মারাত্বক ব্যাটিং বিপর্যয়ের কারনেই এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারতে হলো বাংলাদেশকে। পাল্লেকেতে টাইগাররা ৫ উইকেটে হেরেছে স্বাগতিক শ্রীলংকার কাছে। টস জিতে বাংলাদেশের করা ১৬৪ রানের জবাবে শ্রীলংকা ৩৯ ওভারেই ১৬৫ রান করে জয়ে বন্দরে পৌঁছায় লঙ্কানরা। 


বাংলাদেশের মতো শ্রীলংকারও শুরুটা ভাল হয়নি। শ্রীলংকার ৪৩ রানে ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। স্বল্প পুঁজি নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট লড়াই করেছেন বোলাররা। নতুন বলে তাসকিন আহমেদের গতি আর সুইংয়ের পর মিডল ওভারে সাকিব-মেহদীর ঘূর্ণিতে কঠিন পরীক্ষায় দিতে হয়েছে লঙ্কান ব্যাটারদের। সেখান থেকে শ্রীলংকাকে টেনে তুলেছে সাদিরা সামারাবিক্রমা ও আসালাংকা। তবে তাদের ৫০ ওভার আটকে রাখার জন্য ১৬৪ রান যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত আসালাংকার ৬২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দেন।


‘বি’ গ্রুপে শ্রীলংকা এখন শীর্ষে রয়েছে। আগামী রোববার বাংলাদেশ তাদের গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে লাহোরে। 


আগেই সন্দেহ করা হয়েছিল বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি নিয়ে এবং তাই হয়েছে। মোঃ নাঈমের সঙ্গে অভিষেক হওয়া তানজিদ হাসান তামিমের জুটির স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৪ রানের। ছোট তামিম রানের খাতা খোলার আগেই সাজ ঘরে ফিরে আসতে হয়। সেই পথেই দলের অভিজ্ঞরাও হেটেছে। ফলে বাংলাদেশ মারাত্বক ব্যাটিং বিপর্যয়ে পরে মাত্র ১৬৫ রানের টার্গেট দেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও স্বাগতিক শ্রীলংকাকে। 


এরআগে বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ম্যাচে এবারের আসরে সহ আয়োজক দেশ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। নিজদের প্রথম ম্যাচেই টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, তবে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি টাইগারদের। দলীয় ২৫ রানেই সাজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার। এরপর স্বাগতিক বোলারদের বোলিং তোপে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর ৮৯ রানের ইনিংসে ভর করে শেষ পর্যন্ত ১৬৪ রানে থামে টাইগারদের ইনিংস। 


পাল্লেকেল্লেতে ব্যাট হাতে ম্যাচ ওপেন করতে নামেন নাইম শেখ এবং তানজিদ তামিম। ইমার্জিং এশিয়া কাপে আলো ছড়ানো এই জুনিয়র তামিম বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। তবে অভিষিক্ত এ ব্যাটার ফিরেছেন শূন্য রানেই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই মহিশ থিকসানার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে আউট হন তিনি। ফলে দলীয় ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর আরেক ওপেনার নাইমও পারেননি বেশিক্ষণ টিকে থাকতে। 


দলীয় ২৫ রানের মাথায় ধনঞ্জায়া ডি সিলভার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে করেছেন ২৩ বলে ৩ চারে ১৬ রান। এদিকে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে পথ দেখাতে ক্রিজে থাকা শান্তর সঙ্গী হন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু পারেননি তিনিও। এগারতম ওভারে মাথিশা পাথিরানার করা বল ব্যাটের কোণায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে, আর দারুণভাবে লাফিয়ে পড়ে তা গ্লাভসবন্দী করেন উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। ফলে মাত্র রানেই ৫ রানেই বিদায় নিতে হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে।


এদিকে, সাকিব ফেরার পর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তাওহীদ হৃদয়। এ দুজনের ব্যাটেই ম্যাচে ফেরার স্বপন বুনতে শুরু করে টাইগাররা। বিপর্যয় কাটিয়ে জুটি বেঁধে দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫৯ রান। তবে এ দুজনের জুটিতে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ তখনই আউট হন হৃদয়। লঙ্কান অধিনায়ক দাশুন শানাকার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে তিনি সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় চব্বিশ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান। এরপর আর দাড়াতে পারেনি কেউই। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও ১৩ রানেই ফেরার পর ৫ রান করে রাউন আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন মেহেদী হাসান মিরাজও। 


একপ্রান্তে টাইগার ব্যাটারদের যাওয়া-আসার মিছিল থাকলেও অপর প্রান্তে আগলে ধরে খেলছিলেন শান্ত। ব্যক্তিগত পঞ্চাশ পূরণ করার পর দলীয় সংগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের শতকের দিকেও। তবে এক সময় হার মানতে হয় তাকেও। ৪২তম ওভারে থিকসানার বলে বোল্ড হয়ে হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। ১২২ বলে ৭ চারে করা তার ৮৯ রানের ইনিংসের কল্যাণেই লজ্জাজনক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। 


শান্ত আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় আর মাত্র দুই রান। ফলে ৪২.৪ ওভারে মাত্র ১৬৪ রানেই থামে টাইগারদের ইনিংস। আর লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন পাথিরানা।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024