|
Date: 2022-10-02 08:24:49 |
◾ আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ ঘোষণার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। সংযুক্ত করা নতুন এলাকাগুলোকে যেকোনো মূল্যে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘোষণার মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকিও রয়েছে। পুতিনের এই ঘোষণার একদিন পরেই দোনেৎস্ক অঞ্চলের লিমান শহর দখল করেছে ইউক্রেনের বাহিনী। ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ ঘোষণা, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রচ্ছন্ন হুমকি ও রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলোতে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ সব মিলিয়ে যুদ্ধ পরিস্থিতি মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শনিবার বার্তাসংস্থা এপির বৈশ্বিক সংবাদ বিভাগের উপপরিচালক তামের ফাকাহানি এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইতিহাসে কিছু মুহূর্ত রয়েছে যেগুলো মানবজাতির সামনে ভয়াবহ চেহারা নিয়ে হাজির হয়। এই শতাব্দিতেই আমরা নাইন-ইলেভেনের হামলা, দুই বছর পর সাদ্দাম হোসেনের ইরাকের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ, ২০২০ সালে করোনভাইরাস মহামারিতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু এবং অতি সম্প্রতি রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে ইউরোপে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ ফিরিয়ে আনার মুখোমুখি হয়েছি। শুক্রবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের একটি বড় অংশকে অবৈধভাবে সংযুক্ত করার চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন। ওই মুহূর্তটি আগের ঘটনাগুলোর মতোই উদ্বেগজনক।
ফাকাহানি লিখেছেন, প্রায় সাত মাস ধরে চলা সংঘাতের মধ্যে ক্রেমলিনের নেতারা প্রায়ই পারমাণবিক হামলার হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে পুতিন বেশ প্রশান্তভাবে ‘সব ধরনের প্রয়োগযোগ্য উপায়ে’ নতুন সংযুক্ত অঞ্চলগুলোকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিলেন। এই ঘোষণার পরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন করে পাল্টা জবাব দেন। তিনি রাশিয়াকে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইছেন।
নিবন্ধে লেখা হয়েছে, আশির দশকের শেষে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ এবং যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান স্নায়ুযুদ্ধ ও পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কার অবসান ঘটিয়েছিলেন। সমঝোতার এমন উদ্যোগ এখন অতীতের কথা। জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ভয়াবহতা এখনও মানবতাজাতির সম্মিলিত চেতনায় দগদগে অবস্থায় রয়েছে।এরপরেও বিশ্ব আবার পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।
ফাকাহানি লিখেছেন, যুদ্ধক্ষেত্রে একের পর এক অপমানজনক বিপর্যয়ের পর পুতিন এটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, নতুন সংযুক্ত অঞ্চলগুলোতে যে কোনো আক্রমণ রাশিয়ার ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশাল অস্ত্রাগার থেকে পারমাণবিক অস্ত্রসহ যেকোনো উপায় ব্যবহারের বিষয়ে তিনি যে কোনো ধাপ্পাবাজি করেননি সেটিও বোঝা যায়।
বেলারুশে যুক্তরাজ্যের সাবেক রাষ্ট্রদূত হিসেবে কর্মরত ছিলেন নাইজেল গোল্ড ডেভিস। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের রাশিয়া এবং ইউরেশিয়ার সিনিয়র ফেলো হিসেবেও কাজ করছেন।
ডেভিস বলেন, ‘আমরা একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল মুহূর্তে রয়েছি। রাশিয়া এখন আগের চেয়ে আরও চরম কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। রাশিয়ার মধ্যপন্থী উপায়ে যুদ্ধ জয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। পুতিনকে এখন ব্যবস্থার পরিধি ও তীব্রতা বাড়াতে হবে। ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে সংযুক্ত করা ও পারমাণবিক হুমকি দেখেই বোঝা যায় রাশিয়া এ ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের স্বীকৃতি পাবে না। এমন সময়ে যুদ্ধে লড়াই করার জন্য ডাকা হাজার হাজার রুশ পুরুষ রাশিয়া থেকে পালিয়ে যাচ্ছে।
চার অঞ্চলকে রাশিয়ায় সংযুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্বাস গ্যালিয়ামভ বলেন, ‘এটি একরকম পরিস্থিতির প্রতি সাড়া দেওয়ার চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে। এটি বেশ করুণ দেখাচ্ছে। ইউক্রেনীয়রা বাস্তব জগতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। অন্যদিকে বাস্তব জগতে সাড়া দিতে অক্ষম ক্রেমলিন এক ধরণের ভার্চুয়াল বাস্তবতা তৈরি করছে।
তিনি বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর পশ্চিমাদের কাছে অপমানিত হওয়ার অনুভূতি পুতিনের কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। এটা সত্য যে চেচনিয়া এবং সিরিয়ায় ঘটানো নৃশংসতাগুলো গুরুতর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ থেকে রক্ষা পেয়েছে। একারণে পুতিন হয়ত মনে করছেন একটি সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়াকে পুনর্গঠনের জন্য তার যা ইচ্ছা করার অধিকার রয়েছে। তবে এবার সেটি হচ্ছে না।’
ফাকাহানির মতে, রাশিয়ার হাত থেকে দখল করা অঞ্চল মুক্ত করতে ইউক্রেনকে শত কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের দেশগুলো। এটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, যুদ্ধে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রের মতো অপ্রচলিত কিছু ব্যবহার করলে দেশটির জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।
ফাকাহানি লিখেছেন, পুতিনের শুক্রবারের (৩০ সেপ্টেম্বর) সিদ্ধান্তের পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ আরও বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। প্রশ্ন হলো, একটি বড় ধরনের যুদ্ধ কি পৃথিবীর জন্য এমন ধ্বংসাত্মক ফল বয়ে নিয়ে আসছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে দেখা যায়নি?
© Deshchitro 2024