আজ বৃহস্পতিবার ২৮ সেপ্টেম্বর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আজকের এদিনে পৃথিবীতে আগমন করেন শেখ হাসিনা। সেই ছোট্ট হাসু এক এক করে ৭৭ বছরে পা রাখলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৮৯ সালের ১১ আগষ্ট  থেকে বারবার প্রাণে মেরে ফেলার নগ্ন আয়োজন হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। শুধু প্রাণে বেচেঁই যাননি, বরং হয়েছেন মহান মুক্তিযোদ্ধে নেতৃত্বধানকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতি, হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্জন করেছেন অনেক সম্মানসূচক ডিগ্রিও। এমন গৌরাম্ভিত নারীর জন্মদিনে উপহার দেয়া তো সুদূরের কথা, তাঁকে সম্বোধনের ভাষাও আমার মতো অখ্যাত সাংবাদিকের নিতান্তই  ম্রিয়মান। তবে এতটুকু নিশ্চিন্তে বলতে পারি, ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে আসা তিনি শুধু বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা নন, বরং তিনি ‘রাজকন্যা’ বটে। ধ্বংসস্তূপের 'রাজকন্যা’ শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মদিনে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি করছি। তিনি যেনো হালজমানায় অন্তিম শয্যায় শায়িত গণতন্ত্র এবং লুণ্ঠিত নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করে মানুষের প্রাণের দাবি ভোটাধিকার নিশ্চিত করেন।  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় মুজিব-ফজিলাতুন্নেছার ঘর আলোকিত করে যে ফুটফুটে শিশুটির জন্ম হয়েছিল, তিনি একদিন একটি রাজনৈতিক দলের শুধু প্রধানই হবেন না, বরং একটি স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীও হবেন; এমনটি হয়তো কখনো ভাবেননি স্বয়ং মুজিব-ফজিলাতুন্নেছা দম্পতিও।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ফাঁকা মাঠের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচিটিয়া বিজয়ে পর ১২ জানুয়ারি শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় ২৩ জুন তিনি প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

২০০১ সালের নির্বাচনে দল আওয়ামী লীগ পরাজয়বরণ করলে শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাকালে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৯ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ হাসিনা ৩টি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই নির্বাচনের পরেই দেশ থেকে সামরিক আইন প্রত্যাহার করে সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেখ হাসিনা নব্বইয়ের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে গুরুপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তীব্র আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। তিনি রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের জন্য রাজনৈতিক দলসহ সকলকে সংগঠিত করেন।

১৯৯৬ সালে বিএনপি’র একক নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। ফলে ৩০ মার্চ তৎকালীন খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগ করে।

২০০৯ সালে সরকার পরিচালনায় দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল স্থাপনের জন্য আইন প্রণয়ন করে। ওই আইনের আওতায় স্থাপিত ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।

শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রসংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতিও হয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ হাসিনা। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ওই সময় পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। পরবর্তীকালে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয়ে ৬ বছর ভারতে অবস্থান করেন। ১৯৮০ সালে ইংল্যান্ডে থেকে তিনি স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষ করে অবশেষে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পরপরই তিনি শাসকগোষ্ঠির রোষাণলে পড়েন। বারবার কারান্তরীণ করাসহ তাঁকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র হামলা করা হয়।

১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাঁকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে দু'বার গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। ১৯৮৫ সালের ২রা মার্চ তাঁকে আটক করে প্রায় ৩ মাস গৃহবন্দী করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাঁকে গ্রেফতার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেফতার হয়ে গৃহবন্দী হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে সংসদ ভবন চত্বরে সাবজেলে পাঠায়। প্রায় বছরখানেক পর ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি মুক্তিলাভ করেন।

শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে উল্লেখযোগ্য হামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে তাঁকে লক্ষ্য করে পুলিশের গুলিবর্ষণ। এতে যুবলীগ নেতা নূর হোসেন, বাবুল ও ফাত্তাহ নিহত হন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তাঁকেসহ তাঁর গাড়ি ক্রেন দিয়ে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিংয়ের সামনে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে এরশাদ সরকারের পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও ৩০ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেন। লালদীঘি ময়দানে ভাষণদানকালে তাঁকে লক্ষ্য করে দুইবার গুলিবর্ষণ করা হয়। জনসভা শেষে ফেরার পথে আবারও তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়া হয়।

