আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর ব্যাপারে নমনীয় থাকবে আওয়ামী লীগ। এমন ঘোষণার পরে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে দলীয় মনোনায়ন পাওয়ার পরেও দ্বন্দ্বে আর বিভিক্তি জড়িয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনায়ন জমা দিয়ে মাঠ পর্যায়ে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিন প্রার্থী। এরমধ্যে বেশ শক্ত অবস্তানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। নেতাদের এমন আচারণের কারণে কর্মীদের মনে নৌকার বিজয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে নৌকার ধ্বস নামতে পারে বলে মাঠ পর্যায়ে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বর কলারোয়া উপজেলার সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মদ স্বপনকে জননেত্রী শেখ হাসিনা মনোনায়ন দেন। নৌকার কাঙ্খিত টিকিট পেয়েও টেনশনে আর স্বস্তি নেই তিনি। ইতিমধ্যে দলীয় তিন হেভিওয়েট নেতা গত ৩০ ডিসেম্বর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনায়ন জমা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন । স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হল, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবর রহমান,তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম, জেলা আলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব। এদিকে ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন দলীয় মনোনায়ন পাওয়ার পরে দ্বন্দ্বে আর দ্বিধাবিভক্ততে হয়ে পড়েছে তালা ও কলারোয়া উপজেলার আওয়ামী লীগ। ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের বিরুদ্বে নানা অনিময়ের অভিযোগ তুলে তার মনোনায়ন বাতিলের আবেদন জানিয়েছে তারা। ইতিপূর্বে কলারোয়ার উপজেলা চেয়ারম্যানের দলীয় মনোনায়ন পেয়ে তিনি পরাজয় বরণ করেছে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে এমনটা তাদের ভাস্য।
এদিকে গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন বলেন, নৌকার সামনে কোন প্রার্থী টিকতে পারবে না।
একটি কুচক্রী মহল তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের হাতের চিঠি ফেসবুকে পোষ্ট করছে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

কলারোয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুল ইসলাম লাল্টু জানান, স্বপনের অতীত কর্মকান্ড সম্পর্কে কলারোয়ার মানুষ থেকে শুরু করে প্রসাশনের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সবই জানে। তার অনিয়ম দুনীতির নিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ পর্যায়ের পত্রিকাগুলোতে একাধিকবার সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাকে নৌকার দেওয়ার কারণে সাতক্ষীরা -১পরাজয় হবে নিশ্চিত বলে তিনি দাবী করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষায়ক সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সরদার মুজিব বলেন, বিগত উপজেলার পরিষদের নির্বাচনে নৌকার মনোনায়ন পেয়ে পরাজিত হন। এছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় তিনি সাক্ষী হয়েও বিএনপি নেতা ও তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবের নেতৃত্বে তিনি হাওয়া ভবনে গিয়ে স্বাক্ষী এভিটএভিট করে আসেন। তিনি জামায়ত বিএনপির প্রশ্রয়দাতা হিসাবে এলাকায় বেশ আলোচিত।
তিনি আরো বলেন, ২০১৩সালে কলারোয়ার উপজেলায় ৫জন আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যা করে জামায়ত-বিএনপির সন্ত্রাসীরা। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এই হত্যাকান্ডের কোন বিচার হয়নি। বিচার কিভাবে হবে বর্তমান সংসদ সদস্যের সাথে স্বপন হাত মিলিয়ে মামলার আসামীদের প্রশ্রয় দিয়ে তিনি তাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ১০ম জাতীয় সংসদ সদস্য নৌকার মনোনীত প্রার্থী বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থী  শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান শেখ নুরুল ইসলাম বলেন, স্বপন কোন জনপ্রিয় লোক না। কলারোয়া মানুষ তার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানে বলে তার সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় নেই। বিগত দিনে সে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে ৭৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২টা কেন্দ্রেই ৩৮ হাজার ৯০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে । তাকে মনোনায়ন দেওয়ার কারণে নেতারকর্মীদের মনে হতাশা বিরাজ করছে। নেত্রী আমাদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার মত ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে আমরা প্রার্থী হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যান্ত আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা ।

এদিকে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রকৌশলী শেখ মুজিবর রহমান বলেন, বিগত দিনে সংসদ সদস্য থাকাকালীন এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছি। এবার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। স্বপন মাঠে এসে তার জনপ্রিয়তা যাচাই করে দেখুক সে জয়ী হতে পারে কিনা।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024