জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় প্রশাসনের উদ্যোগে ঝাঁকঝমকভাবে বিজয় দিবস পালনের আয়োজন করা হলেও অবহেলিত ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি। দিবসটি উপলক্ষে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কিংবা আলোকসজ্জা করাসহ শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠায় নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ৩ দশক আগে পৌর শহরের নূর মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সরজমিনে দেখা গেছে, শনিবার মহান বিজয় দিবসের সব অনুষ্ঠান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠে হলেও শহীদ মিনারটি ছিল অবহেলিত। করা হয়নি পরিষ্কার ও আলোকসজ্জা। মাঠে যখন উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান চলছিল, তখন তার পাশেই শহীদ মিনারে জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করে উৎসুক জনতা। শহীদ মিনার মাঠের পাশেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালেও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়নি। শহীদ মিনার আলোকসজ্জা না করা ও জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া পৌর শহরের বাসিন্দা সুলতান মাহমুদ, পারভীন বেগম, বেলাল উদ্দিনসহ অনেকেই বলেন, 'কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান উপভোগ করেছে শতাধিক মানুষ। কিন্তু শহীদ মিনার সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।

বকশীগঞ্জ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি  মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অম্লান স্মৃতির ধারক ও বাহক এই শহীদ মিনার।
শহীদ মিনারের সঙ্গে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, বাঙালি জাতির ত্যাগ ও তিতিক্ষার ইতিহাস জড়িত।  বিজয় দিবসে শহীদ মিনারের বেমানান দৃশ্য
আমরর ব্যথিত হয়েছি।’

সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উদ্দিন বলেন, 'কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালেও ফুল দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন সেখানেও ফুল দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি।'

উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুমা ইয়াসমিন স্মৃতি বলেন, 'জাতীয় সব দিবসেই
উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি আলোকসজ্জা করা হয়। সব শ্রেণিপেশার মানুষ ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। কিন্তু এবার বিজয় দিবসের মতো তাৎপর্যপূর্ণ দিনেও অবহেলিত ছিল শহীদ মিনারটি। ফলে শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি অনেক মানুষ।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) অহনা জিন্নাত বলেন, 'শহীদ মিনারে জুতা পায়ে উঠে অনুষ্ঠান উপভোগ করার বিষয়টি আমার অজানা। কেউ যদি জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে থাকে, সেটা  নিশ্চয় বেমানান।'

উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে বিজয় মুক্তমঞ্চে ফুল দেওয়া হয়েছে। সেকারণেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের স্মরণে ফল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হয়নি। তবে প্রতি বছর যেহেতু শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া হয়, তাই এবারও ফুল দিলে ভালো হতো।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2024