---------------------------------------------------------------
পড়ালেখাতে শোভন বরাবরই ভালো। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে সে৷ স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন এ' প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিল সে। ইন্টারমিডিয়েটে আবারও বিজ্ঞান বিভাগে একটি সরকারি কলেজে পড়ে সে। শুধু ছাত্র হিসেবেই নয় ,ভালো ছেলে হিসেবে সর্বত্রই তার সুনাম রয়েছে। ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা-পাতলা-উজ্জ্বল ফর্সা একটি দেহ তার। আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধুমহলে তার অনেক কদর। শিক্ষকদের থেকেও সমাদর পেয়ে আসছে বরাবরই শোভন।
চিকিৎসক বাবা আর শিক্ষিকা মায়ের একমাত্র সন্তান শোভন। বাবা আমিনুল ইসলাম একজন সার্জারি বিশেষজ্ঞ সরকারি চিকিৎসক। মা রোমানা ইসলামও সরকারি কলেজের ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক। পরিবারের ইচ্ছে শোভন বাবার মতো চিকিৎসক হবে। শোভনও সেটাই চায়। রোমানা ইসলাম পড়াতে না চাইলেও শিক্ষার্থীদের অনুরোধে অনেকটা বাধ্য হয়েই প্রাইভেট পড়ান তিনি। ফলে বাবা-মা দুজনেই নিজেদের পেশাগত কাজে ব্যস্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়। করোনা মহামারির জন্য গত দু'বছর ধরে ঘরে বসেই অনলাইনে ক্লাস আর কোচিং করতে হয়েছে শোভনকে। বাবা-মা একটি দামি স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিল তাকে।
শোভন মনে মনে ভাবছে -কত দরকারি আর উপকারী এই স্মার্টফোন!
একাদশ শ্রেণিতে তো অটোমেটিক প্রমোশন পেয়ে গেছে। দ্বাদশের ফাইনাল পরীক্ষা শুধু পিছিয়েই চলেছে। সামনে পরীক্ষা- প্রিপারেশন প্রায় সম্পন্ন শোভনের। আজ বাসায় একদম একা শোভন। বাবা আমিনুল ইসলাম প্রায়ই অপারেশনের জন্য রাতে ক্লিনিকে থাকেন। শিক্ষিকা মা রোমানা ইসলাম একদিনের ট্রেনিংয়ে গেছেন রাজধানী ঢাকায়। খুলনা শহরের ডুপ্লেক্স এ বাড়িটাতে শোভন আজ একাই আছে। বাসায় ফ্রিজে রান্না করা অনেক খাবার থাকে। একটু গরম করে খাওয়া তার অভ্যাস হয়ে গেছে। শোভন বরাবরই রাতের খাওয়া সেরে নেয় রাত ন’'টার মধ্যেই। আজও তাই করেছে। পড়তে পড়তে এখন রাত প্রায় বারোটা বাজে। ঘুমাতে যাবে সে। বিছানা ঠিক করে মোবাইলটা হাতে নিয়ে শুয়ে পড়েছে শোভন। শুয়ে পড়ে শুধু ভাবছে বাবা-মার কথা। কখনো কোনো চাওয়া তার অপূর্ণ রাখেননি তারা। আর ভালোবাসেন প্রচন্ডরকমে। তবে তাকে একটু সময় দেবার সময় কই তাদের (?)।
মা হয়তো কাল দুপুরে চলে আসবেন। সকালটাও তাকে এভাবে একাই কাটাতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই শোভন হাতে থাকা মোবাইলে দেখছে-ফেসবুক বন্ধুদের কত ধরনের পোস্ট! হঠাৎ একটি লিংক-এ চাপ পড়ে গেল শোভনের। সামনে যা আসলো তা কখনো দেখেনি শোভন। এটি ছিল একটি 'পর্নো সাইট '৷ কৌতুহল আর ঘোরের মধ্যে থেকে এগুতে থাকে সে। কৌতুহল বেড়েই চলেছে শোভনের। রাত তখন একটা বাজে। হঠাৎ একটি মেসেজ আসলো শোভনের মেসেঞ্জারে। মেসেজে লেখা
-এত রাতেও জেগে জেগে পড়ছিস শোভন?'
