স্বপ্নে পাওয়া ভিসায় গিয়েছিলাম সন্দেশে। সন্দেশের রাজধানী ছানায় নেমেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। এত সুন্দর পরিবেশ আমি অন্য কোন দেশে দেখিনি। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা ঘাট, সুশৃঙ্খল গাড়ি চলাচল। ফুটপাতে কোন হকার-ফেরিওয়ালা নেই। বাড়ি ঘর পরিকল্পিত। পরে শুনেছি এই দেশের মানুষ নাকি বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি করে। আমাদের দেশেতো নির্মান কাজ শেষই হয় না। আবার নির্মান কাজ চলার সময় ফুটপাত নির্মান সামগ্রী রেখে নিজেদের দখলে রাখে। সন্দেশের মানুষের মন খুব নরম, যেন মাখন!

সন্দেশে নির্বাচন মৌসুম চলছিলো। স্বপ্নে ঘুরতে গেছি তাও আবার হাটবার, এমন একটা পরিস্থিতি আর কী। সেখানে বুদ্ধিজীবী এক কমিউনিটির নির্বাচন চলছে। প্রার্থীরা ভালো ভালো কথা বলছে। কোমলমতি শিশুদের মত যে ভোটারদের মন। সেই কোমলমতি ভোটাররা প্রার্থীর কথায় সহজেই যুক্ত হয়ে পিছনে পিছনে ঘুরছে। মাখনের মত নরম মনের সন্দেশবাসীরা সহজেই প্রার্থীদের কথায় পটে যাচ্ছে। দেখে আমার খুব ভালো লাগলো।

আমিতো আগেই বলেছি, সন্দেশে আমি যা দেখি তাতেই পুলকিত হই। আর মাঝে মাঝে আমার পপি গাইড আমার পুলকিত হওয়া দেখে ডাবল পুলকিত হয়। আসলে আমার সাদা মনেতো কোন কাদা নেই! তাই এই করোনা কালে সবকিছুই পজেটিভ মনে হয়। হোক সেটা হাচি, কিংবা কাশি!

আমার পপি গাইড আমাকে পুলকিত করে বললো, ভাইরে, তুমি যে দেশ থেকে এসেছো সেখানকার নির্বাচনী পদ্ধতি, মানুষের মন মানসিকতা কেমন আমি জানি না। তবে তুমি যতটা সহজে সব কিছু মেনে নিচ্ছ আর যতটা সহজ ভাবছো তা কিন্তু নয়। এর ভিতরও কৌশল আছে, কুট কৌশলও আছে। একটা গল্প বললে বিষয়টা তুমি পরিস্কার বুঝতে পারবে।

জঙ্গলে এক চিতা বাঘ গাছের নিচে বসে সিগারেট খাচ্ছিল এক ইঁদুর এসে বললো, ভাই নেশা ছেড়ে দাওনেশার জীবন কোন জীবন নয়। আমার সাথে এসো, দেখো জঙ্গল কত সুন্দর

চিতা বাঘ চিন্তা করলো, কথাটাতো ভালই। ইঁদুরের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে থাকলকিছুদূর যাওয়ার পর এক হাতির সাথে দেখা। হাতি কলা বাগানে বসে কলা গাছ না খেয়ে বসে বসে মোটা সিরিঞ্জ দিয়ে ড্রাগ নিচ্ছিল ইঁদুর হাতিকেও একই কথা বলল এরপর হাতিও ওদের সাথে চলতে শুরু করল জঙ্গলের পথে

কিছুদূর এগিয়ে তারা দেখল বাংলার বাঘ হরিণের গা ঘেষে বসে হরিণ না খেয়ে হুইস্কি খাচ্ছে ইঁদুর তাকেও একই কথা বলার সাথে সাথে বাঘ হুইস্কির গ্লাসটা মাটিতে রেখে ইঁদুরকে কষে এক থাপ্পড় দিলসাথে সাথে ইঁদুরের দু’পাটির দুটি দাত উধাও হয়ে গেলো। এক পাশে পড়ে কোকাতে লাগলো বেচারা।

বাঘের এহেন কান্ড দেখে হাতি ও চিতা বাঘ অবাক! হাতি ও চিতা বাঘ মনে খুব কষ্ট পেলো বাঘের আচরণ দেখে। বাঘকে বললো, তুমি বনের একজন সগ্রামী পশু। তোমার শক্তি, সৌন্দর্য সবই ইর্ষণীয়। তাই বলে যাকে তাকে যখন তখন মেরে বসবে তা কী ঠিক? বেচারা ইঁদুর কত ভালো কথা বললো। আমাদের আলোর পথে আনার কথা বললো। আর তুমি তাকে মারলে? বাঘ এবার বললো, তাহলে তোমরা মনযোগ দিয়ে শোন। এই বেটা কালকেও তিন কল্কি গাঁজা খাওয়ার পর দশটা ইয়াবা টেনে আমাকে এমন ভালো ভালো কথা বলে জঙ্গলে তিন ঘণ্টা ঘুরিয়েছিল

আমি গল্পটা শুনেতো অবাক। আগেই বলেছিলাম, শেখার কোন শেষ নাই। এই গল্পে শিক্ষার অনেক কিছু আছে। যে যতই ভালো কথা বলুক, ভালো ভালো প্রতিশ্রুতি আউড়াক। তার মনে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা দেখে বুঝার উপায় নাই। তাই বুঝতে হবে, ভাবতে হবে। প্রতিশ্রুতি শুনে বা ভালো কথা শুনে হৃদয় গলানো ঠিক হবে না। যদিও আমাদের দেশে আমরা সেটা পারি না। দুষ্টের মিষ্টি কথায় আমাদের মন গলে পানি হয়ে যায়। 

আসাদুজ্জামান জুয়েল, আইনজীবী ও কলামিষ্ট।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023