আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংগঠনের ত্রৈমাসিক সম্মেলনেসন্ধ্যা রানী ভৌমিক সভাপতি ও বৃষ্টি কালিন্দী সাধারণ সম্পাদক


মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহায়তায় এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’র উদ্যোগে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগানে বাস্তবায়িত লিডারশীপ এমবডি এসোসিয়েশন ডিমানডিং টু এনশিওর রাইটস (লিডার) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংঘের’ ত্রৈমাসিক সম্মেলন  অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরতলীর ব্র্যাক লার্নিংসেন্টার (বিএলসি) এর সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে সন্ধ্যা রানী ভৌমিক-কে সভাপতি এবং বৃষ্টি কালিন্দী-কে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়।

সম্মেলনে সিলেট বিভাগের ২৫টি চা বাগান থেকে আগত নারী ও কিশোর ডেলিগেটরা প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাদের সংঘের নেতা নির্বাচিত করেন। সভায় ৮টি পদে মোট ২৩জন প্রতিদ্বন্ধিতা করেন।

এতে ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে ২৫টি ভোট পেয়ে তথ্য ও লিয়াজু সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন রুপা দাস, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি মনিকা বর্মা পেয়েছেন ৯ ভোট, ১৮ ভোট পেয়ে অনুষ্ঠান বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন লিপি আক্তার, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি  চৈতি গোয়ালঅ পেয়েছেন ১৩ ভোট, ২৬ ভোট পেয়ে অর্থ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মমতা কালিন্দী, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি দানী তাতী পেয়েছেন ৯ ভোট, ২৩ ভোট পেয়ে লক্ষী দাস সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি বন্যা নায়েক পেয়েছেন ১৮ ভোট, ২১ ভোট পেয়ে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন রাধিকা পাল, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি পাপিয়া বাক্তি পেয়েছেন ১৬ ভোট, ২৪ ভোট পেয়ে বৃষ্টি কালিন্দী সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আফিয়া পেয়েছেন ১০ ভোট, সহ-সভাপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন শ্রীমতি জানি এবং সভাপতি পদে ৩৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন সন্ধ্যা রানী ভৌমিক। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি  বৈশাখী রাউতিয়া পেয়েছেন ৪ ভোট।

এছাড়া নির্বাচিত ৭ সদস্যরা হলেন, প্রীতি উরাং, সিপা রুদ্র পাল, নিপা কুর্মী,  শেফালী গঞ্জু, পূর্নিমা গোয়ালা, সন্ধ্যা রায় এবং মালা বাক্তি।

নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করেন কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রামভজন কৈরি এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি পংকজ কন্দ, সাধারণ সম্পাদক, নিপেন পাল, অর্থ সম্পাদক পরেশ কালিন্দী এবং বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা।


দিনব্যাপী এ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা পলিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, শ্রীমঙ্গল উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মর্কতা সাহেদা আক্তার, সাংবাদিক ইসমাইল মাহমুদ এবং শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মোঃ এহসানুল হক। 

ত্রৈমাসিক এ সম্মেলনটি সঞ্চালনায় ছিলেন প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী।

সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আমরা পারবো নারী ও কিশোরী জোটের অস্থায়ী কমিটির আহবায়ক সন্ধ্যা রানী ভৌমিক। 

ভোট গ্রহণ, গণনা, ফলাফল প্রকাশ অধিবেশনসহ সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন পর্যায়ের চা শ্রমিক নেতৃবৃৃৃৃন্দ, প্রকল্পের ট্রেনিং অফিসার, আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংঘের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, প্রকল্পের বিভিন্ন র্পযায়ের কর্মকর্তাসহ সিলেট বিভাগের ২৫টি টা বাগান থেকে আগত ডেলিগেটসহ মোট ৬৯ জন অংশগ্রহণ করেন।