মেসেজটি তার সহপাঠিনী মিথিলা'র। মেসেজটি পেয়ে কেমন যেন এক ভিন্ন অনুভূতির উদ্রেক হল শোভনের-যা আগে কখনো হয়নি। মিথিলা বহু মেসেজ দিয়েছে শোভনকে। অনেক পছন্দ করে সে শোভনকে। ভালোবাসার কথা বলে মিথিলা। বহু মেসেজে আর কথায় সে ইঙ্গিত দিয়েছে মিথিলা। কিন্তু কখনো রেসপন্ড করেনি শোভন। কিন্তু আজ প্রথমবার মিথিলাকে কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে শোভনের। না, চেপে গেল এবারও সে। ঘুমের চেষ্টা করছে শোভন। এরইমধ্যে কৌতূহলবশে শোভন নতুন পরিচিত হওয়া সেই সাইটে ঢুকছে। যথারীতি মেসেজও আসে মিথিলার।
প্রতিরাতেই এভাবে চলতে থাকে।
মিথিলা কলেজের সেরা সুন্দরী। ছাত্রী হিসেবেও ভালো। রূপে-গুণে অনন্যা সে। আজ মিথিলার মেসেজের রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে হলো শোভনের
- তুই ঘুমাস নি কেন - পড়িস এখনো? প্রথমবারের মতো মেসেজের রিপ্লাই পেয়ে মিথিলা খুশিতে আত্মহারা।
মিথিলা বলল- বাহ্ কি সৌভাগ্য আমার!
- কেন?
- কেন আবার, তুই আমাকে রিপ্লাই দিয়েছিস তাই।
-ও
- তাহলে কি ? কী যেন বলতে গিয়ে থেমে গেল মিথিলা।
- কী? শোভন জিজ্ঞেস করে।
- না, মানে তুই রিপ্লাই দিলি তাই, খুব খুশি লাগছে আমার।
- তাই?
শোভন প্রশ্ন করল মিথিলাকে।
শোভনের ঘুম পাচ্ছে। হাই' তুলে বলল
-ঠিক আছে। ঘুমে যা তবে। শুভ রাত্রি।
ওপাশ থেকেও জবাব আসলো '‘শুভরাত্রি'।
শোভনের মাকেও কলেজে অনলাইনে ক্লাস করতে যেতে হয়। ছেলেকে সকালে ঘুম থেকে কখনো ডাকতে হয় না। আজ আটটা বেজে গেলেও এখনো ওঠেনি শোভন। ওর তো আটটায় অনলাইনে প্রাইভেট পড়া থাকে। ডুপ্লেক্স বাড়ির উপরের দক্ষিণ কোণায় শোভনের রিডিং এবং লিভিং রুম। রোমানা ইসলাম উপরে গিয়ে- এই প্রথমবার ঘুম থেকে ডেকে তুলতে এলেন
- শোভন , ওঠো, তোমার ক্লাস তো শেষ হয়ে যাচ্ছে!
শোভন ঘুমের ঘোরে শুনতে পাচ্ছিল তাকে কেউ ডাকছে ।
-উঠছি আম্মু
বলেই ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে শোভন। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চক্ষু চড়কগাছ তার। তাড়াতাড়ি উঠে এ্যাটাচ্ড ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ঝটপট অনলাইনে ঢুকলো সে । আজ আধঘন্টা দেরি হয়ে গেল তার।
শোভন ধীরে ধীরে আকৃষ্ট হতে লাগল নতুন কৌতুহল জাগানো বিষয়টি নিয়ে। রাতে ঘুমাতে গেলেই তাকে কে যেন বাধ্য করে ওর মধ্যে ঢুকতে। এদিকে মিথিলার সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেল শোভনের। নিজের অবচেতন মনে কখন যে ভালোবাসার কথা বলে ফেলেছে তাকে বুঝতেই পারেনি শোভন। সেই দুই বছর ধরে শোভন বুঝতে পারছিল মিথিলা তাকে পছন্দ করে-ভালোবাসে। কিন্তু শোভন কথনো ধরা দেয়নি মিথিলার কাছে। লেখাপড়া নিয়েই সবসময় ব্যস্ত থেকেছে শোভন। ইদানিং সারাক্ষণ মাথায় কী যেন একটি ঘোর নিয়ে চলছে শোভন।
শোভনের একাডেমিক পারফরমেন্স আগের মত যাচ্ছে না। তার কলেজ থেকে তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জবাবে শোভন বলেছিল
-স্যার, আমি একটু অসুস্থ ছিলাম।
এই প্রথম কাউকে মিথ্যা বলল শোভন। শোভনের মাকে শোভনের প্রাইভেট টিউটরও জানান যে শোভনের কোন সমস্যা চলছে কিনা। সে তো আগের মতো পারফর্ম করতে পারছে না ইদানিং।
কথাগুলো শুনে শোভনের মা একটুখানি বিচলিত হয়ে পড়েন। শোভন কে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন
-শোভন তোমার কোন সমস্যা চলছে?
