|
Date: 2023-12-13 04:35:06 |
গ্রাম বাংলার অপরূপ খুব কাছে দেখা। গ্রামের মানুষের নিত্য সমস্যা সম্ভাবনা প্রতিনিয়ত বিবেককে তাড়া করে। বন, বনানী, নদী-নালা, খাল-বিল সুবিধা বঞ্চিত মানুষের নানা চালচিত্র তাড়িত করে। বনের প্রকৃতি পরিবেশের বিরূপ প্রভাবে ভাবিয়ে তোলে। লাল মাটির মধুপুর গড়ের ঘাটাইল, মধুপুর, ধনবাড়ি, ভুয়াপুর, গোপালপুরের গারো কোচ ও চরের অবহেলিত মানুষের সুখ দুঃখের কথা তোলে ধরতে নিরন্তর যার প্রচেষ্টা। রাত দিন পায়ে হেঁটে বাই সাইকেলে ঘুরে বেড়াতেন গ্রাম থেকে গ্রামে। বন থেকে চরাঞ্চলে ছুটে চলা । সময়ে অসময়ে কুড়িয়ে আনা তথ্য গুলো রাতভর সজ্জিত করে ছাপাতেন তার কর্মরত পত্রিকায়। তিনি হলেন ইত্তেফাকের টাঙ্গাইলের গোপালপুরের সংবাদদাতা জয়নাল আবেদীন।
মাথা ভর্তি সাদা সাদা চুলগুলো মেহদী পাতার রঙে রাঙানো। এলোমেলো লম্বা রঙিন চুলের ফোয়ারা বাতাসের প্রতিকুলে উড়ে। পোষাকে কাজে কর্মে যেন আপাদমস্তক এক সংবাদকর্মী। যাকে সবাই এক নামে চিনেন। তিনি একজন প্রবীন গ্রামীণ সাংবাদিক। উত্তর টাঙ্গাইলে তিনি এক অনন্য সংবাদকর্মী।
তিনি ছাত্র জীবনে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের দৈনিক আজাদ পত্রিকা দিয়ে তার সাংবাদিকতা শুরু। ছাত্র জীবন শেষে তিনি ১৯৮২ সালে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা সংবাদদাতা ইত্তেফাকে লেখা লেখির মাধ্যম গ্রামীণ সাংবাদিকতা শুরু করেন। ইত্তেফাকে তিনি তোলে ধরতে শুরু করেন এ অঞ্চলে মানুষের সুখ দুঃখ অভাব অভিযোগ নানা সমস্যা সম্ভাবনার কথা। ইতিহাসখ্যাত মধুপুর শালবনের নানা বিষয় তোলে ধরেন তার কলমের লিখুনিতে। বন ধ্বংসের নানা তথ্য সমৃদ্ধ লেখা তা পত্রিকায় ফলাও করে স্থান করে নেয়। এভাবে বছরের পর বছর বন, বনবাসী মানুষদের বিভিন্ন বিষয়ে লিখে যান। আশি- নব্বইর দশকে মধুপুর শালবন ধ্বংস যখন চরম পর্যায়ে গিলে ছিল, সে সময় তিনি ইত্তেফাকে সিরিজ প্রতিবেদন করেন। তার প্রতিবেদনের কারণে তৎকালিন বনমন্ত্রী মধুপুরে আসেন। সরজমিন বন পরিদর্শন করে গিয়ে বন আইন পরিবর্তন করেন বলে জানা যায়। তিনি চার দশকে গড়ে তোলেছেন তার সাংবাদিকতার বিশাল ভান্ডার। গড়ে তোলেছেন উত্তর টাঙ্গাইলে কয়েকটি প্রেসক্লাব। করেছেন গ্রামীণ সাংবাদিকদের সংগঠন উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম। গ্রামীণ সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব তাকে "ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব পদক "প্রদান করেছে।
এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের সম্মাননা পেয়ে ছিলেন তিনি।
সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ধারক ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব এবারো কৃতি ব্যক্তিদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসক্লাব পদক ও সম্মাননা প্রদান করেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ পদক ও সম্মাননা দেয়া হয়। সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় ১৩ জনকে এ পদক দেয়া হয়। সাংবাদিকতায় ৮ জন, সাহিত্যে ৪ জন এবং কৃষি শিক্ষায় ১জন এ পদক পান। সাহিত্যে দেশের অন্যতম সেরা লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এ পদক পান। আর সাংবাদিকতায় যারা পদক পান তাদের অন্যতম হলেন দৈনিক ইত্তেফাকের আঞ্চলিক সংবাদদাতা( টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মধুপর ও ধনবাড়ী উপজেলা) জয়নাল আবেদীন। এ অবসর প্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক দৈনিক ইত্তেকাজে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে চারদশক ধরে। তিনি উত্তর টাঙ্গাইল সাংবাদিক ফোরাম এবং গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি। গোপালপুর বার্তা ২৪ ডট কমের এডিটর। সাংবাদিক হিসাবে আরো যারা পদক পান তারা হলেন ময়নসিংহ জেলার অধ্যাপক আঃ রাজ্জাক, মোশারফ হোসেন, এ এইচএম মোতালেব, এমএস দোহা,আনোয়ারুল হাসান রুমী এবং মরনোত্তর বাদল আচার্য ও মেজবাহ উদ্দিন হেলাল। সাহিত্যে আবদুল্লাহ জাহিদ, আউয়াল চৌধুরী ও মাহবুব হাসান।কৃষিশক্ষা ও গবেষণায় ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং ময়মনসিংহের জেলাপ্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক অমিত রায়, পদক উপ-কমিটির আহ্বায়ক মীর গোলাম মোস্তফা।
© Deshchitro 2024