|
Date: 2023-08-16 03:48:19 |
◾জুবায়ের আহমেদ : আসন্ন এশিয়া কাপের দলে রাখা হয়নি জাতীয় দলের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার মাহমদুল্লাহ রিয়াদকে। এই অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডারকে বিশ্রাম দিয়েছে বলা হলেও শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপের দলে না ফেরানোর ফলে রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখছেন অনেকেই।
এশিয়া কাপ কিংবা বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে না রাখায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। রিয়াদকে দলে রাখার মতো যেমন যুক্তিযুক্ত কারণ আছে, বিপরীতে ঠিক কি কারনে রিয়াদকে দলে ফেরানো হয়নি, সে কারনগুলো নিয়ে বলার চেষ্টা করবো-
রিয়াদের টেস্ট দল থেকে অবসর নেয়া, ভালো চোখে দেখেনি বিসিবি-
রিয়াদ টেস্ট দলের অন্যতম সেরা সদস্য ছিলেন। দলকে ৬ টেস্টে নেতৃত্বও দিয়েছেন। তবে টেস্টে রিয়াদকে অনিয়মত খেলানোর এক পর্যায়ে জিম্বাবুয়ের সফরে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের ১ম ম্যাচে না খেলানোর পর ২য় টেস্টে সুযোগ পেয়ে ১৫০ রানের ইনিংস খেলেই টেস্ট ফরম্যাটকে বিদায় বলেছিলেন রিয়াদ। রিয়াদের এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেয়নি বিসিবি। সেই সময়ে কয়েকটি টেস্টে অনিয়মিত রান করায় রিয়াদকে ম্যাচের একাদশ থেকে বাদ দিলেও তার প্রতি ঠিক অসন্তুষ্ট ছিল না ম্যানেজমেন্ট, তারপরও বাদ দেয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ রিয়াদ ১৫০ রানের ইনিংস খেলেই টেস্ট ফরম্যাটকে বিদায় বলেছেন, অথচ রিয়াদকে বাংলাদেশের দরকার ছিল টেস্ট ফরম্যাটে। বিসিবির কোন না কোন সিদ্ধান্তে রিয়াদ ক্ষুব্ধ হয়ে দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দেয়াটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না।
কাউকে দল থেকে বাদ দিতে এমন ঘটনা যৌক্তিক কারণ না হলেও ক্রিকেট বিশ্বে পছন্দ অপছন্দ কিংবা আচরণগত কারনে কাউকে বাদ দেয়ার ঘটনা অসংখ্য আছে, তাই রিয়াদের টেস্ট দল থেকে অবসর নেয়া বিসিবি ভালো চোখে না দেখায়, বড় মঞ্চে রিয়াদকে না নেয়ার ঘটনাদুইয়ে দুইয়ে চার মেলানোই যায়।
তরুণরা ভালো করছে, বিশেষ করে শান্ত ও হৃদয়-
রিয়াদকে ৭ নাম্বার পজিশনের জন্য বিবেচনায় আনার কথা গণমাধ্যম ও ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা বললেও রিয়াদ বেশ কয়েক বছর ধরেই ৭ নাম্বারে খেলছে না। চার নাম্বারে তৌহিদ হৃদয়ের দূর্দান্ত ব্যাটিং এবং ৬ নাম্বারে সুযোগ পেয়ে মুশফিক দূর্দান্ত খেলা, এই দুই কারনের পাশাপাশি ৭ নাম্বার পজিশনে ম্যানেজমেন্ট একজন তরুণ হার্ডহিটারকে প্রয়োজন মনে করায় কার্যত রিয়াদ বিসিবির ফিউচার প্লানিং থেকে ছিটকে গেছে। সাংবাদিকরা রিয়াদকে ৭ নাম্বার পজিশনের জন্যই যোগ্য মনে করছেন, এটিতে স্পষ্ট যে, ১-৬ পজিশনে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটিংলাইন আপ এখন। তাই ৭ নাম্বার ছাড়া রিয়াদের কোন জায়গা নেই, অপরদিকে এই ৭ নাম্বারে বিসিবি একজন তরুণ হার্ডহিটার চাওয়ায়, এই পজিশনে রিয়াদের চেয়ে ঢের এগিয়ে তরুণ আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন ও মেহেদী মিরাজ। কারন মিরাজ লাষ্ট কয়েক ম্যাচে ৭ নাম্বারে খেলে সফল হয়েছে। অপরদিকে রিয়াদ ৭ নাম্বার পজিশনে খেলছে না লাষ্ট পজিশনে, সে খেলতো ৬ নাম্বার পজিশনে, যে জায়গাটি সম্প্রতি দারুণ ভাবে দখল করে নিয়েছেন মুশফিক। তাই রিয়াদের প্রথম একাদশে রাখার যথার্থতা না থাকায় দলে নিয়ে বসিয়ে রাখার চেয়ে বাদ দেয়াকেই শ্রেয় মনে করেছে ম্যানেজমেন্ট এবং এটিরই প্রতিফলন ঘটেছে এশিয়া কাপের ঘোষিত দলে।
