আত্মবিলাপ 

-মোঃ সাদিকুল ইসলাম 

বাইরে ঝুম ঝুম বৃষ্টি। দুষ্ট শিশু-কিশোরের দল ছোটাছুটি করছে বৃষ্টিতে ভিজে। কাদামাটি গায়ে একেকজন পিছলে যাচ্ছে আঙিনায়। আমি ছাতা নিয়ে বের হলাম নদীপাড়ে যাব বলে। শুনেছি দুধকুমার নদেও ভাঙ্গন তীব্র হয়ে বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে নদীপাড়ের মানুষ। ছাতা মাথায় পিচ্ছিল পথ দিয়ে হাঁটছি আমি। ছাতায় বৃষ্টির বারি খেয়ে ফোটা ফোটা পানি পড়ছে গায়ে। তারপরও আটসাঁঠ হয়ে হাঁটছি আমি। এক সময় নদীপাড়েই চলে এলাম। এতক্ষণে গায়ের অর্ধেকটা ভিজে জুবুথুবু হয়ে গেছি। হঠাৎ একজনের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো কানে। দেখলাম পাশেই মাথায় হাত রেখে ফুপিয়ে কাঁদছেন ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ। বললাম-কী হয়েছে আপনার? কাঁদছেন কেন চাচা? কিছুক্ষণ চুপ মেরে গেলেন তিনি। এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন কষ্টে বাবা কষ্টে। বুকের ভিতরে বড় কষ্ট। এমনিতেই করোনা কালীন সময়ে লকডাউন চলতেছে, কাজে যেতে পারতেছিনা, ইনকাম নেই, অন্যদিকে কয়দিন ধরে বৃষ্টি বাদলে নদীতে পানি বেড়েই চলছে। পানির স্রোতে ভেঙ্গে যাচ্ছে নদীর কিনারা। আর হাত দুয়েক ভাঙ্গলে ভেঙ্গে যাবে আমার শেষ সম্বল বসতভিটা। বলে হাত ইশারায় নদীর কীনারার পাশের ঘর দেখিয়ে দেন তিনি। আবার বলতে থাকেন, থাকার জায়গা নেই? দিন ইনকাম করে দিন খাই, আমাদের দেখার কেউ নেই ভাতিজা, সবাই আশ্বাস দেয় কিন্তু সেই আশ্বাস আমাদের চোখের জ্বলে ভেসে বেড়ায়, তাই কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না। কথাটি শেষ হতে না হতেই আবারও ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। এটা দেখে নিজের বুকের ভেতরটাতেও যেনো মোচর দিয়ে উঠলো এক অজানা কষ্টে। জল ছলছল চোখে ফেলফেল করে তাকিয়ে দেখলাম ওই চাচার চলে যাওয়াটা। হঠাৎ আচমকা পানিতে একটা দ্রুম করে শব্দ হলো। বুঝতে পারলাম ওই চাচার ঘরের পাশ থেকে আরও একটি মাটির চাপা পড়লো নদীতে। আর এমন সময় চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন সব নদীতে ভেসে গেলো খোদা সব নদীতে ভেসে গেলো। আমরা এখন থাকব কই, যাব কই। বলতে বলতে বিলাপ শুরু করলেন ওই বাড়ির চাচি।

প্রকাশক : কাজী জসিম উদ্দিন   |   সম্পাদক : ওয়াহিদুজ্জামান

© Deshchitro 2023