না-সূচক জবাব দিল সে। মাকে প্রথমবার আর জীবনে দ্বিতীয়বার মিথ্যা বলল শোভন। ইদানিং অনলাইনে ক্লাস করতে করতে স্ক্রিনের সামনে ঘুমিয়ে পড়ছে শোভন। এভাবেই চলছে শোভনের প্রতিদিন।
ইতোমধ্যে করোনা কাটিয়ে পরীক্ষা সম্মুখে চলে এসেছে। পরীক্ষার আর সপ্তাহখানেকও বাকী নেই। সব যেন ভুলে যাচ্ছে শোভন। কিছুতেই আর আগের মতো স্মরণে থাকছে না কোনকিছুই। কিছুতেই শোভন বর্তমানের ঘোরটি কাটিয়ে উঠতে পারছে না। মাঝেমধ্যে ভাবে মায়ের সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করবে। পরক্ষণে কী যেন ভেবে শেয়ার করছে না সে।
আগামীকাল শোভনের এইচএসসি এক্সাম। শোভনের উপর এমনই আস্থাশীল ছিল তার বাবা-মা যে, কখনোই তার লেখাগড়া নিয়ে ভাবতেই হয়নি তাদের। কিন্তু শোভন দেখছে যে ,বাবা-মা’র সেই আস্থা আর রক্ষা করতে পারছে না সে। পরীক্ষা চলছে শোভনের। পদার্থবিজ্ঞান ছাড়া সব পরীক্ষা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আশনুরুপ হয়নি সেগুলো । আগামীকাল পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা তার। সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মিথিলা এসএমএস করলে এখন রাগ হয় শোভনের। রাগ চেপে রেখে শোভন বলল
- মিথিলা তুমি পড় তোমার মতো, আমাকেও পড়তে দাও। কথাটিতে মিথিলার একটু রাগ হলেও কোন কিছু বলনি।
পরদিন সকালে পরীক্ষা দিতে এসে যা ভাবছিল শোাভন- তাই-ই ঘটল। পরীক্ষা ভালো হয়নি। পাশ করাই দুষ্কর। এখন দ্বিতীয় পত্র দিয়ে টেনে তোলার পরিকল্পনা করে আবার পরীক্ষা দিতে গেল শোভন। কিন্তু প্রথমপত্রের চেয়েও খারাপ হলো দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। এক মাথা ডিপ্রেশন নিয়ে মিথিলা আর বন্ধুদের এড়িয়ে বাসায় চলে এলো শোভন।
বাসায় ফিরলে মা রোমানা ইসলাম জিজ্ঞেস করলেন
- পরীক্ষা কেমন দিলে শোভন?
-ভালো আম্মু।
আবারো মিথ্যা বলল শোভন। ক্রমাগত মিথ্যা বলে চলা শোভনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছিল। নিজের ওপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার। নিজেকে আজ একজন ব্যর্থ আর ভূয়া মনে হচ্ছে তার।
রাতে আজ বাসায় আছে বাবা আমিনুল ইসলামও। রাতে খাবার টেবিলে আজ একসঙ্গে বসে খাবে সবাই। এই-ই চিকিৎসক বাবার অভিপ্রায়। ব্যস্ততায় বহুদিন একসঙ্গে খাওয়া হয় না । স্ত্রী রোমানা ইসলামকে বললেন
- শোভনের পরীক্ষা কেমন চলছে?
-বলল তো ভালো।
-ওকে ডাক , আজ একসঙ্গে খাব।
পরীক্ষা কি আর আছে- নাকি শেষ?
-না, ব্যবহারিক আছে।
এই বলে রোমানা ইসলাম শোভনকে উপরে ডাকতে গেলেন।
এদিকে বাবা শোভনকে যে আজ ডাকবেন এবং পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন করবেন-সেটা বুঝতে পেরে ‘কী’ জবাব দিবে সে - আবার মিথ্যা বলতে হবে তাকে-এই নিয়ে শোভন যখন ভাবতেছিল ঠিক তখনই ভিতর থেকে লাগানো দরজায় কড়া নেড়ে মা ডাকছেন
- শোভন খাবার টেবিলে এসো, তোমার বাবা বসে আছেন তোমার জন্য।
কথাটি কর্ণকুহরে প্রবেশ করা মাত্রই বুকটা কেঁপে উঠল শোভনের।
-আসছি আম্মু ।
কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে জবাব দিল শোভন। বাবার সামনে দাঁড়াতে আজ ভয় লাগছে শোভনের। নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছে তার। নিজেকে সে আজ ধিক্কার জানাচ্ছে বার বার। তবুও পা টেনে টেনে গেল বাবার কাছে। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা শোভনের । কিন্তু কিছুতেই পারছেনা সে। শোভনকে দেখেই বাবা আমিনুল ইসলাম বললেন
- এসো, শোভন বসো। পরীক্ষা কেমন হয়েছে?
-ভালো আব্বু।
আবারো মিথ্যা। এই মিথ্যা আর বলতে পারছে না শোভন।
-তোমাকে এমন উস্কো শুষ্ক দেখাচ্ছে কেন?