সম্মেলনে সমাপনী অধিবেশনের বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, চা বাগানের নারী ও কিশোরীদের সামাজিক সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রশ্নাতীত। দেশের নাগরিক ও শ্রমিক হিসেবে ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি বিশেষ করে চা বাগানের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। একই সাথে শিক্ষা ও সচেতনার অভাবে চা বাগানের জনগোষ্ঠীর অধিকার সচেতনতার জায়গাটিও বেশ নাজুক এবং সামাজিক নানা কুসংস্কার ও প্রথা বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের বিকাশ, মতপ্রকাশ ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবন্ধক। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট  থেকে শুরু করে অদ্যবধি চা বাগানের নারীরা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রয়াস থেকে ব্যর্থ। যদিও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন চা বাগানের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে তারপরও চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও বৈচিত্রময় প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় তা অপ্রতুল। আর নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট গঠন প্রায় একদশকের দাবী। চা বাগানে সরকার ও চা বাগান মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন কাজ করলেও নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট তৈরি করা একটি সময়ের দাবি ছিল। আর এ দাবি বাস্তবে রুপান্তর করতে অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স (বিটিএস) এর চা বাগানের কাজের অভিজ্ঞতা ও ২৫টি বাগানের নারী ও কিশোরী দলের সাথে কাজ করার প্রেক্ষাপটে চা বাগানের নারী শ্রমিক, অন্য নারী ও কিশোরীদের জন্য একটি সংগঠন চা বাগান প্রেক্ষাপটে বেশ বড় ভূমিকা  রেখে চলেছে।

প্রকল্পের সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী বলেন, বাস্তবতা ও  প্রেক্ষাপটের বিবেচনায়, অক্সফ্যাম ও ব্রেকং দ্যা সাইলেন্স এর উদ্যোগে ২০২২ সালের  ফেব্রæয়ারি মাসে শ্রীমঙ্গলে ‘আমরা পারবো’ জোট এর আতœপ্রকাশ ঘটে। চা বাগানের সকল স্তরে নারী ও কিশোরীদের নির্যাতনমুক্ত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা এই সংঘের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে সংঘটি তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।  নারীর বিরুদ্ধে যেখানেই কোন অপরাধ হচ্ছে বা হবে সে বিষয়ে নিজ অবস্থান থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করা, নিজ বাগানে নারী ও কিশোরীদের নিয়ে ছোট দল তৈরী করে তাদেরকে অধিকার সচেতন করা এবং দলের সদস্যদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতন প্রতিরোধে চা বাগানে যে সকল সংগঠন  ও প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি কাজ করছে তাদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, চা বাগানে পিছিয়ে পড়া নারী ও কিশোরীদের উন্নয়নে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরপাদ ও ন্যায্য কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে কাজ করা, চা বাগানের শিশু ও কিশোরীদের শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করা, চা বাগানে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কাজ করা, চা বাগানে শ্রমিক ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সর্বস্তরের নারীর সম-মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর শ্রীমঙ্গল প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, সিলেট বিভাগের ৩ টি জেলার ১১ টি উপজেলার ২৫ টি চাবাগানে উক্ত জোটের কার্যক্রমকে সিলেট আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে নানা কার্যকম অব্যাহত রয়েছে।

ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের শ্রীমঙ্গল প্রকল্প অফিসের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর-লিডার প্রজেক্ট পারভেজ কৈরী  বলেন, এ প্রকল্পটির উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে কয়েকটি কাজ হলো সক্ষমতা উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা, আমরা পারবো-নারী ও কিশোরী সংঘ গঠন, কমিউনটির চা বাগানের নারী শ্রমিক এবং কিশোরী দলে নিয়মিত মাসিক সভা আয়োজন, চাবাগানের নারী ও কিশোরী মেয়েদের জন্য জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ আয়োজন, জেন্ডার টক বা নারী পুরুষের  বৈষম্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, সমঝোতা, যোগাযোগ এবং নেতৃত্ব উন্নয়ন বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান, জেন্ডার বিষয়ে সচেতনতাবৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন, সরকারি কর্তৃপক্ষ, চাবাগান মালিক ও বাচা এর মধ্যে ডায়ালগ সেশন আয়োজন করা,  স্টেকহোল্ডারদের সাথে লার্নিং শেয়ারিং মিটিং আয়োজন করা ইত্যাদি।

প্রসঙ্গত, প্রকল্পটি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার ২৫ টি চা-বাগান নিয়ে কাজ করছে।


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024