১৯৯১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন চলাকালে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে ঈশ্বরদী রেল স্টেশনে তাঁর কামরা লক্ষ্য করে অবিরাম গুলিবর্ষণ করা হয়। খোদ শেখ হাসিনার ক্ষমতাকালে ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় হেলিপ্যাডে এবং তাঁর জনসভাস্থলে ৭৬ কেজি ও ৮৪ কেজি ওজনের দু’টি বোমা পুতে রাখা হয়। শেখ হাসিনা পৌঁছার পূর্বেই বোমাগুলো সনাক্ত হওয়ায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তাঁকে লক্ষ্য করে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা হয় ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট। ওইদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে এক জনসভায় বক্তব্য শেষ করার পরপরই তাঁকে লক্ষ্য করে এক ডজনেরও বেশি আর্জেস গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। লোমহর্ষক ওই হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিনী আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মী নিহত হন। আহত হয় পাঁচ শতাধিক মানুষ। শেখ হাসিনা নিজেও কানে আঘাত পান।

শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানাবিধ প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোটের স্লোগানে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো ছিল কৃষকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প।

২০০৯-২০১৩ মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকারের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবার জন্য সারাদেশে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার কমিনিউটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৩৮.৪ থেকে ২০১৩-১৪ বছরে ২৪.৩ শতাংশে হ্রাস, জাতিসংঘ কর্তৃক শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ। শিক্ষার গুণগত মান তলানিতে ঠেকলেও 

২০১৪ সালের পর এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীতকরণ, দুই দেশের মধ্যে ৬৮ বছরের সীমানা বিরোধের অবসানের লক্ষ্যে ভারতের পার্লামেন্ট কর্তৃক স্থল সীমানা চুক্তির অনুমোদন এবং দুই দেশ কর্তৃক অনুসমর্থন।

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি এবং পুরস্কার প্রদান করে।

যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন, ব্রিজপোর্ট, ব্যারি, জাপানের ওয়াসেদা, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে, বিশ্বভারতী, ত্রিপুরা, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক, রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিপ্লোমা প্রদান করে।

সামাজিক কর্মকাণ্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে।

শেখ হাসিনা ‘জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর সভাপতি। গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দরিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। প্রযুক্তি, রান্না, সঙ্গীত এবং বই পড়ার প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে।

২০ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে যখন শেখ হাসিনার বিয়ে হয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। তখন তাঁর বাবা মুজিব কারাগারে। মুজিবের বিরুদ্ধে তখন রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা (আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা)। কথা ছিল, ছেলেপক্ষ বিয়ের কথাবার্তা পাকা করতে আসবে। পিতা কারামুক্ত হলে অনুষ্ঠান করে কনে তুলে নিয়ে যাবে। পরে খবর এলো না, একই দিন ছেলেপক্ষ বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে ফেলতে চায়। অনুষ্ঠান মেয়ের বাবা কারাগার থেকে ছাড়া পেলে হবে। বিয়ের অনুষ্ঠান যত ছোট এবং অনাড়ম্বরই হোক না কেনো, কিছু খরচপাতির ব্যাপার আছে। খাওয়াদাওয়ার আয়োজন তো করতে হবে। আত্মীয়স্বজনের সহায়তায় তারও একটা ব্যবস্থা হলো। বিয়ের পর বর-কনে বঙ্গবন্ধুকে (তখনো তিনি বঙ্গবন্ধু খেতাবে ভূষিত হননি) কারাগারের গেটে গিয়ে সালাম করে আসেন। তাঁর স্বামী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠ পুত্র সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশারদ। তাঁর একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন। শেখ হাসিনার নাতি-নাতনীর সংখ্যা সাত জন। আজ ধ্বংসস্তূপের রাজকন্যার ৭৭ তম জন্মদিনে বলতে চাই, কোনো রাষ্ট্রে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হলে মানুষ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়। ফলশ্রুতিতে অপরাধীরা দিন দিন শক্তিশালী হয়ে উঠে। প্রতিবাদকারীরা জুলুমের শিকার হন। ন্যায় বিচারক প্রতিষ্ঠা না হলে মানবাধিকারের রূপ ধারণ করে ক্ষতবিক্ষত। ক্ষমতাসীন পদ তলায় পৃষ্ঠ হয়

গণতন্ত্র। মানবতা 'আয়নাঘরে' আহাজারি করে। মানুষের ভোটাধিকার লুণ্ঠনের শিকার হয়। বাকস্বাধীনতা ওঠে বাকরূদ্ধ। আইনের দোহাই দিয়ে স্বাধীনতা শৃঙ্খলিত করা হয়। হরণ করা হয় গণতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রের খোলসের ভেতরে দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থ পাচার আজ মহামারী আকারে রূপ নেয়। গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যা, ধর্ষণ সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যায়। এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে, সবার আগে প্রয়োজন অন্তিম শয্যায় শায়িত গণতন্ত্রকে উদ্ধার করে মানুষের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। লুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নিশ্চিত করা।

মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট আকুল আবেদন, ধ্বংসস্তূপের রাজকন্যা শেখ হাসিনার নেক মকসুদ পূরণসহ অসৎ বাসনা ধ্বংস করে দেন। আমীন। ছুম্মা আমীন। 

[এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক]

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024