|
Date: 2023-10-02 11:11:40 |
◾ মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ : বর্তমান সময়ে চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা কি ? প্রশ্নের উত্তরে সহজেই বলা যায় চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা টাকা। কারণ, বর্তমান সময়ে চাকরি প্রার্থীর যোগ্যতায় নয় বরং পরিবারের টাকার উপর নির্ভর করে। পরিবারের টাকার পরিমাণটা বেশি হলে তবে সে প্রথম শ্রেণীর চাকরি প্রত্যাশা করে, একটু কম হলে মধ্যম বা নিম্ন শ্রেণির চাকরি। আর যদি পরিবারের টাকা উল্লেখযোগ্য পরিমানে না থাকে তাহলে যোগ্যতা থাকার পরেও চাকরি নয় বরং হতাশা ও টাকার আফসোসই শেষ পরিণতি।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে পরিবারের টাকার সাথে চাকরির কি সম্পর্ক? চাকরি হয় চাকরি প্রার্থীর যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে। এখানে পরিবারের টাকা থাকলো বা না থাকলো তাতে কি? এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় হুম, চাকরি যোগ্যতার উপর ভিত্তি করেই হয় তবে তা টাকার যোগ্যতা মানে ঘুষ। বর্তমান চাকরির বাজারে নিয়োগে ঘুষ নেই এমন চাকরি খুজে পাওয়া দায়। অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে বড় কর্মকর্তা, প্রত্যেক পদেই নিয়োগে ঘুষ দিতে হয় কয়েক লক্ষ টাকা। এমনকি অফিস সহকারী পদে নিয়োগ পেতে হলেও দিতে ৭/৮ লক্ষ টাকা আর একটু বড় কর্মকর্তা হতে গেলে গুনতে হয় ২০/২৫ লক্ষ টাকা। এ-তো সাধারণ চাকরির বাজার, এখন একটু ডিফেন্সের চাকরির বাজার নিয়ে ভাবা যাক। ডিফেন্স বলতে আমরা সাধারণ বুঝি বাহিনীকে। যারা সমাজে শৃঙ্খলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। তবে এই শৃঙ্খলা রক্ষার বাহিনীতেও নিয়োগে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারি ঘুষ নামক অনিয়মের অভিযোগ অহরহ। সাধারণত এই সকল বাহিনীতে নিয়োগে দিতে হয় ১২/১৫ লক্ষ টাকা তবে তা যদি একটু বড় কর্মকর্তার চাকরি হয় তাহলে টাকার পরিমাণটা হয়ে দাঁড়ায় দ্বিগুণ ।
মোটকথা বাংলাদেশে প্রায় সকল ধরনের সরকারি চাকরিতেই ঘুষের ছড়াছড়ি। ঘুষ যেন এক অতি লাভবান বানিজ্যে পরিনত হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন প্রতিবছর বাংলাদেশে সরকারি চাকরির পদ ফাঁকা হয় প্রায় ৫০ হাজার। এরমধ্যে ২ হাজার পদে নিয়োগ পায় পিএসসি কর্তৃক নির্বাচিত চাকরি প্রত্যাশিরা। বাকি ৪৮ হাজার পদের প্রায় ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৩৬ হাজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ঘুষের মাধ্যমে। যা মোট ফাঁকা পদের প্রায় ৭০ শতাংশ, অর্থাৎ দেশের চাকরির বাজারের সিংহভাগ চাকরিই হয় ঘুষের মাধ্যমে। এতে করে একদিকে যেমন প্রকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরা চাকরি পাচ্ছে না অপরদিকে অযোগ্য লোক গুরুত্বপূর্ণ পদে বসায় তারা দেশের উন্নয়নেও তেমন ভুমিকা রাখতে পারছে না। বিষেশ করে এই ঘুষ বানিজ্যের কারণে সমাজে অসমতা সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজে ধনী শ্রেণির লোকরা টাকার মাধ্যমে তাদের সন্তানকে কে চাকরি যোগাড় করে দিতে পারলেও সমাজের গরিব মানুষেরা সহায়-সম্বল হারিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা করানোর ফলে পর্যাপ্ত টাকার অভাবে ঘুষের মাধ্যমে সন্তানকে চাকরি যোগাড় করে দিতে পারছে না।
এতে করে সমাজের ধনীরা চাকরির মাধ্যমে আরো ধনী হলেও আগে থেকে সমাজের পিছিয়ে পরা গরিবরা বেকারত্বের কারণে আরো পিছিয়ে পরতেছে। যা সমাজে ধনী এবং গরিবের শ্রেণি বৈষম্য আরো স্পষ্ট করতেছে। শুধু তাই নয়, সমাজের নিম্ন বা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা যখন সহায়-সম্পত্তি হারিয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাজারের ঘুষ বানিজ্যের কারণে চাকরি পায় না তখন তারা জীবিকার তাগিদে নানান অপরাধ মূলক কাজে নিজেকে জরাতে বাধ্য হয়। যা পরবর্তীতে দেশ ও জাতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিছু শিক্ষার্থী বেকারত্বের গ্লানি নিতে না পেরে আত্নহত্যার মতো জঘন্য কাজ করে পরপারে পারি জানাচ্ছে। আবার একশ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঘুষের কারণে দেশে চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে পারি জানাচ্ছে বিদেশে যা মেধা পাচারের অন্যতম কারণ।
খুঁজলে হয়তো ঘুষের কারণে এরকম হাজারো ক্ষতিকর দিক খুজে পাওয়া যাবে। যে ক্ষতি গুলো শুধু ব্যাক্তির নয় বরং দেশেরও। যা দেশের অর্থনীতি, উন্নয়ন ও শাসননীতিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতেছে।
ঘুষ নামক এমন ক্ষতিকর প্রক্রিয়া যদি বন্ধ করা না যায় তাহলে এটি সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পরার মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবক্ষয় ঘটাতে পারে। এজন্য এটি বন্ধে প্রশাসনকে ও প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদেরকেও সোচ্চার হতে হবে। প্রশাসনের উচিত ঘুষের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া। ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্য কঠোর শাস্তির আইন প্রনয়ণ ও তার বাস্তবায়ন করা।
ঘুষ বানিজ্য বন্ধে সবথেকে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে সাধারণ জনগণ অর্থাৎ চাকরি প্রার্থী ও তার পরিবার। চাকরি প্রার্থী যদি ঘুষের মাধ্যমে চাকরি না নেয় বরং ঘুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তবেই ঘুষ প্রত্যাশিরা ঘুষ না নিয়েই চাকরি দিতে বাধ্য হবে। শুধু চাকরি প্রার্থী বা তার পরিবার নয় বরং আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ জায়গা থেকে ঘুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। আমাদের মধ্যে যারা ঘুষ প্রত্যাশি তাদের উচিত এই দেশ এবং দেশের জনগণের সার্থে ঘুষ নেওয়া বন্ধ করা, তাহলে তারাও দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবে। এতে করে ঘুষ নামক এই অভিশাপ হয়তো বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিদায় নিবে। যা সমাজে প্রতিষ্ঠা করবে সাম্যতা। পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীও চাকরির উপর ভর করে এগোতে পারবে সামনের দিকে । তারাও দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করার সুযোগ পাবে। আর এমন একটি সাম্য ও ঘুষ মুক্ত দেশ সকলেরই কাম্য।
লেখক : মোহাম্মদ শাকিল আহমেদ
শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, ঢাকা কলেজ।
© Deshchitro 2024