|
Date: 2023-10-06 07:13:23 |
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সিকিমে ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে চারজন সেনা সদস্য রয়েছেন।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) সকালে টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তার ভাটি এলাকা জলপাইগুড়ির গাজলডোবা, ময়নাগুড়ি ও কোতোয়ালিতে বেশিরভাগ মরদেহ পাওয়া গেছে। এছাড়া কোচবিহারের কুচলিবাড়ি ও হলদিবাড়ি, মিলনপল্লী ও শিলিগুড়িতে তিস্তা ব্যারেজ এলাকায়ও মরদেহ পাওয়া গেছে। কয়েকটি লাশ ভেসে এসেছে বাংলাদেশের গাইবান্ধাতেও।
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, বন্যায় আহত ২৬ জনকে সিকিমের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া লাচেন এবং লাচুং এলাকায় প্রায় ৩ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী সচিব বিজয় ভূষণ পাঠক বলেন, বিভিন্ন যানবাহনের ৭০০ থেকে ৮০০ চালক সেখানে আটকা পড়েছেন। এ ছাড়া শুধু মোটর সাইকেলে যাওয়া ৩ হাজার ১৫০ যাত্রী সেখানে আটকা রয়েছন। আমরা তাদের বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এসএসডিএমএ) জানিয়েছে, প্রায় ৩ হাজার বিদেশি পর্যটক সেখানে আটকা পড়েছেন। তাদের মধ্য থেকে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিংটাম, মাঙ্গান, নামচি এবং গ্যাংটক এলাকা। সেখানে কমপক্ষে ২৭৭টি বাড়ি ধসে গেছে।
বন্যাদুর্গতদের জন্য ২৭টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ত্রাণ ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বলছে, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় ওই রাজ্যে মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৪০ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যা অন্যান্য বছরের একই সময়ের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ। সিকিমে এ ধরনের আকস্মিক বন্যা নিয়মিত ঘটনা। বিশেষত জুন থেকে শুরু হওয়া বর্ষা মৌসুমে। তবে অক্টোবরের শেষ নাগাদ এ ধরনের বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়।
গত বুধবার ভোরে চুংথামে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়। সেখানে লোনাক লেকের পানি প্রবল বেগে এসে মেশে তিস্তার সঙ্গে। তিস্তার চকিত বন্যায় ভেসে যায় আশপাশের বাড়িঘর, মানুষজন।
সিকিম সরকারের মুখপাত্র বলেছেন, তিস্তা ব্যারাজ স্টেজ ৩-এ কর্মরত অন্তত ১৪ জন শ্রমিক টানেলে আটকে আছেন। নির্মীয়মান একটা অংশও ভেসে গেছে।
তিস্তার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গজলডোবা বাঁধ। তাই সেখান থেকে এখন প্রবল পরিমাণে পানি ছাড়া হচ্ছে। এতে জলপাইগুড়িতে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশেও বন্য়া পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে সিকিমে বন্যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলেও। তিস্তা অববাহিকার লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরে বন্যার পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগ ও বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, নিম্নচাপের কারণে হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে আসা পানি মিলিয়ে এই পরিস্থিতি অন্তত আরো দুই দিন অব্যাহত থাকবে।
পূর্বাভাসে জানানো হয়, গত কয়েক দিন ধরেই ভারতের সিকিমে টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গল ও বুধবার মাঝরাতের পর অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এতে তিস্তায় পানির পরিমাণ খুব বেড়ে যায়। এ সময় জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বাংলাদেশে পানি ঢুকে পড়ে। এতে উত্তরাঞ্চরে তিস্তা নদী তীরবর্তী লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
© Deshchitro 2024