|
Date: 2023-10-17 04:15:40 |
◾শেখ আব্দুল্লাহ : দিন যাচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, কর্মসংস্থান ইত্যাদিতে আমূল-পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যাবহার এবং হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে সকল ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনেক পেশার বিলুপ্তি ঘটেছে এবং অনেক নতুন নতুন পেশা সৃষ্টি হচ্ছে। চাইলেই হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে টাকা ইনকাম এবং চাকরির আবেদন করা যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস আসার পরে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়েছে এবং এরই সাথে রাশিয়ার-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির কারনে চাকরি হারা মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ দিশাহারা অবস্থায় পড়েছে। মানুষের জীবন-সংসার চালাতে দরকার একটা চাকরির। তাই প্রতিটি চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তি ছুটছে চাকরির পিছনে; কোথায় পাওয়া যায় ভালো বেতনের চাকরি। তাই এরই সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু অনলাইন চক্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার করে যাচ্ছে। ফলে একজন চাকরি প্রত্যাশী ব্যক্তি এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছেন।
প্রথমে এই প্রতারক চক্রের দল বিভিন্ন নামি-দামি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ভুয়া সার্কুলার দিয়ে থাকে এবং নিজেদের ব্যাক্তিগত নাম্বার দিয়ে চাকরির আবেদন করার টাকা পে করতে বলে। পরবর্তী পোস্টিং-এর নাম করে বিভিন্ন মেয়াদে ধাপে ধাপে ভিক্টিমের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেই। প্রতারক চক্র নিজেদের অফিস হিসেবে ভুয়া ফ্লাট বাসার ঠিকানা ব্যবহার করে। যদি ঠিকানা অনুযায়ী যাওয়া হয় দেখা যায় সেখানে কোনো অফিস নেই বা প্রথমে চাকরির আবেদন ফর্ম জমা দিতে গিয়ে অস্থায়ীভাবে সাজানো অফিস দেখতে পেলেও পরবর্তীতে পোস্টিং নাম করে টাকা হাতানোর পর ভিক্টিম অফিসে যেয়ে অভিযোগ করতে গেলে দেখে অফিস সেখানে নেই। প্রতারক চক্র সবকিছু ঘুটিয়ে এবং সমস্ত কন্ট্রাক্ট নাম্বার বন্ধ করে হাওয়া হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় প্রতারণায় স্বীকার হওয়া ব্যাক্তি নির্বাক হয়ে যান।
তাই এ-ধরনের প্রতারণার স্বীকার যেন না হতে হয় এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। মূলত এধরনের প্রতারণার বেশি স্বীকার হয় গ্রাম থেকে উঠে আসে সহজ-সরল নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র ঘরের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থীরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরের বিশ্বিবদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হয়। দরিদ্র পরিবার তার পড়াশোনা খরচ চালাতে হিমশিম খাবে একথা জেনেও শহরে এসে পড়াশোনা করার মতো চ্যালেঞ্জ হাতে নেয়। তারা মনেকরে পড়াশোনা করার পাশাপাশি পার্ট-টাইম জব বা টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে নিবে, কিন্তু শহরে এসে দেখে সবকিছু উল্টো। তারা বাস্তবে পরিলক্ষিত হয়ে দেখে পার্ট-টাইম জব বা টিউশনি দুইটার হাটই মহার্ঘ। তারা বুঝতে পারে শহরে পার্ট-টাইম জব বলতে কিছুই নেই; যা আছে যথাসামাহ্ন, সব ফুলটাইম জব পার্ট-টাইম বলে চালিয়ে দেয়।
একদিকে পরিবার থেকে পড়াশোনা খরচ দিতে পারছেনা, অপরদিকে নিজেও নিজের খরচের টাকা আয় করতে না পেরে একজন শিক্ষার্থী হাতাশার চরম পর্যায়ে চলে যায়৷ ফলে এমতাবস্থায় একজন শিক্ষার্থী এসব প্রলোভন দেখানো চাকরিতে পা দিয়ে প্রতারণার স্বীকার হয়ে থাকে। তাই মফস্বল থেকে উঠে আসা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েগেছে সাত কলেজসহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস। বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকা মুখি হচ্ছে। এসব নবীন শিক্ষার্থীদের সতর্ক হতে হবে এবং সতর্ক করতেও হবে। পরিবার থেকে এসব বিষয়ে অবগত করতে হবে। শ্রেনী শিক্ষকদেরও একজন শিক্ষার্থীকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, আগেই আলোচনা করা হয়েছে এধরণের প্রতারণার স্বীকার হচ্ছে সকল চাকরি প্রত্যাশী মানুষ। তাই প্রতিটি চাকরি প্রত্যাশী মানুষকে নিজ নিজ যায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। চাকরির সার্কুলার সত্যতা যাচাই করে আবেদন করতে হবে। যদি কোনো ব্যাক্তি প্রতারিত হন তাহলে বিলম্ব না করে আইনের সহায়তা নিতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ক্রিমিনাল ইনভেস্টমেন্ট ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই আমরা দুর্ভাগ্যবশত প্রতারণার স্বীকার হলে অবশ্যই আইনের শরণাপন্ন হবো।
• শেখ আব্দুল্লাহ
লেখক ও শিক্ষার্থী
© Deshchitro 2024