|
Date: 2023-08-16 13:37:02 |
শান্তির খোঁজে
জন্মেছিলুম এক জীর্ণ শীর্ণ গাঁয়,
মুক্ত মনে হয় নি তায়!
কোন নিয়মে বাইরে যাবার সাহস হয় নি ভাই।
মা-বাবায় মোরে ভিরাতে চাইলো ভালো ছেলেদের দলে, এসব মোর কাছে এহেন উৎপাত মনে হইলো
আর যেন স'বি মিছে!
ছাড়ুনু বাবাকে, ছাড়ুনু মাকেও
ছাড়ুনু সেই অজপাড়াগাঁ!
শান্তির খোঁজে চলিয়া আসিনু শহরের অট্টালিকায়
শহরের সব বড় বড় দালান, নামি-দামি কত কিছু,
এইখানে এসে ফিকে হয়ে গেল সব, মেকি তো এ সব কিছু।
চাক চিক্য? বাইরে তো রে ভাই, ভিতরে স'বি ফাকা শুধু!
ধনীরা সব নিঃস্ব আসলে, ব্যাংকে ঋণ হাজার কোটি!
ছেলেটা আমার আট বাউরে, সুরিখানায় থাকে পরে,
আমার টাকায় অন্যের ছেলেরা হলো মানুষ! আমারটা রইল পিছে
মেয়েটা আমার নষ্ট হয়ে গেল ইয়াবা সেবন করে,
রাত-বিরাতে বেড়াতে সে তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে,
কর্মচারীরা দুর্নীতি আর অফিসারদের স্বজন প্রীতিতে কোম্পানি উটিল মোর লাঠে!
নিলামে তুলিয়া হাক-ডাক হয়ে -
দেউলিয়া হনু মুই শেষে!
আহা! শান্তির খোঁজে আসিয়া একি! মুই অশান্তির অনলে পড়ুনু
আসলে শান্তি আছে নারীতে রে ভাই, এসব ছিল মিছে!
তাই তো গিয়েছিনু মুই পতিতালয়ে একটু শান্তির খোঁজে..
সেখানে গিয়ে সুখেই আছিনু, ছিলনা দুঃখ মনে,
হঠাৎ! জানি কি হইলো মোর,
শরীরটা আর চলে না ওরে
দাক্তার-সাব আসি নাড়ি টিপি দেখিলো
মলিন হইল তাহার মুখ,
আমার নাকি এইড'স হয়েছে ভালো হবে না আর এ অসুখ! মরনের জন্য দিন গনিতে নাগিনু, আয়ু যে মোর শেষ!
এতো দিন পর মনে হলো মোর,
এই যৌনপল্লীতে না আসিলে বুঝি, বাচিনু হয় আর ক'টা দিন বেশ!
জীবনের প্রদীপ নিভিতে চলিয়াছে, আয়ু হইয়াছে শেষ!
শান্তির খোঁজে আসিয়া এখন, হইয়া গেনু নিঃশেষ!
আসলে, শান্তি ছিল প্রেমিকার চোখেতে!
এখানেই বুঝি শান্তি সর্বস্ব,
প্রেমিকা আমার আবার ছিল বেজায় চালাক,
লুটে-পুটে নিলো অনিঃশেষ!
আমারে ছাড়িয়া চলিয়া গেল
সাদি খানা করিল সেএক বড়লোকের পোলারে!
আমার নাকি নাই কোনো কর্ম! বেকার ছেলে মুই,
তারি পিছে তো নিঃশেষ হয়েছিনু!
আসলে চাকরি খানা মুই পেয়েও করি নাই,
সে এর বুঝিলো না কোনো কিছুই!
প্রেমিকার মন এমনি রে হয়,
বোঝার সাধ্য নাই,
আসমানের ঐ সাতটি রঙে কোনটা তারে মানায়!
তাহার মন তো প্রবাহমান সতত, খরস্রোতা নদীর স্রোতের মতোই,
ঐ গাঙে ভাসলে তুমি পতিত যে হইবা, আটলান্টিকের 'পড়!
অবশেষে বুঝি হুশ হইলো মোর,
গাঁয়ের ছেলে গাঁয়ে ফিরলো শেষে,
ওমা, একি! যারা ছিল তারা গত হয়েছে কিছু, বাদ-বাকি সব হয়ে গেছে আজি পর!
শুনিয়াছি,ভাই-বোনেরা রইয়াছে!
গোছনু তাদের কাছে,
তারাই এখন চলিতে পারে না
নাতি নাতনিদের ভিড়ে।
ভাই-বোনেরা বুঝাইলো অনেক,
শুনলো না মোর কথা
সবাই মোরে শুধাইলো কী?
আর শান্তি নাই কি হেথা?
শান্তি আসলে কোথাও নাই রে ভাই,
বাবা-মায়ের আচল ছাড়া!
তাই, মা-বাবার কাছে গিয়াছিনু ফিরে
তাহা ছাড়া স'বি কারা! (কারাগার)
মা-বাবার এমন মন!
সন্তানের তাহার হাজার-কোটি দোষ, দোষ সে তো নয়!
ছেলে-মেয়েরা মোর হাজারো ভুল করবে, ইহা কোন মহাপাপ তো নয়!
মা-বাবার মতো দিল আছে কার? এই মায়াহীন দুনিয়াময়,
মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত রে ভাই, বলিয়াছেন ঐ খোদা তালায় ।
বাবা তো এক মহান গাছ রে ভাই, আলো, ছায়া, ফুল-ফল স'বি সে শুধু দেয়!
গ্রহণ করেন না কখনো এসবের বিনিময়!
এখানেই তো সত্যিকারের শান্তি অন্য কোথাও তো আর নয়।
আগে বুঝি নি ভাই,
তাইতো সুখের লাগিয়া মাড়িয়া বেড়াইয়াছি এ জগতের পায় পায়।
সুখের লাগিয়া কত কিছু করিনু, হেরিনু কত দেশ,
মা-বাবাই যে সকল শান্তির উৎস, বুঝিনু অবশেষ!
কিন্তু একি হায়!
বাবা যে, মোরে ছাড়িয়া গেলো,
সামান্য তফাৎ-এ মাও চলে গেল হায়!
ঐ অচিন সীমানায়!
একলা হইনু, পাশে কেহ নাই!
নিভিয়া গেল শান্তির প্রদীপ,
শান্তি কোথাও নাই!
শান্তি নাইরে, শান্তি নাই রে, শান্তি আর কোথাও নাই
শান্তির পায়রা যে উড়িয়া গেছে,
কোথা তাহারে পাই!
স'বি শেষ বুঝি হায়!
কিন্তু বুঝাইয়া দিলো ঐ আল্লায়,
শান্তি খোজো, শান্তি খোজো, শান্তি পাও কোথায়?
আমার কাছেই যে, শান্তি মিলে
ও'রে পাগল সে কি আর কোথাও পাও আর কোথাও?
সত্যি তো তাই!
শান্তির লাগিয়া পাড়ি দিনু কত সাগর-মহাসাগর, হেরুনু কত দেশ!
কত জনার মুই হাত ধরিনু, কত জনার ঘুরিনু পিছে-
এসব স'বি মরীচিকা রে ভাই, এসব স'বি মিকে!
শান্তির-ই নাম ইসলাম রে ভাই,
বুঝিনু সবার শেষে!
◾ লেখক : মো. মশিউর রহমান দুর্জয়
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
© Deshchitro 2024