পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের জেরে শাশুড়িকে হত্যা করেছে জামাই। রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মুকুল চন্দ্র রায় ও মহানন্দ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কনক কুমার দাস (ক্রাইম অ্যাণ্ড অপস) তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এই সব তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগেরদিন সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে চিন্তা ঋষি  (৬৫) নামক এক বৃদ্ধার লাশ তার নিজ বাড়িতে সেফটি ট্যাংক থেকে উদ্ধারের পর ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশি তৎপরতায় ঘটনার কারণ উদঘাটন সম্ভব হয়। এই ঘটনায় মূল আসামি মুকুল চন্দ্র রায় ও তাকে সহযোগী মহানন্দ নামে দু’জনকে গ্রেফাতার করে পুলিশ।

পুলিশ সুপার জানান, প্রায় ছয়-সাত বছর আগে চিন্তা ঋষির মেয়ে রেনু ঋষির সাথে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম এলাকার মৃত খগেশ্বর রায়ের ছেলে মুকুল চন্দ্র রায়ের সাথে। বিয়ের পর রেনু জানতে পারে তার স্বামীর আগের স্ত্রী রয়েছে। এতে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয় এবং রেনু তার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে মায়ের সাথে থাকতে শুরু করে। এরপর আবার সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে রেনু ও মুকুল একসাথে থাকতে শুরু করে।

একপর্যায়ে রেনু কাজের উদ্দেশ্যে গাজীপুরে যায়। সেখানে আল আমিন নামক একজনের সাথে সে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি রেনুর স্বামী মুকুল জানতে পারায় পুনরায় দু’জনের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

সম্প্রতি রেনু আল আমিনকে নিয়ে তার মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে। বিষয়টি জানতে পেরে তাদের হাতেনাতে ধরার জন্য মুকুল চিন্তা ঋষির বাড়িতে আসে। এইদিকে মুকুল আসার আগেই রেনু ও আল আমিনকে কৌশলে সরিয়ে দেয় চিন্তা ঋষি।

এই ঘটনায় চিন্তা ঋষি মেয়েকে সহযোগিতা করায় শাশুড়ি ও জামাইয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে ফোনে রেনুকে ও তার মাকে হত্যার হুমকি দেয় মুকুল। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ অক্টোবর সকাল অনুমানিক ৮ টার সময় চিন্তা ঋষির বাড়িতে আসে মুকুল। রাতে খাওয়া দাওয়া করে মুকুল শ্বশুর বাড়িতেই থেকে যায়। মুকুল পূর্ব দিকের ঘরের বিছানায় এবং চিন্তা ঋষি পূজা করার ঘরের বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েন। সেই রাতেই (৩১ অক্টোবর) আনুমানিক সাড়ে ১২টা থেকে রাত ১টার সময় মুকুল তার শাশুড়ির ঘরে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় চিন্তা ঋষির শ্বাসনালী কেটে দেয় এবং বুকে ও পেটের ডান দিকে কোপ দেয়। শাশুড়ির মৃত্যু নিশ্চিতের পর মুকুল বাড়ির সেফটি ট্যাংকে লাশ ও রক্ত মাখা কাঁথা ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। একইসাথে পূজার ঘরের মেঝে লেপে দেয়। এরপর ভোর ৪টার দিকে মুকুল জলঢাকায় নিজ বাসায় ফিরে যায়।

এই ঘটনায় মঙ্গলবার বৃদ্ধার মেয়ে রেনু ঋষি দেবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করে। গত ছয় দিন যাবত চিন্তা ঋষি নিখোঁজ ছিলো। বৃদ্ধার নাতি জীবন এবং সৎ ছেলে নেপাল ঋষি দুপুরে বাসায় এসে দেখতে পান সেফটি ট্যাংকের আশপাশের মাটি আলগা। এরপর তারা বিষয়টি পুলিশকে জানালে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023