আত্মসমালোচনা বলা হয়- নিজের সমালোচনাকে। আত্মসমালোচনা বলতে বোঝায়, সচেতনভাবে কোনো কাজ সম্পন্ন করা বা পরিত্যাগ করা, যাতে কৃতকর্ম সম্পর্কে নিজের সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। কিছু মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো কোন কারণ ছাড়াই অন্যের সমালোচনা করা। এইসব মানুষ সব শ্রেণি-পেশাতেই দেখা যায়। বুঝে সমালোচনা করে না বুঝে করে। তাও আবার নেতিবাচক সমালোচনাই বেশি করে থাকে । 


অনেক সময় দেখা যায় বন্ধু-বান্ধব, অফিস কলিগ, ব্যবসায়িক পার্টনার, পরিবারের নিকটজন, সমাজের লোকজন একসাথে কথা বলে এবং আড্ডা দেই। একজন বা দুইজন লোক সেই স্থান থেকে উঠে গেলেই, যারা থাকে ঔ মানুষটা সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য শুরু করে দেয়। তাদের সমালোচনায় এতটাই নেতিবাচক হয়, যে অনেক সময় মানুষকে অনেক বড় বিপদের মধ্যে ফেলে দেই। 


সমালোচনা বিভিন্ন কারণে এই মানুষগুলো করে থাকে। যেমন-(১) অন্যের ভাল কোন কিছু দেখতে না পারা (২)অন্যের সফলতাকে হিংসা করা,(৩) নেতা হওয়ার দ্বন্দ্ব, (৪)যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পদ পদবীর লোভ (৫) স্বার্থ ও বেকারত্ব ইত্যাদি। 

তাই বলতে চাই , অন্যের সমালোচনা করা এক ধরনের অপরাধ। আমাদের প্রিয় শান্তির ধর্ম ইসলামের মধ্যে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধ রয়েছে, যেমন-

* আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন ---- হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ অনুমান হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন অনুমান পাপ এবং তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অন্যের গীবত করো না।(১) তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে?(২) বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণ্যই মনে কর। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।

(সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১২)


* রাসূলের করীম সাল্লাহু সাল্লাম হাদিসের ইরশাদ করেন, --আদম ইবনু আবূ ইয়াস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রম হানী বা অন্য কোন বিষয়ে জুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ থেকে মাফ করায়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোনো দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোনো সৎকর্ম থাকলে তার জুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট থেকে নেওয়া হবে আর তার কোনো সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ থেকে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস নং: ২২৮৭)


পরিশেষ  বলতে হবে, যে মানুষগুলো অন্যের সমালোচনা করে তারা আসলেই মানসিকভাবে রোগাক্রান্ত। অন্যের সমালোচনাকারী ব্যক্তি অন্যকে নিয়ে যতটা সময় ব্যয় করে ও মস্তিষ্ক চর্চা করে তা যদি নিজের জন্য করতো তাহলে তারা আরো সমৃদ্ধ হতো। যারা নেতিবাচক সমালোচনা করে তারা কখনো ভালো থাকতে পারে না, সুখী হয় না। তাই অন্যের সমালোচনা করে সময় নষ্ট না করে প্রত্যেক মানুষের উচিত, নিজেকে চেনা এবং আত্মসমালোচনা করা।( তাইতো সক্রেটিস বলেছেন -" নিজেকে জানো"")। এটার মাধ্যমে ব্যক্তির যেমন চারিত্রিক এবং মানসিক উন্নয়ন গঠবে তেমনি আশেপাশের লোকজনও ভালো থাকবে। 


লেখক: গোলাম মহীউদ্দীন (শান্ত) 

শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

ঢাকা কলেজ, ঢাকা


প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024