শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের কুচনীপাড়া কুরুয়া গামী সড়কের পশ্চিম পাশে একটি ধানক্ষেত থেকে অটোচালক শাহ আলম (৪১) এর লাশ ৮ অক্টোবর রোববার সকালে ঝিনাইগাতী থানার পুলিশ উদ্ধার করার একদিন পর মূল হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী মো. সবুজ মিয়া (৩৯) ও অপর সহযোগি মো. রূপন (২০) কে গ্রেফতার করেছে ঝিনাইগাতী থানার পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি পুলিশ। 

ধৃত হত্যাকারীদ্বয়রা হলো- গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর উপজেলার চান্দনা চৌরাস্তা ইটাহাটা গ্রামের শাহ জাহান মিয়ার ছেলে মো. সবুজ মিয়া বর্তমান শ্বশুরালয়ে অবস্থান ঝিনাইগাতী উপজেলার গিলাগাছা ও অপর সহযোগি ঝিনাইগাতী উপজেলার ছোট মালিঝিকান্দা গ্রামের আঃ রহিমের ছেলে মো. রূপন। 

চাঞ্চল্যকর ক্লুলেস অটোচালক শাহ আলম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে ৯ অক্টোবর সোমবার সকাল ১১টায় পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম সেবা’র সভাপতিত্বে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, শ্রীবরদী উপজেলার ধাতুয়া আড়াইলাকান্দা গ্রামের জনৈক জসিম উদ্দিন ফকিরের ছেলে শাহ আলম গত ৭ অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় তার ব্যাটারী চালিত অটোরিকসা নিয়ে জীবিকার তাগিদে যাত্রী পরিবহনের জন্য আবু রায়হানের গ্যারেজ থেকে বের করে যাত্রীর সন্ধানে যায়। এদিকে অটো ছিনতাই পরিকল্পনকারী মো. রূপন মো. সবুজ মিয়াকে বলেন যে একটি অটোরিকসা ছিনতাই করতে পারলে সে বিক্রয় করে দিতে পারবে। এক কথায় মো. সবুজ মিয়া রাজী হয়ে যায় এবং ৭ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে তারা পরিকল্পনা মাফিক ঝিনাইগাতী উপজেলার কুচনীপাড়া বাজারে যাত্রী পরিবহনে অপেক্ষামান শাহ আলমের অটোরিকসা ৫শত টাকার ভাড়া নেয়। পরে ছব্দবেশী ছিনতাইকারী মো. সবুজ মিয়া ও রূপন রাতের আধারে ওই অটো রিকসায় বিভিন্নস্থানে ঘোরাফেরা করে এক পর্যায়ে তারা বাকাকুড়া বাজারে গিয়ে একটি লাইলনের রশি ক্রয় করে এবং ৫শত টাকার ভাড়ার মধ্যে ৫০ টাকা দিয়ে বলে বাকী ৪৫০ টাকা পরে দিবে। পরে তারা ওই অটোরিকসা থেকে নেমে পরে। এসময় অটোরিকসা চালক শাহ আলম তার অটোরিকসা নিয়ে কিছুদূর যেতে না যেতেই মো. সবুজ মিয়া শাহ আলমকে মোবাইল ফোনে বলে কুচনীপাড়া এলাকায় এসে তার পাওনা ৪৫০টাকা নিয়ে যেতে। পরে সে তার অটোরিকসা নিয়ে ওই স্থানে আসলে মো. রূপন ও মো. সবুজ মিয়া পুনরায় অটোরিকসা উঠে বসে এবং কুচনীপাড়া কুরুয়া সড়কে যেতে বলে। পরে কুচনীপাড়া কুরুয়া সড়কের নির্জনস্থানে পৌছামাত্র লাইলন রশি শাহ আলমের গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর তার অটোরিকসা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। পরে শাহ আলমের ছিনতাই হওয়া অটোরিকসা রাতে কোথাও বিক্রি করতে না পেরে অবশেষে শ্রীবরদী উপজেলার বালিয়া চন্ডী পশ্চিমপাড়া গ্রামের জনৈক আবুল হোসেনের বাড়ীর আঙ্গীনায় ফেলে রেখে যায় ওই হত্যাকারীরা। এদিকে গভীর রাতে শাহ আলম বাড়ীতে না ফেরায় তার স্ত্রী মোছা. মোরশেদা বেগম চিন্তিত হয়ে পরে। অপরদিকে রোববার সকাল ৮টায় দিকে স্থানীয় লোকজনের মুখে জানতে পারে কুচনীপাড়া কুরুয়া সড়কের পশ্চিম পাশে সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল হকের ধান ক্ষেতের ডোবা পানিতে শাহ আলমের লাশ পড়ে আছে। পরে তার স্ত্রীসহ পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থল গিয়ে শাহ আলমের লাশ শনাক্ত করেন। এঘটনায় ঝিনাইগাতী থানায় ওইদিন অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নং-৯, তাং- ৮/১০/২০২৩ইং। 

মামলা দায়েরের পর চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস শাহ আলম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ সুপার মোনালিসা বেগম পিপিএম এর নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অবস্) খোরশেদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান ও সহকারি পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) দিদারের তত্বাবধানে ঝিনাইগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল আলম ভূইয়া, জেলা গোয়েন্দা শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু বক্কর সিদ্দিক, ঝিনাইগাতী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব ভৌমিক, মো. ফরিদ উদ্দিন, তোফাজ্জল হোসেন, শফিকুর রহমান ও তথ্য প্রযুক্তির শাখার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশিকুর রহমান সঙ্গীয় ফোর্সসহ প্রথমে মো. সবুজ মিয়াকে শ্রীবরদী উপজেলা থেকে এবং মো. রূপনকে ঝিনাইগাতী উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। 

ধৃত হত্যাকারীরা পুলিশের কাছে হত্যা পরবর্তী অটোরিকসা ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেছেন। পরে ধৃত আসামীদ্বয়কে ১৬৪ ধারা জবান বন্দির জন্য ৯ অক্টোবর সোমবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024