মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:

সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া আভরণের যে পারমিট দেওয়া হয় উক্ত পারমিটে নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে সীল মারা থাকে। অথচ সব কিছু জানার পরেও অসাধু বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উৎকোচের বিনিময়ে নিষিদ্ধ এলাকায় ছেলেদের প্রবেশ করার সুযোগ দিয়ে থাকেন। 


সুন্দরবন খুলনার পশ্চিম জোন সাতক্ষীরা রেঞ্জের নোটাবেকী উপজেলার বন টহল ফাড়ি অভয়ারণ্য ঘোষিত এলাকা। উক্ত এলাকায় মাছ কাঁকড়া আহরণতো দুরের কথা নৌকা প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ঐ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এলাকায় উৎকোচের বিনিময়ে অবাধে চলছে মাছ কাঁকড়া আহরণ ও মায়াবী হরিণ নিধন এবং মূল্যবান কাট পাচার। বিভিন্ন সময়ে হরিণের মাংস উদ্ধার করা হলেও অদৃশ্য কারণে হরিণ শিকারীদের খুঁজে পায়না কতৃপক্ষ। 


তবে কারা এই হরিণ শিকার করে যাচ্ছে সেই বিষয়ে স্থানীয়রা সহজেই মুখ খুলছে না। তবে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করলে হরিণ শিকারীদের খুঁজে বের করা খুব সহজ হবে। যারা হরিণ শিকার করে যাচ্ছে তারাই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আস্থা ভাজন বলে গুঞ্জন রয়েছে।


এই ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পরে সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।


উল্লেখ করা হয়েছে, এসবের পেছনে কাজ করে একটি দালাল চক্র। ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যে মাছ কাঁকড়া আভরণের সুযোগ করে দেয়। চুক্তির মাধ্যমে জেলেদের কাছে অঘোষিত ইজারা দেয় বনের নিষিদ্ধ ও অভয়ারণ্য নদী-খাল। বন বিভাগের কর্মী ছাড়াও ঐ চক্রে রয়েছে দাদন দেওয়া মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় দালাল চক্র। সম্প্রতি নোটাবেকী অভয়ারণ্য বন টহল ফাড়ি থেকে আটক হয় কয়রা থানার ৬ জন জেলে সহ ৪ খানা ডিঙ্গি নৌকা। বাকি ৬ জন জেলে সুন্দরবনের পালিয়ে যায় বলে খবর পাওয়া গেছে।


পালিয়ে আসা কয়রা উপজেলার কালিকাপুর এলাকার সেলিম হোসেনের একটি মন্তব্য গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি বলেছেন, আমরা ৪ খানা নৌকায় মোট ১২ জন জেলে দালাল শহিদুলের মাধ্যমে নোটাবেকী বন টহল ফাঁড়ির ওসি সাহাদাত এর সাথে ৬ দিনের জন্য মোট ৮০ হাজার টাকা চুক্তিতে সাহাদাত এর হাতে নগদ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি। 


তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের যে স্বাভাবিকের তুলনায় বড় বড় বেশি মাছ পাওয়ায় অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের ৪ খানা নৌকাসহ ৬ জনকে আটক করে। এ সময় আমরা ৬ জন সুন্দরবনের পালিয়ে যাই। এরপর অন্য জেলের নৌকায় লোকালয়ে আসি।


তার বক্তব্যে ঘুষ দিয়ে মাছ ধরার এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে নোটাবেকী বন টহল ফাঁড়ির ওসি সাহাদাত সাহেব উক্ত অভিযোগ অস্বীকার করে গণমাধ্যমকে বলেন, ৬ জন জেলে ও ৪ খানা নৌকা আটক করার সময় ৬ জন জেলে সুন্দরবনে পালিয়ে যায়। পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ মহসিন হোসেন সুন্দরবনের অভয়ারণ্য প্রবেশ করে ৪০ কেজি কাঁকড়াসহ ৪ জেলেকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দেন। উহাতে প্রমাণ করে যে অসাধু বন কর্মকর্তারা উৎকোচের বিনিময়ে অভয়ারণ্য জেলেদের প্রবেশ করতে দেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কতিপয় জেলেরা জানান,শতাধিক নৌকা নোটাবেকি অভয়ারণ্য এলাকায় প্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অতি গোপনে বন বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা কর্তৃক নোটাবেকী অভয়ারণ্যে অভিযান করলে তার সত্যতা মিলবে।


এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, সাধারণ জেলে হোক বা প্রভাবশালী দালাল হোক বনের আইন সবার জন্য সমান। অভয়ারণ্যে প্রবেশ বা বনে অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, কোনো বনকর্মীর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ থাকলে আর সেটা প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024