◾মুহাম্মদ আবু সালেহ: বিনয় ও আত্মবিলোপ আল্লাহর দেওয়া বান্দার প্রতি অন্যতম আখলাকী একটি গুণ। এটা মানবজাতির প্রতি ইসলামের নির্দেশ ও বটে। আচরণে, উচ্চারণে নিজেকে অন্য যে কারো চেয়ে ক্ষুদ্র মনে করা বিনয়ী। যা আল্লাহর কাছে অতি পছন্দনীয়। আর এটা প্রকাশ পেতে পারে মানুষের ওঠা-বসা, চলা-ফেরা, কথা-বার্তা সর্বক্ষেত্রেই। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দা রাসুল সাল্লাল্লাহু ইসলামকেই বিনয়ী হওয়ার প্রতি আহ্বান করে আয়াত নাযিল করেছেন। যা এই গুণটির গুরুত্ব ও আবশ্যক হওয়ার প্রমাণ বহন করে।


হজরত ইয়াদ ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -'আল্লাহ তাআলা আমার কাছে অহি পাঠালেন যে, তোমরা পরষ্পর বিনয়ী হও। যাতে কেউ কারো ওপর সীমালঙ্ঘন না করে এবং কেউ কারো ওপর গর্ব না করে।' (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ২৪১)


তার প্রিয় বান্দা রাসুলকে সম্বোধন করে বিনয়ী হতে বলেন, যেন মানবজাতি এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যে, মানুষ যত বড়ই হোক না কেন কোন অবস্থাতেই কারো সাথে দম্ভ ও অহংকারী আচরণ করা ঠিক নয়। বরং বিনয় ও আত্মবিলাপের আচরণ করবে। যেন কেউ কারো সামনে নিজের বড়ত্ব ও সম্মান যাহির না করে। কারণ দুনিয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর থেকে কেউ সম্মানী ছিলেন না এবং সামনেও আসবে না। তাকেই যখন বিনয়ী হতে বলা হয়েছে তখন অন্যদের কথা তো বলাই বাহুল্য। আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামকে সম্বোধন করে বলেন মুমিনদের জন্য আপনি আপনার বাৎসল্যের ডানা বিছিয়ে দিন। (সূরা হিজর, আয়াত নং - ১৫)


অন্যত্রে বলেন, আপনি আপনার অনুসারী মুমিনদের জন্য মমতার পক্ষ পুট নুয়ে দিন। ( সূরা শুআরা, আয়াত নং - ২৬)


উক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আত্মবিলোপ ও বিনয় মুমিনের অন্যতম গুণ। তবে যদি কাফের-মুশরিক কখনো মুসলমানদের বিরুদ্ধাচরণ ও দুর্ব্যবহার করে তাহলে তাদের সাথে বিনয় কখনো শোভা পায় না। কারণ তা হবে ঈমানী মর্যাদাবোধের পরিপন্থী। যা মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। এজন্য কোরআন শরীফে শুধু মুমিনের সাথে বিনয়ী হওয়ার প্রতি উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। 


এভাবে আল্লাহ তায়ালা বিনয়ী হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে আরো বলেন, দয়াময় আল্লাহর খাঁটি বান্দা তারা, যারা অহংকারহীনভাবে পথ চলে। (সূরা ফুরকান, আয়াত নং - ২৫) 

এমনিভাবে অহংকার এর বিপরীত দম্ভকে পরিহারের ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন, ভূপৃষ্ঠে দম্ভভরে চলোনা। তুমিতো পদাঘাতে জমিন চিড়ে ফেলতে পারবে না, আর উচ্চতায় পাহাড়কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত নং - ১৭)


বিনয় ও নিরাহংকারের উপকারিতা:- 

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য বিনয়ী ও নিরহংকারী হওয়া আবশ্যক। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ বলেন, কেউ যদি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য বিনয় অবলম্বন করে, তবে আল্লাহ তার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম শরীফ, হাদিস নং- ২৫৮৮)

অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা নিজে বিনয় অবলম্বনকারী, তিনি বিনয়কে ভালোবাসেন এবং তিনি বিনয়, নম্রতা অবলম্বনকারীকে এত বেশি দান করেন যা কঠোরচিত্ত ব্যক্তিকে তা দান করেন না। (বুখারী শরীফ, হাদিস নং - ৬৯২৭)


আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বিনয় ও আত্মবিলোপের মত মহাগুন অর্জন করার তৌফিক দান করুক। আমিন 


লেখক: মুহাম্মদ আবু সালেহ,

সহকারী মুফতি, মারকাযুদ্ দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদ ঢাকা।



প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023