|
Date: 2023-12-20 14:48:44 |
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সংখ্যালঘু যুবতী স্মৃতি রানি খুনের ১৪ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি আসামি। গত ৬ ডিসেম্বর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলিপুর ডাক্তার পাড়ার ভাড়া বাসায় দিনে-দুপুরে খুন হয় স্মৃতি। ওই দিন বেগমগঞ্জ থানায় এই ঘটনায় মামলা হয়। তবে নিহতের পরিবারের দাবি পুলিশ অজ্ঞাত কারনে হত্যা মামলা না নিয়ে মনগড়া এজাহারে স্বাক্ষর নিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা নেয়।
মামলার অগ্রগতি না হওয়ায় গত ১৯ ডিসেম্বর নিহতের ছোট ভাই রনি চন্দ্র কুরি(২৫) বাদি হয়ে বেগমগঞ্জ আমলী আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামের সমির চন্দ্র দাশ (৪৮)কে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া সমিরের স্ত্রী-মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে আসামি করা হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, নিহত স্মৃতি রানি কুরি(২৭) সোনাইমুড়ী বজরা এলাকার বৃদ্ধ হিমাংশু রঞ্জন কুরির (৬২) বড় মেয়ে। তিনি নোয়াখালী কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃদ্ধ বাবার সংসার ও লেখাপড়া চালাতে হিমশিম খাওয়া স্মৃতি রানি বজরা ইউনিয়নের ফেমাস ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সহকারী প্যাথলজিষ্ট পদে চাকরি নেয়। সেখানে চাকরির সুবাদে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার মালিক সমির চন্দ্র দাশের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে সম্পর্ক গাড় হতে থাকলে স্মৃতিকে পার্শবর্তী বেগমগঞ্জ উপজেলার আলিপুর নামক স্থানের ল্যাবএইড হাসপাতালের রিপোর্ট কাউন্টারে চাকরি নিয়ে দেয় সমির। তাকে থাকার জন্য ওই এলাকার ডাক্তার পাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে দেয়। ওই বাসায় নিয়মিত যাতায়াত সহ বাসার একটি চাবিও থাকতো সমিরের কাছে।
নিহতের বাবা হিমাংশু রঞ্জন কুরি জানান, সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামের গোপাল চন্দ্র দাশের ছেলে জনক সমির চন্দ্র দাশ। তার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতে থাকে সমির। তার মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসলে সেটাতেও বাঁধা দেয়। ঘটনার দিন বিকালে মেয়েকে দেখতে ভাড়া বাসায় গেলে স্মৃতির রুম তালাবদ্ধ দেখতে পান। তালা খুললে রুমের ফ্লোরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন স্মৃতিকে। পরে খবর দিলে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তবে পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা করায়।
নিহতের ছোট ভাই রনি চন্দ্র কুরি জানান, তার বোনের সাথে প্রতারণা করে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী করে সমির। পরিবারের কেউ বিষয়টি জানতো না। তার বোন তিন মাসের অন্ত:সত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়। ধামাচাপা দিতে তার বোনকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রনি।
নিহতের জ্যেঠাতো ভায়ের স্ত্রী মনি রানী কুরি অভিযোগ করে জানান, স্মৃতি তিন মাসের অন্ত:সত্তা হয়ে পড়ে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সমির ও তার পরিবার পরিকল্পিত ভাবে স্মৃতিকে হত্যা করে। নিহত স্মৃতির মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিলো। রক্তাক্ত একটি স্টিলের মগ নিহতের পরিবারের কাছে রয়েছে বলেও জানান মনি রানী।
বেগমগঞ্জ থানার এস আই শহিদুল ইসলাম ও আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের কপালে ও মাথার বাম পাশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এই ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত সমির পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সমিরের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মেয়ে প্রীতি রানী দাশ জানান, তার বাবা সমির জরুরি কাজে ঢাকায় গিয়েছেন। তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ রয়েছে।
© Deshchitro 2024