পুদিনা পাতার ভেষজ গুণ  সম্পর্কে আজকের আয়োজন 


পুদিনা পাতার উপকারিতাঃ


পুদিনার পাতায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি আর বি – কমপ্লেক্স। যা ত্বকের যত্নে আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত জরুরি উপাদান। এছাড়াও এই পাতায় মেলে লৌহ, পটাসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ। এই খনিজ উপাদানগুলো রক্তে ‘হিমোগ্লোবিন’য়ের মাত্রা বাড়ায় এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অটুট রাখে।


হজমে সহায়ক: ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’, ‘মেন্থল’ আর ‘ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট’য়ের প্রাচুর্য থাকে পুদিনা পাতায়। এই উপাদানগুলো হজমের জন্য প্রয়োজনীয় ‘এনজাইম’ তৈরি করে। পুদিনা পাতার ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’য়ের আছে শক্তিশালী জীবাণুনাশক ক্ষমতা। পাশাপাশি তা পাকস্থলিকে শীতল করে, অম্লীয় খাবার সামাল দিতে সাহায্য করে। ফলে পেটের গোলমাল কমে।


হাঁপানি কমায়: নিয়মিত পুদিনা পাতা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে বুকে কফ জমতে পারেনা। এখানে মুখ্য ভূমিকা থাকে ‘মেন্থল’য়ের, যা ফুসফুসে আটকে যাওয়া ‘মিউকাস’ ছাড়ায়। এছাড়াও নাকের ফুলে ওঠা ‘মেমব্রেন’কে সারিয়ে তোলে ‘মেন্থল’। ফলে শ্বাস নেওয়ার কষ্ট দূর হয়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়, নতুবা শ্বাসনালীতে অস্বস্তি দেখা দিতে পারে।


মাথা ব্যথা সারায়: পুদিনা পাতায় থাকা ‘মেন্থল’ পেশিকে শিথিল করার মাধ্যমে ব্যথা কমায়। এই পাতার নির্যাস থেকে তৈরি অসংখ্য মলম মাথা ব্যথা সারাতে ব্যবহার হয়। মলম ব্যবহার করতে না চাইতে সরাসরি পুদিনা পাতার রস কপালে মাখলেও মাথা ব্যথা ক‌মে।


মানসিক স্বস্তি: সুগন্ধিভিত্তিক চিকিৎসায় পুদিনা পাতা প্রথম সারির উপাদান। এর কড়া সুগন্ধ মানসিক চাপ, হতাশা দূর করে শরীরকে চনমনে করে তোলে। রক্তে ‘কর্টিসল’ হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক‌রে জৈবিক মানসিক চাপ সামাল দেওয়ার ক্ষমতাকে সক্রিয় করার মাধ্যমে এই কাজটি হয়। আবার পুদিনা পাতার ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’য়ে ঘ্রাণ তাৎক্ষণিক রক্তে ‘সেরোটনিন’ হরমোন নিঃসরণ করে। এই হরমোনও মানসিক অস্থিরতা ও হতাশা কমায়।


ত্বকের যত্নে: প্রদাহ ও ব্যাকটেরিয়ানাশক গুণ থাকার কারণে ত্বকের ব্রণের সমস্যা সারাতে পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। এই পাতার উচ্চমাত্রায় ‘স্যালিসাইলিক অ্যাসিড’ থাকে যা ব্রণ দূর করে। ত্বক পরিষ্কার করতেও এটি বেশ কার্যকর। মৃত কোষ দূর করতে এবং কড়া পড়া অংশ স্বাভাবিক করতেও পুদিনা পাতা ভা‌লো কাজ দেয়।


দাঁত ও মাঢ়ির সুরক্ষায়: মুখের দুর্গন্ধ দূর করার কাজে পুদিনা পাতা আদর্শ উপাদান। এর নির্যাস সমৃদ্ধ ‘মাউথওয়াশ’ মুখের ভেতরের জীবাণু ধ্বংস করে, সুস্থ রাখে দাঁত ও মাঢ়ি।


স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: মস্তিষ্কের জ্ঞানীয় ক্ষমতা বাড়াতে পুদিনা পাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা। নিয়মিত খেলে বাড়ে উপস্থিত বুদ্ধি, সতর্কতা, স্মৃতিশক্তি।


ওজন সামাল দিতে: পুদিনা পাতা থেকে তৈরি ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ হজম ক্ষমতাকে এবং বর্জ্য অপসারণ প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সহায়তা করে। পক্ষান্তরে তা খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণে সহায়ক হয়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।


মৌসুমি রোগের চিকিৎসায়: ঠাণ্ডা, সর্দিজ্বর, নাক বন্ধ ইত্যাদি সমস্যার সমাধানে পুদিনা পাতা অত্যন্ত উপকারী এবং কার্যকর। প্রায় সকল ‘ভেপর রাব’, ‘ইনহেলার’য়েই থাকে এর নির্যাস। পাশাপাশি কাশি কমাতে এবং গলার অস্বস্তি সারাতেও পুদিনা পাতা কার্যকর।


উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কলা ও পুদিনা


দুই টেবিল-চামচ চটকানো কলা ও ১০,১২টি পুদিনা পাতা।


পদ্ধতি: কলা ও পুদিনা পাতা পিষে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। প্যাকটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। ভালো ফলাফলের জন্য সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন।


উপকারিতা: কলা ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে পটাশিয়াম, ল্যাক্টিক, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং জিংক। এই তিন খনিজের সমন্বয়ে ত্বক আর্দ্র ও মসৃণ হয়। ক্ষয়, ব্রণ, ব্রণের দাগ দূর হয়, কোষকলা বৃদ্ধি পায়, অতি বেগুনি রশ্মির বিরুদ্ধে কাজ করে এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। পুদিনার সমন্বয়ে কলা ত্বক সুন্দর রাখে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ে।


ব্রণ দূর করতে লেবু ও পুদিনা


উপকরণ: ১০,১২টি পুদিনা পাতা। এক টেবিল চামচ লেবুর রস।


পদ্ধতি: পুদিনা-পাতা ছেঁচে লেবুর রস মেশান। ব্রণ, ব্রণ আক্রান্ত স্থান, ব্রণের দাগের ওপর লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে একবার এটা ব্যবহার করুন। 


উপকারিতা: পুদিনার স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ও লেবুর রসের ব্লিচিং উপাদান ব্রণের দাগ দূর করে। লেবুতে ভিটামিন সি থাকায় তা ত্বক সুন্দর রাখতে সাহায্য করে।


এক্সফলিয়েটের জন্য শসা ও পুদিনা


উপকরণ: এক টেবিল চামচ ওটস। ১০,১২টি পুদিনা পাতা। এক টেবিল-চামচ মধু। দুই টেবিল-চামচ দুধ। আধা ইঞ্চি শসার টুকরা।


পদ্ধতি: পুদিনা পাতার সঙ্গে শসা-কুচি ছেঁচে নিন। সব উপাদান একসঙ্গে মেশান। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে সাত মিনিট অপেক্ষা করে গোলাকারভাবে হালকা চাপে স্ক্রাব বা ঘষে নিন। এতে মৃত কোষ দূর হবে। দুতিন মিনিট স্ক্রাব করার পরে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুতিনবার এই প্যাক ব্যবহার করুন। 


উপকারিতা: শুষ্ক ও সংবেদনশীল ত্বকের জন্য এই স্ক্রাব সবচেয়ে ভালো। এই স্ক্রাব মুখে লাগিয়ে হালকাভাবে মালিশ করুন। এতে লোমকূপ পরিষ্কার হবে ও মৃৎ কোষ দূর হবে। ফলে ত্বক হবে মসৃণ, উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হবে।


তৈলাক্ত ত্বকের যত্নে মুলতানি মাটি ও পুদিনা


উপকরণ: এক টেবিল-চামচ মুলতানি মাটি। ১০,১২টি পুদিনা-পাতা। আধা টেবিল-চামচ মধু। আধা টেবিল-চামচ টক দই।


পদ্ধতি: পুদিনা-পাতা বেটে তাতে মুলতানি মাটি, মধু ও দই মেশান। ঘন মিশ্রণ হওয়া পর্যন্ত মেশাতে থাকুন। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার এটা ব্যবহার করুন।


উপকারিতা: তেল নিয়ন্ত্রণের জন্য মুলতানি মাটি সবচেয়ে ভালো। পুদিনা পাতা মেশানোর ফলে এতে খনিজ উপাদান যোগ হয় এবং ত্বকের বাড়তি তেল দূর হয়ে ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়। মধু ও দই একসঙ্গে চিচিটেভাব ছাড়াই ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।


শুষ্ক ত্বকের জন্য পুদিনা ও টক দই


উপকরণ: দুই টেবিল-চামচ টক দই। এক টেবিল-চামচ মূলতানি মাটি। ১০,১২টি পুদিনা পাতা।


পদ্ধতি: পুদিনা পাতা বেটে তাতে দই ও মুলতানি মাটি যোগ করুন। ঘন পেস্ট হওয়া পর্যন্ত মেশান। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহার করুন।


উপকারিতা: দই ত্বক আর্দ্র রাখে এবং খনিজ উপাদান সমৃদ্ধ মুলতানি মাটি ত্বকের গঠন সুন্দর রাখে। ত্বক মসৃণ, আর্দ্র ও কোমল রাখতে এই ফেইস প্যাক কার্যকর।

লেখকঃ

প্রফেসর ড.  মোহাম্মদ আবু নাছের 

কনসালট্যান্ট অব হোমিওপ্যাথি 

ইউনাইটেড হোমিও হল 

সেনবাগ, নোয়াখালী 

মোবাইল নম্বরঃ ০১৭১১-০১১ ৯৩২

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023