সাতক্ষীরার চারটি আসনে চার নারী প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি এখন সাধারণ ভোটারদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক নারী প্রার্থী সাতক্ষীরার সংসদীয় আসনগুলোতে সরাসরি প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে নেমেছে।

প্রার্থীরা হলেন-বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সংগ্রামে সাতক্ষীরার নারীদের সংগঠিত করার কাজে জেলাব্যাপি দাপিয়ে বেড়ানো নারী নেত্রী লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ঠ সংগীত শিল্পী শামীমা পারভীন রত্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক তুখোড় নেত্রী শেখ মাসুদা খানম মেধা এবং কালিগঞ্জের কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোছাঃ সাফিয়া পারভীন।

লায়লা পারভীন সেঁজুতি: সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তালা উপজেলা কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড সাতক্ষীরা জেলা শাখার সদস্য সচিব, বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সাতক্ষীরা জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক, সম্প্রীতি বাংলাদেশ সাতক্ষীরা জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক, স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি দৈনিক পত্রদূত-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক। শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগের একজন সাধারণ সদস্য এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তালার নগরঘাটা ইউনিয়ন শাখার মহিলা সম্পাদিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

লায়লা পারভীন সেঁজুতি ১৯৯৬ সাল থেকে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়েকে নিয়োজিত করেন এবং সেই সময় থেকে তালার বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রীসহ বি.এড সম্পন্ন করেছেন।

১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজয় লাভের মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সরকার গঠনের পূর্বেই ১৯ জুন লায়লা পারভীন সেঁজুতির পিতা স. ম. আলাউদ্দিনকে তার প্রতিষ্ঠিত দৈনিক পত্রদূত অফিসে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া স. ম. আলাউদ্দিনের ৫কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের পরিবারটির দায়িত্ব এসে পড়ে লায়লা পারভীন সেঁজুতির উপর। একই সাথে সাতক্ষীরা জেলায় ১৯৯৩ সালে বঙ্গবন্ধুর নামে তার পিতা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধু পেশাভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ এর প্রধান শিক্ষকের এবং দৈনিক পত্রদূত পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

পিতা স. ম. আলাউদ্দিন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সাতক্ষীরার তালা-কলারোয়া নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধু মনোনীত সর্বকনিষ্ঠ এমপিএ প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি ছিলেন ৮ ও ৯নং সেক্টরের অন্যতম সংগঠক। ২৯ মার্চ ১৯৭১ বিএসএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের জিওসি মেজর জেনারেল অরুন মুখার্জীর সাথে বাংলাদেশের পক্ষে বেনাপোল ও ভোমরা সীমান্ত দিয়ে যশোর ও খুলনায় যুদ্ধারতদের অস্ত্র ও অস্ত্রের রসদ সরবরাহের চুক্তি করেন স. ম. আলাউদ্দিন। বিহারের চাকুলিয়ায় ৬ সপ্তাহের ট্রেনিং গ্রহণের পর কমিশন্ড অফিসার হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং কিছুদিন ৯নং সেক্টরের দায়িত্ব পালনের পর ৮নং সেক্টরে ক্যাপ্টেন সাইফুল্লাহ নাম ধারণ করে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন এবং সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে কমপক্ষে চারবার সামান্যের জন্যে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পান। মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরা মহাকুমা মুক্তি বাহিনীর প্রধান এবং খুলনা জেলা মুজিব বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তার অনুপুস্থিতিতে ১৪ বছর সশ্রম কারাদন্ড, সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত, এমপিএ পদ বাতিল এবং ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ৪০হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে এলাকায় মাইক প্রচার করে।

ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধোর একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে বাড়িতে এসে স. ম. আলাউদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করাকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ এবং দল থেকে বহিস্কারের প্রস্তাব করলে তিনি আত্মঅভিমানে ভাবাবেগে আপ্লুত হয়ে এমপিএ পদ ও দল থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে জাসদ গঠিত হলে সেই দলে যোগদান করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জিয়ার সামরিক সরকার ১৬ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ১৯৭৯ সালের সংসদ নির্বাচনে জাসদ থেকে তিনি তালা-কলারোয়া নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী হন। কিন্তু মুসলিম লীগের ব্যাপক পুনুরুত্থান দেখে তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান এবং জাসদের রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৮১সালে পুনরায় আওয়ামী লীগে যোগদানের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন এবং এ সময় থেকে তৎকালীন সাতক্ষীরা মহাকুমার প্রতিটি গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত ও পুর্নগঠিত কাজ শুরু করলে ১৯৮৩ সালে সাতক্ষীরা শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে সভাপতি এবং ১৯৮৪ সালে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন।

যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা লায়লা পারভীন সেঁজুতি পিতার নৃশংস হত্যাকান্ডের পর ভাই বোনদের লেখাপড়াসহ তারা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তিনি রাজপথের সকল কর্মসূচিসহ দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি সাতক্ষীরার নারীদের মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রভাব বলয় থেকে বের করে আনার লক্ষ্যে জেলা আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীবৃন্দকে সাথে নিয়ে উঠান বৈঠক, নারী সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি সংগঠিত করে আসছেন।

শামীমা পারভীন রত্না: শামীমা পারভীন রত্না সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তি অধ্যুষিত সাতক্ষীরায় সাংস্কৃতিক জাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

সাতক্ষীরা পিএন বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল এর সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি স্কুল জীবন থেকেই সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ও অভিনয়ে অংশগ্রহণ এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় কৃতিত্বপূর্ণ ভূ

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024