট্স এ্যাপের মাধ্যমে গ্রæপে জানিয়ে দিলে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং প্রয়োজনজনবোধে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারকৃত অপহরণ চক্রের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় ৫টি, উখিয়া থানায় ১টি এবং ঈদগাঁও থানায় ১টি সহ মোট ৭টি মামলা রয়েছে। 


কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী জানান, উদ্ধারকৃত আলামতসহ ধৃত অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে পূর্বের মামলা মোতাবেক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঈদগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। ###

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024