-না, আব্বু একটু শুয়েছিলাম।
-আজ আমি তোমার মেডিকেল কোচিংয়ের ব্যাপারে কথা বলে এসেছি। আগামী সপ্তাহেই কোচিং ক্লাস শুরু হচ্ছে।
শোভন কোন কথা বলছে না ।
-কী হল? তুমি কিছু বলছ না যে?
-জ্বী , না, আব্বু, ঠিক আছে।
- আচ্ছা খেতে বস।
খাওয়া হচ্ছে না শোভনের। তবুও বাবা-মাকে বুঝতে না দিয়ে কোন রকম খেয়ে-শরীরটা ভালো না, ঘুম পাচ্ছে-বলে বাবা-মা’র অনুমতি নিয়ে নিজের রুমে চলে গেল শোভন। বাবা-মা দুজনই কৌতূহল নিয়ে তার দিকে কিছুক্ষণ চেয়েছিল। আমিনুল ইসলাম স্ত্রী রোমানা ইসলামকে বললেন
-শোভনের মধ্যে তুমি কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেছ?
- হ্যাঁ আমারও মনে হচ্ছে সেরকম কিছু। ও যেন কী লুকাচ্ছে। সময় নিয়ে ওর সঙ্গে কাউন্সিলিং করা দরকার।
-ঠিক বলেছ। বললেন আমিনুল ইসলাম।
রাতের খাবার সেরে তারা শোবার ঘরে চলে গেলেন।
এদিকে মেডিকেল কোচিংয়ের ব্যাপারে বাবার কথা মনে করতেই দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শোভন। সে তো পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে পাশ করবে না। প্রতিনিয়ত মিথ্যার মধ্যে তাকে চলতে হচ্ছে। এই মিথ্যা আর বয়ে বেড়াতে পারছে না সে। নিজের স্মার্ট ফোনের দিকে আজ বার বার তাকাচ্ছে সে।
-এটাই আমার কাল, এটাই আমাকে শেষ করে দিল!
এই বলে সজোরে এক আছাড় মারল ফোনটিকে। মেঝেতে শতরঞ্জি ছিল বিধায় এর আওয়াজটি এ রুমের বাইরে যায়নি। তবে ফোনটি ন’’টুকরা হয়ে গেল। মাথার উপর সিলিং ফ্যান ঘুরছে। এখন রাত দুইটা বাজে । কিছুতেই ঘুম আসছে না তার। ফোনের উপর দোষ চাপালেও তার মধ্যে প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করছে। কিছুতেই আজ নিজেকে সামাল দিতে পারছে না শোভন।
সকাল হয়ে গেছে । মা রোমানা ইসলাম গত রাতে ছেলেকে ওই ভাবে দেখে একটুও ঘুমাতে পারেননি বাকি রাতটুকু । তাই খুব ভোরে উঠে ছেলের রুমের সামনে চলে এলেন। ভাবলেন এত সকালে ডাকবেন। আবার ভাবলেন না, থাক।
হঠাৎ তার পায়ের কাছে যন্ত্রাংশ দেখা গেল। মোবাইল ফোনের কিছু অংশ মনে হচ্ছে। কিছু একটা আঁচ করলেন তিনি। শোভনের রুমের দরজায় প্রথমে মৃদু পরে সাড়া না পেয়ে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। কোন সাড়া পেলেন না। চঞ্চল হয়ে উঠল তার মন। দৌঁড়ে গিয়ে স্বামী আমিনুল ইসলামকে ডেকে তুললেন। দুজনে এসে ডাকছেন শোভনকে। কোন সাড়া নেই শোভনের। পর্দা দিয়ে ঢাকা জানালার কাচ। ইঞ্চিখানেক ফাঁকা দেখা যাচ্ছে সেখান থেকে। আমিনুল ইসলাম সেই ফাঁকা দিয়ে তাকিয়ে যা দেখলেন তাতে আর স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। স্ত্রী রোমানা ইসলাম স্বামীর এ অবস্থা দেখে নিজেই রুমের মধ্যে তাকিয়ে দেখলেন ভিতরে আলো জ্বলছে। আর যা দেখলেন তা পৃথিবীর কোন পিতা-মাতা সহ্য করতে পারেন না। চিৎকার করে দুজনেই দারোয়ান, ড্রাইভারদের ডাকলেন। তারা দৌঁড়ে এসে রুমের দরজা ভেঙে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলন্ত শোভনের নিথর দেহখানি নামাল। ওরা বুঝতে পারল যে, অনেক আগেই শোভন এ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে। টেবিলে একটি খোলা ডায়েরি রয়েছে। ড্রাইভার রফিক সেটি এনে আমিনুল ইসলামের হাতে দিল। তাতে লেখা
- আব্বু-আম্মু, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
..(সমাপ্ত)