|
Date: 2023-08-18 06:57:57 |
মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫ নাম্বার সাবসেক্টর সীমান্তবর্তী গ্রামীন জনপদ সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাজার বাংলাবাজার। এ বাজার থেকে প্রতি বছর সরকার কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সম্যস্যায় জর্জরিত থাকায় দিন দিন শৃঙ্খলা ব্যাহত হচ্ছে। বাজারটিতে নেই পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা,বর্তমানে বাজারের মেইনগলিটি রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত ট্রলি,ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আর ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের দখলে।
এছাড়া বাজারটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিচালনার জন্য হয়নি কোন পূর্নাঙ্গ কমিটি।
এতে করে বাজারের শৃঙ্খলা বলতে বর্তমানে কিছুই নেই। মেইনরোডে ট্রলি, অটোরিকশা আর মোটরসাইকেলের কারণে প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে গ্রামীন জনপদের এই বাজারে। এর কারণে দীর্ঘদিন ধরে বাজারে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
বর্তমানে বাজারটিতে ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজারের অধিক দোকান রয়েছে। তাছাড়া একটি সরকারি ব্যাংক এবং সাতটি বেসরকারি ব্যাংকের আউটলেট,২ টি স্কুল ও ৩টি হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এত বড় একটি বাজারের রাত্রীকালীন নিরাপত্তার জন্য বাজার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে রয়েছে মাত্র ১০ জন পাহারাদার- যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প।
রাত ১২টার পরেও বাজারের কয়েকটি গলিতে দোকানপাট খোলা থাকায় ভোররাত পর্যন্ত বাজারে বিভিন্ন ধরনের লোকজন যাতায়াত করে। বাজার ও আশপাশের এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখানে নেই কোন পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র।
শুধু তা-ই নয়, পর্যাপ্ত ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই বাজারের কয়েকটি গলিতে হাঁটুসমান পানি আর কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এছাড়া বাজারের ছোটবড় ব্যবসায়ী এবং বাজারে আসা লক্ষাধিক লোকের জন্য রয়েছে একটি মাত্র গণশৌচাগার৷ নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা। শুধু বাজারের মসজিদের একটি টিউবওয়েল বাজারের ব্যবসায়ীসহ লক্ষাধিক লোকের নিরাপদ পানির একমাত্র উৎস।
বাজারটিতে নির্বাচন দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব এনে বাজারের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সঠিকভাবে পরিচালনাসহ বাজারটির শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাজারে আসা দোয়ারাবাজার উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাংলাবাজার দিন দিন তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। বাজারে শৃঙ্খলা বলতে কোনো কিছুই নেই। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী বাজারটির শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন।
ব্যবসায়ীদের সমর্থনে দীর্ঘদিন ধরে বাজারে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন ব্যবসায়ী মুনসুর আহমদ,তিনি জানান প্রায় ৩০ বছর ধরে বাংলাবাজার পরিচালনায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি। তবে প্রথমে পূর্নাঙ্গ কমিটি না থাকলেও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান’র জোরালো ভূমিকায় বাজারে শৃঙ্খলা ছিলো। কিন্তু দায়িত্ব বদলের কারনে বাজারের শৃঙ্খলা দিনদিন ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ৬ মাস আগে বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি সভা করে বাজার পরিচালনায় একটি কমিটি গঠন করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজও তার কোন হদিস মিলেনি। তিনি আরও জানান,রাত ১২ টার পর বাজারে কিছু দোকানপাট খোলা থাকে যার কারনে ১২ টার পর বাজার হয়ে উঠে চোরাকারবারিদের আস্থানা। বাজারের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তিনি প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করেন।
সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য সেলিম আহমদ জানান,উপজেলার সর্ববৃহত্ত ঐতিহ্যবাহী বাজারটি দেখার মতো আজ কেউ নেই। বাজারে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টি হলেই বাজারের গলি গুলো পানিতে তলিয়ে যায়। বাজারটিতে শৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই। রাতবিরাতে দোকানপাট খোলা রেখে চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দেখেও যেনো না দেখার ভান করছে।
বাংলাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসাইনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মূর্শেদ মিশু জানান,বাংলাবাজারে অনিয়ন্ত্রিত ট্রলি চলাচল বন্ধে মাসিক সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের চেষ্টা চলছে ট্রলিগুলো বন্ধ করে দেওয়ার।
তাছাড়া বাজারে পদাধিকার বলে নিয়ম অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান সভাপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন। চেয়ারম্যান বাজারের শৃঙ্খলার স্বার্থে পূর্নাঙ্গ একটি কমিটি দিয়ে ও বাজার পরিচালনা করাতে পারেন। বাজারে আয়ের বিভিন্ন উৎস রয়েছে। বাজারের আয়ের উৎস থেকে বিশুদ্ধ পানি ও গনশৌচাগার নির্মান করা সম্ভব।
চোরাকারবারি দমনে রাত ১২ টার পর বাজারের দোকানপাট গুলোর উপর প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো হবে বলে তিনি জানান।
© Deshchitro 2024