এটি স্পষ্ট যে, বেশ কয়েক বছর ধরে ৭ নাম্বার পজিশনে খেলছেন না রিয়াদ, এই পজিশনে সর্বশেষ কিছু ম্যাচে আফিফ, ইয়াসির রাব্বি ও মিরাজকে ট্রাই করেছে ম্যানেজমেন্ট। আফিফ ও ইয়াসির রাব্বিকে ব্যর্থ হলেও এই পজিশনটি এখন আর রিয়াদের নয়, তাই রিয়াদকে এই পজিশনে বিবেচনা করেনি বিসিবি। বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে ৭ নাম্বার পজিশনে ঝড়ো ব্যাট করতে থাকা প্লেয়ারকে অবশ্যই দরকার। রিয়াদের ঝড় তোলার সামর্থ্য থাকলেও সাম্প্রতিক সময়গুলোতে তার স্ট্রাইকরেট ভালো নয় এবং ফিটনেসের ঘাটতি মিলিয়ে ৭ নাম্বার পজিশনে রিয়াদের চেয়ে তরুণ ক্রিকেটাররাই বেশি দাবীদার। হয়েছেও তাই।
রিয়াদকে বাদ দেয়ায় বিসিবির সমালোচনা করা হলেও মনে রাখতে হবে বিসিবিই রিয়াদকে টি২০ অধিনায়ক বানিয়ে সম্মানিত করেছিল, ফলশ্রæতিতে রিয়াদ দেশকে সর্বোচ্চ ৪৩ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ ১৬ জয় পেয়েছিল, সাকিব পরবর্তীতে ৩৯ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে রিয়াদের ১৬ জয়কে ছুঁলেও, সাকিবের সর্বশেষ মেয়াদে টি২০ নেতৃত্ব নেয়ার আগে রিয়াদই বাংলাদেশের সেরা টি২০ অধিনায়ক ছিল, যার নেতৃত্বে শুধু ১৬ জয় নয়, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মতো দলকে সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
রিয়াদ টি২০ এর নেতৃত্ব নিয়ে বেশি সিরিয়াস হতে গিয়ে ভুল করেছে-
রিয়াদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে সামর্থ্য আছে, তবে রিয়াদের ভাষ্য মতেই উইকেটে নেমে পরিস্থিতি বুঝে তৈরী হতে রিয়াদের ৬/৭ বল খেলতে হয়। এছাড়াও রিয়াদ শুরু থেকেই হিট করে খেলা প্লেয়ার নয়। সে টি২০ এর চেয়ে বেশি কার্যকর টেস্ট ও ওয়ানডেতে। কিন্তু রিয়াদ টি২০ নেতৃত্বে থাকায় এই ফরম্যাটটিতে গুরুত্ব দিতে গিয়ে টেস্ট ছেড়েছে (?) এবং ওয়ানডে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা করেনি (?)। এক পর্যায়ে টি২০ নেতৃত্ব হারানোর পর রিয়াদের হাতে ওয়ানডে ব্যতীত কোন অপশন ছিল না এবং এই ওয়ানডেতে স্ট্রাইকরেট সমস্যা, ফিটনেস সমস্যা এবং আমার উল্লেখিত ২য় পয়েন্টে ওয়ানডের আলোচনা অর্থাৎ শান্ত, হৃদয়ের ভালো খেলা, ৬ নাম্বারে মুশফিক দূর্দান্ত খেলা এবং ৭ নাম্বারে বিসিবি একজন তরুণ হার্ডহিটার চাওয়ায় (যা যৌক্তিক) রিয়াদ ম্যানেজমেন্টের প্ল্যানিং থেকে বাদ পড়েছে। অথচ ২০২৩ বিশ্বকাপ খেলতে চাইলে রিয়াদের উচিত ছিল টি২০ খেলা ছেড়ে ওয়ানডে নিয়ে সিরিয়াস হওয়া। কিন্তু নেতৃত্বের স্বাদ অব্যাহত রাখতে চাওয়া রিয়াদ পিছিয়ে গেছে ওয়ানডে থেকে। অথবা ফিটনেস নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন না। ভায়রা ভাই মুশফিক দূর্দান্ত ফিটনেসের অধিকারী হলেও তাঁর খেলা লাষ্ট ম্যাচগুলোতে ফিটনেস ছিল দৃষ্টিকটু।
বিশ্বকাপের দল ঘোষণার এখনো অনেক সময় আছে। এশিয়া কাপে তরুণরা ব্যর্থ হলে রিয়াদকে বিশ্বকাপের প্ল্যানিংয়ে যুক্ত করতেও পারে বিসিবি, সেই সম্ভাবনা কম হলেও একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যায় না। আমার দৃষ্টিতে এশিয়া কাপ শেষে নিউজিল্যান্ড সফর কিংবা সফর শেষে বিশ্বকাপের দলেও যদি রিয়াদকে না রাখা হয়, তখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই বলাই হবে রিয়াদের জন্য উত্তম সিদ্ধান্ত।
দেশের হয়ে রিয়াদ পারফর্ম করেছে অর্থাৎ দেশকে রিয়াদ দিয়েছে এবং দেশও রিয়াদকে আজকের রিয়াদ বানিয়েছে। অলরাউন্ডার ভূমিকা ছাড়াও সে বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিল এবং টি২০ ক্রিকেটে সফল অধিনায়ক। এসব রিয়াদের জন্য অবশ্যই বড় পাওয়া। এছাড়াও জনসমর্থন তার সাথে আছে। এই অবস্থায় ৩৮ বছর বয়সী রিয়াদের আসন্ন বিশ্বকাপের ঘোষিত দলে জায়গা না হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলাই হবে উত্তম সিদ্ধান্ত।
লেখক : জুবায়ের আহমেদ
ক্রীড়া লেখক
© Deshchitro 2024