|
Date: 2023-09-09 10:02:21 |
১৯৭১ সাল ২১ শে এপ্রিল। ভোর রাতে মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা ফেরি ঘাট থেকে পাক হানাদার বাহিনী একটি কে-টাইপ ফেরি ও গানবোর্ড নিয়ে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাহাদুরপুর আক্রমন করে। সেখানে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে প্রথম শহীদ হয় আনসার ফকীর মহিউদ্দিন। সেই সম্মুখিন যুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিজের হাত হারায় গোলাপ আলী সরদার। কিন্ত ৫০ বছরেও সম্মুখিন যুদ্ধে হাত হারানো গোলাপ আলী সরদার পায়নি কোন সনদ। পায়নি মুক্তিযোদ্ধের সম্মান। মুক্তিযোদ্ধের সনদের আশায় ঘুরে ঘুরে বয়সের ভারে আজ অচল হয়ে বিছানায় পরে আছে।
মৃত্যু পথের এই অসুস্থ্য গোলাপ আলী সরদার বলেন, অর্থ বা কোন সুযোগ-সুবিধার আশায় নয়। মৃত্যু কালে যেন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মান পাই। আমার মৃত্যুর পরও যেন পথচারীরা বলেন এটা একজন দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর। এই আশায় অনেকের দ্বারে দ্বারে গিয়েছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা একাধিক সহকর্মীদের সদন ও একাধিক প্রমাণ থাকার পরও পাইনি কোন সম্মান।
গোলাপ আলী সরদার জানান, বয়সের ভারে কোন কাজ কর্ম করতে পারি না। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরে আছি। তিন বেলা পেটের খাবার জোটে না। লজ্জায় মানুষের কাছে হাত পেতে চাইতে পারি না। ক্ষুদার যন্ত্রনা নিয়ে বিছানায় পরে থাকি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে, মুক্তিযোদ্ধের সদন না পাওয়া সন্ত্রনা নিয়ে দিন কাঁটাতে হচ্ছে। এই যন্ত্রনা আমি আর কত দিন সহ্য করবো। আমি কি মৃত্যুর আগে বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাবো না?
তৎকালীন গোয়ালন্দ মহাকুমা যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুর জব্বার বলেন, ১৯৭১ সালে ২১শে এপ্রিল তৎকালীন আনছার ও ইপিআর যৌথ বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামে গোয়ালন্দ মহকুমা বাহাদুরপুর নামক স্থানে পাকবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে তাহার বাম হাত খানা গুলি লেগে ছিন্ন হয়ে যায়। আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে তার অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তৎকালীন গোয়ালন্দ মহাকুমা যুদ্ধকালীন ডেপুটি কমান্ডার মো. আঃ ছামাদ মোল্লা বলেন, গোলাপ সরদার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার অধীনে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে তিনি তার বাম হাত হারান।
রাজবাড়ী যুদ্ধকালীন কমান্ডার ও যুদ্ধ পরিচালনা কমান্ডার এসএম শহিদুন নবী (আলম) বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধে মো. গোলাপ আলী সরদার রনাঙ্গনে সক্রিয় ভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে তাহার নাম চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
© Deshchitro 2024